Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

কত ফারাক, বুঝিয়ে দিলেন বিরোধীরাই

দিল্লিতে রাহুল গাঁধী রাফাল নিয়ে কৌশল বৈঠক বাতিল করলেন। মধ্যপ্রদেশে কমল নাথ বাজপেয়ীর শ্রদ্ধায় দলে প্রস্তাব গ্রহণ করে দু’মিনিট নীরবতা পালন করলেন। ভোটের আগে প্রার্থীদের টিকিট দেওয়ার বৈঠকও বাতিল করলেন।

একত্রে: অটলবিহারী বাজপেয়ীর শেষকৃত্যে লালকৃষ্ণ আডবাণী, বেঙ্কাইয়া নায়ডু, মনমোহন সিংহ এবং রাহুল গাঁধী। শুক্রবার। ছবি: পিটিআই।

একত্রে: অটলবিহারী বাজপেয়ীর শেষকৃত্যে লালকৃষ্ণ আডবাণী, বেঙ্কাইয়া নায়ডু, মনমোহন সিংহ এবং রাহুল গাঁধী। শুক্রবার। ছবি: পিটিআই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৮ অগস্ট ২০১৮ ০৪:০২
Share: Save:

রাত পৌনে দু’টো। কৃষ্ণ মেনন মার্গের বাড়িতে কানিমোঝিকে জড়িয়ে হাউ হাউ করে কাঁদছেন অটলবিহারী বাজপেয়ীর পালিতা কন্যা নমিতা ভট্টাচার্য। পাশে দাঁড়িয়ে চোখ মুছছেন এম কে স্ট্যালিন। মাত্র দশ দিন আগে পিতৃবিয়োগ হয়েছে স্ট্যালিন-কানিমোঝির।

মুম্বই। রাস্তা জুড়ে ‘ভারতরত্ন’ অটলকে শ্রদ্ধা জানিয়ে পোস্টার। বিজেপি নয়, কংগ্রেসের পক্ষ থেকে।

দিল্লিতে রাহুল গাঁধী রাফাল নিয়ে কৌশল বৈঠক বাতিল করলেন। মধ্যপ্রদেশে কমল নাথ বাজপেয়ীর শ্রদ্ধায় দলে প্রস্তাব গ্রহণ করে দু’মিনিট নীরবতা পালন করলেন। ভোটের আগে প্রার্থীদের টিকিট দেওয়ার বৈঠকও বাতিল করলেন।

বিজেপির সদর দফতরে বাজপেয়ীকে শ্রদ্ধা জানাতে পা রাখলেন সীতারাম ইয়েচুরিরা। অমিত শাহের কাঁধে হাত রেখে বাজপেয়ীকে ফুলের তোড়া দিলেন মুলায়ম সিংহ যাদব। অখিলেশ যাদব পোস্ট করলেন নিজের বিয়ের ছবি, যেখানে বাজপেয়ী গিয়েছিলেন। বিজেপি দফতরে গেলেন অরবিন্দ কেজরীবাল।

ক’দিন আগে নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে অনাস্থা আনা চন্দ্রবাবু নায়ডু আজ অন্ত্যেষ্টিতে গেলেন না। তবে সকালে গেলেন বাজপেয়ীর বাড়িতে। এনডিএ-ত্যাগী আর এক শরিক মেহবুবা মুফতি অন্ত্যেষ্টিতে এসে প্রশংসা করলেন বাজপেয়ীর কাশ্মীর নীতির। আর যে শরিক নেতা উদ্ধব ঠাকরে উঠতে বসতে মোদীর সমালোচনা করেন, সচরাচর দিল্লিও আসেন না, আজ বিজেপির নতুন দফতরে এলেন, সপরিবার।

নরেন্দ্র মোদী যত বাজপেয়ীকে আঁকড়ে ধরে ঘুরে দাঁড়াতে চাইছেন, মোদী বিরোধীরা ততই অটলকে মেলে ধরছেন। আর সেই কৌশলেই খোঁচা দিয়ে বোঝাচ্ছেন, অটল আর মোদীতে কত ফারাক।

গত কাল রাতেই সনিয়া গাঁধী ঘুরে এসেছেন বাজপেয়ীর বাড়িতে। আজ সকালে যান রাহুল গাঁধী। ছিলেন অন্ত্যেষ্টিতেও। গুলাম নবি আজ়াদ বাজপেয়ীর বাড়িতে দাঁড়িয়েই বললেন, ‘‘বাজপেয়ীজি এমন এক প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, যাঁর উপরে সব বিরোধীর ভরসা ছিল। বিরোধীদের মনে কোনও ভয় ছিল না, যে তিনি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ক্ষমতার অপব্যবহার করবেন।’’ মমতাও কাল সেখানে দাঁড়িয়ে একই কথা শুনিয়েছেন।

বার্তা স্পষ্ট। বাজপেয়ীর প্রশংসার ছলে সকলে আসলে মোদীকেই বিঁধছেন। বাজপেয়ীকে বিশাল করে মেলে ধরে প্রতি পরতে বুঝিয়ে দিচ্ছেন, হাজার চেষ্টা করেও মোদী কখনও অটলের ধারেকাছে যেতে পারবেন না।

অসুস্থতার কারণে অরুণ জেটলি যেতে পারেননি অটলকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে। তাঁর স্ত্রী, ছেলেমেয়ে যান। অন্ত্যেষ্টির পরে ব্লগে জেটলি কবুল করেন, বাজপেয়ীর কোনও ব্যক্তিগত শত্রু ছিল না। কারণ, তিনি ব্যক্তির বদলে বিষয়ের উপরে বলতেন। তাই তাঁর কথা সকলে চুপ করে শুনতেন।

সর্দার পটেলকে ‘হিন্দুত্ববাদী’ বলে বিজেপি যখন নিজেদের দিকে টানতে মরিয়া, তখন ‘নেহরুবাদী’ অটলকে বিরোধীরা আপন করতে সক্রিয়। এই আবহেই অটলের অন্ত্যেষ্টিরও পরে সঙ্ঘপ্রধান মোহন ভাগবত স্বয়ংসেবক অটলকে স্মরণ করলেনা! যা নিয়ে কটাক্ষ করেছেন অনেকেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE