পনীরসেলভম এবং পলানীস্বামী হাত মিলিয়ে নিলে শশিকলার পায়ের তলা থেকে জমি যে সরে যাবে, তা নিয়ে অনেকেরই সংশয় নেই। —ফাইল চিত্র।
জয়ললিতার রাজনৈতিক উত্তরাধিকার ঘিরে ফের তৎপরতা তুঙ্গে তামিলনাড়ুতে। উত্তরাধিকার বহন করবেন কে? এই প্রশ্নকে ঘিরে আড়াআড়ি ভেঙে গিয়েছিল এআইএডিএমকে। দলের প্রতীক জোড়াপাতাও ইতিমধ্যেই বাজেয়াপ্ত করে নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। জেলবন্দি শশিকলা নটরাজন যতই দল ও সরকারকে নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখতে চান, জয়ার অনুপস্থিতিতে একাধিক বার মুখ্যমন্ত্রী হওয়া ও পনীরসেলভম (ওপিএস) এবং এবং বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী ই পলানীস্বামীর (ইপিএস) শিবির এ বার পুনর্মিলনের জন্য কথাবার্তা বলতে শুরু করেছেন। শশিকলাকে সম্পূর্ণ ঝেড়ে ফেলে হাত মিলিয়ে নিতে পারে প্রয়াত আম্মার দলের দুই বিবদমান শিবির— এমনই জল্পনা চেন্নাই জুড়ে।
জয়ললিতার মৃত্যুতে যা আসনটি খালি হয়েছিল, সেই আরকে নগরের উপনির্বাচন ঘিরে এআইএডিএমকে-র অন্দরমহল পুরোপুরি বেআব্রু হয়ে পড়েছে। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ও পনীরসেলভমের শিবির এবং বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী ই পলানীস্বামীর শিবির তথা শশিকলা অনুগামীরা সে নির্বাচনে আলাদা আলাদা প্রার্থী দিয়েছিল। প্রয়াত জয়ললিতার আসন কোন দিকে রায় দিল, তা দুই শিবিরের কাছেই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। কারণ যে শিবির ওই নির্বাচনে জয়ী হবে বা অন্য শিবিরের চেয়ে বেশি ভোট পাবে, সেই শিবির দাবি করতে পারবে, দলের কর্মী-সমর্থকরা তাদের দিকেই রয়েছেন। কিন্তু আরকে নগরে নির্বাচনটাই শেষ পর্যন্ত হয়নি। কারণ শশিকলা তথা পলানীস্বামী শিবিরের বিরুদ্ধে ওই কেন্দ্রের প্রায় ৮৫ শতাংশ ভোটারকে ঘুষ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। বিষয়টির তদন্ত চলছে। নির্বাচন কমিশন আপাতত ওই কেন্দ্রের উপনির্বাচন বাতিল করে দিয়েছে।
আরকে নগরের রায় কার দিকে যেতে পারত, এআইএডিএমকে-র কোনও শিবিরের কাছেই তা এখনও স্পষ্ট নয়। কিন্তু এমজিআর বা আম্মার সাধের দলে এআইএডিএমকে-র ভবিষ্যৎ যে ঘোর অন্ধকারে, তা বুঝতে কোনও শিবিরেরই অসুবিধান হয়নি। এই পরিস্থিতিতেই পরস্পরের সঙ্গে বোঝাপড়ার চেষ্টায় দুই শিবির, বলছে তামিলনাড়ুর রাজনৈতিক শিবির।
তখনও দাপট ছিল প্রশ্নাতীত। দলের সব নেতা তাঁকে সমর্থন জানাতে বাধ্য হয়েছিলেন। কিন্তু শশিকলা জেলে ঢোকার পর পরিস্থিতিটা বদলে গিয়েছে অনেকটাই। —ফাইল চিত্র।
কী ভাবে হবে বোঝাপড়া?
মুখ্যমন্ত্রী পলানীস্বামীর অনুগামীরা বলছেন, পনীরসেলভমদের সঙ্গে সমঝোতায় গিয়ে দলকে ফের ঐক্যবদ্ধ করতে কোনও আপত্তি নেই। কিন্তু পালানীস্বামীকেই মুখ্যমন্ত্রী রাখতে হবে। আর পনীরসেলভমের অনুগামীরা বলছেন, জয়ললিতা যত বার মুখ্যমন্ত্রিত্ব ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন, তত বারই পনীরকে মুখ্যমন্ত্রী করেছেন। তাই দল এবং সরকার, দুইয়ের শীর্ষ পদেই পনীরসেলভমকে বসাতে হবে।
আরও পড়ুন: আদিত্যনাথ তালাকে দ্রৌপদী জুড়তেই শুরু বিতর্ক
আলোচনা এগোচ্ছে বলেই খবর। মুখ্যমন্ত্রী পদে পলানীস্বামীকে রেখে এআইএডিএমকে-র শীর্ষ পদে পনীরসেলভমকে বসানো হতে পারে, এমন জল্পনা শোনা যাচ্ছে। তবে পনীরসেলভম শিবিরের আরও কিছু শর্ত রয়েছে। দলের যে প্রবীণ নেতাকে শশিকলা নটরাজন বহিষ্কার করেছিলেন, সেই ই মধুসূদননকে আবার এআইএডিএমকে-র প্রেসিডিয়াম চেয়ারম্যান পদে ফিরিয়ে আনতে হবে, বলছে পনীর শিবির। শুধু তাই নয়, শশিকলা নটরাজনকে এবং তাঁর ভাইপো তথা দলের বর্তমান নিয়ন্ত্রক টিটিভি দিনাকরণকে দল থেকে বার করে দিতে হবে বলেও পনীরসেলভমরা জানিয়ে দিয়েছেন।
চেন্নাই সূত্রের খবর, শশিকলাকে ঝেড়ে ফেলতে কোনও আপত্তি নেই পলানীস্বামীদের। তবে পনীসেলভমকে এআইএডিএমকে সাধারণ সম্পাদক করা হবে কি না, তা নিয়ে টানাপড়েন রয়েছে। এআইএডিএমকে-র জনভিত্তি সবচেয়ে শক্তিশালী যে থেবর সম্প্রদায়ের মধ্যে, পনীরসেলভম সেই সম্প্রদায়ের। আর পলানীস্বামী গাউন্ডার সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি। দল ও সরকারের শীর্ষ পদে এই দুই সম্প্রদায় থেকে দু’জন থাকলে, জাতপাতের সমীকরণেও ভারসাম্য বজায় রাখা যাবে, বলছেন পুনর্মিলনপন্থীরা। কোনও শিবিরই চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারেনি। তবে ওপিএস এবং ইপিএস যদি হাত মিলিয়ে নেন শেষ পর্যন্ত, জেলবন্দি শশিকলার পায়ের তলা থেকে কিন্তু নিঃশেষে সরে যাবে জমিটা, বলছে ওয়াকিবহাল মহল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy