Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

শান্তি চেয়ে ঘরোয়া চাপে মোদী-শরিফ

সম্পর্কের টানাপড়েন কাটাতে আলোচনায় বসতে রাজি হতেই এখন বিরোধীদের চাপে ভারত ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী। নয়াদিল্লি শান্তি প্রক্রিয়ায় সায় দেওয়ায় কংগ্রেস সমালোচনায় সরব হওয়ার পরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ঘনিষ্ঠ শিবির আজ স্পষ্ট করে দিয়েছে— এই মুহূর্তে ওই প্রক্রিয়া থেকে সরে আসার প্রশ্ন নেই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১২ জুলাই ২০১৫ ০৩:১৫
Share: Save:

সম্পর্কের টানাপড়েন কাটাতে আলোচনায় বসতে রাজি হতেই এখন বিরোধীদের চাপে ভারত ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী।

নয়াদিল্লি শান্তি প্রক্রিয়ায় সায় দেওয়ায় কংগ্রেস সমালোচনায় সরব হওয়ার পরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ঘনিষ্ঠ শিবির আজ স্পষ্ট করে দিয়েছে— এই মুহূর্তে ওই প্রক্রিয়া থেকে সরে আসার প্রশ্ন নেই। তাদের দাবি, তা বলে সন্ত্রাস দমন প্রশ্নে ভারতের দাবি-দাওয়া পাকিস্তানের কাছে তুলে ধরার ক্ষেত্রে আদৌ

নরম অবস্থান নেবে না নয়াদিল্লি। অন্য দিকে ইসলামাবাদে বিরোধীদের সামলাতে পাক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের হয়ে মুখ খুলেছেন তাঁর জাতীয় নিরাপত্তা ও বিদেশনীতি সংক্রান্ত উপদেষ্টা সরতাজ আজিজ।

গত কাল থেকেই পাকিস্তানের বিরোধী দলগুলি অভিযোগ করছিল, যৌথ বিবৃতিতে মুম্বই সন্ত্রাসের কথা থাকলেও, কাশ্মীর বা বালুচিস্তানে সন্ত্রাস প্রসঙ্গ বাদ পড়ার অর্থ ভারতের চাপের কাছে নতিস্বীতার করেছে ইসালামবাদ। পিপিপি বা তেহরিক-ই-ইনসাফের দাবি, ওই বিবৃতিতে পাকিস্তানের জাতীয় স্বার্থ ক্ষুণ্ণ হয়েছে। আজ দেশের সেই বিক্ষুব্ধ অংশকে বার্তা দিতে সরতাজ বলেন, ‘‘কাশ্মীর, সিয়াচেন বা স্যর ক্রিকের মতো বিতর্কিত বিষয়গুলি নিয়ে দু’দেশই ট্র্যাক টু স্তরে আলোচনা করবে। এর ফলে দু’দেশ দু’পক্ষের সমস্যাকে বুঝতে পারবে।’’ সাউথ ব্লক সূত্রে বলছে, দু’দেশের যৌথ বিবৃতিতে অনেক কিছুই অনুচ্চারিত থাকে। কিন্তু তা বলে আলোচনার টেবিলে তা নিয়ে কথা হবে না, এমনটা নয়।

গত কালের যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বকেয়া সমস্ত বিষয় নিয়ে কথা বলতে আগ্রহী দুই দেশ। বিবৃতিতে কাশ্মীর প্রসঙ্গের উল্লেখ না থাকায় ঘরোয়া রাজনীতিতে সমালোচনার মুখে পড়তে হয় শরিফ সরকারকে। বিশেষ করে গত কয়েক মাস ধরে অশান্ত রয়েছে জম্মু-কাশ্মীর সীমান্ত। দু’পক্ষই একে অপরের বিরুদ্ধে সংঘর্ষ বিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে দোষারোপ করছে। সরতাজ তাই বলেন ‘‘এই মুহূর্তে দু’দেশের সীমান্তে উত্তেজনা কমানোটাই দু’পক্ষের অগ্রাধিকার। আশার কথা হল বিএসএফ ও পাকিস্তান রেঞ্জার্স উভয় পক্ষই এ নিয়ে আলোচনায় বসতে রাজি হয়েছে।’’ যদিও কংগ্রেস শিবিরের কটাক্ষ, এই পর্যায়ে কথাবার্তা নতুন নয়। আগেও হয়ে এসেছে। তবে লাভ কিছু হয়নি।

সমালোচনা উঠেছে মোদীর এই শান্তি প্রক্রিয়ার পদ্ধতি নিয়েও। কূটনীতিকরা বলছেন, ভারত ও পাকিস্তানের মতবিরোধের নানা স্তর রয়েছে। সেগুলি মেটানোর জন্য নীচের স্তর থেকে ধাপে ধাপে আলোচনা এগিয়ে নিয়ে যাওয়াটাই কূটনৈতিক রীতি। ডিরেক্টর-সচিব স্তরের আলোচনায় ঐকমত্য তৈরি করে সেই সাফল্যকে বিদেশমন্ত্রী ও সবার শেষে প্রধানমন্ত্রীদের বৈঠকে নিয়ে যেতে পারলে শান্তি প্রক্রিয়া মজবুত হতে পারে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী মোদী এই প্রক্রিয়া শুরু করছেন একেবারে শীর্ষ স্তর থেকে। এর ফলে নীচের স্তরে বহু সমস্যা অমীমাংসিত থেকে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে, যা ভবিষ্যতে সমস্যা তৈরি করতে পারে।

আবার, নওয়াজ প্রশাসন শান্তির বার্তা দিলেও বাস্তবে তা কতটা পালন হবে তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। নয়াদিল্লি ভাল করেই জানে— পাকিস্তানে ক্ষমতার অনেকগুলি কেন্দ্র। প্রধানমন্ত্রী ভারতের সঙ্গে শান্তি বজায় রাখার বার্তা দিলেও পাক সেনাবাহিনীর একাংশ, গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই বা কট্টর মোল্লাতন্ত্র কখনওই একই পথে হাঁটতে রাজি হয় না। উল্টে ভারত-বিরোধী জিগির বাড়িয়ে তুলতে পারে মোল্লাতন্ত্র ও আইএসআই। জিগিরের প্রশ্নে পিছিয়ে নেই নওয়াজের মন্ত্রীরাও। ক’দিন আগেই সে দেশের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ভারতের বিরুদ্ধে পরমাণু হামলার হুমকি দিয়েছেন। আর ঘটনাচক্রে আজই পাক অর্থমন্ত্রী ইশাক দার বলেছেন, ‘‘পাকিস্তানের আর্থিক উন্নতি ভারত সহ্য করতে পারছে না। তাই পাকিস্তান ও চিনের মধ্যে যে বাণিজ্য করিডর গড়ে তোলার চেষ্টা চলছে, তা ভেস্তে দিতে চাইছে নয়াদিল্লি।’’ এখানেই না-থেমে তিনি বলেন, ভারতের সমস্ত আগ্রাসনের উপযুক্ত জবাব দেওয়া হবে।

দু’পক্ষ যতোই শান্তি রক্ষার ডাক দিক, পারস্পরিক এই অবিশ্বাসের বাতাবরণে এখন নতুন করে দর কষাকষিতে নামতে চাইছে ভারত। দু’দেশের আসন্ন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা স্তরের বৈঠকের আগে তাই পাকিস্তানের কাছে মুম্বই সন্ত্রাসের মামলার দ্রুত বিচার এবং জাকিউর রহমান লকভি ও হাফিজ সইদকে ভারতের হাতে তুলে দেওয়ার দাবি নতুন করে জানাতে চলেছে ভারত। প্রয়োজনে ওই বৈঠকে ফের প্রামাণ্য নথি পেশ করা হবে। কিন্তু তাতে কাজের কাজ কতটা হবে তা নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক যেমন সন্দিহান, তেমনি

এ নিয়ে মোদী সরকারকে কটাক্ষ করতে ছাড়ছে না কংগ্রেসও। দলের মুখপাত্র আনন্দ শর্মার মতে, পাঁচ বছর আগেই সব প্রমাণ তুলে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু পাকিস্তান বলে আসছে তাদের হাতে যথেষ্ট প্রমাণ নেই। এখন নতুন করে সেই প্রমাণ দিতে চেয়ে পাকিস্তানের অজুহাতকেই স্বীকৃতি দিল মোদী সরকার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE