Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

সেনাপ্রধানের তূণ থেকে নিয়েই শরনিক্ষেপ করেছেন পাক হাই কমিশনার

পাক রাষ্ট্রদূত আব্দুল বসিত গতকাল যে শরনিক্ষেপ করলেন, তা সে দেশের সেনাপ্রধান রাহিল শরিফের তূণ থেকেই এসেছে। পাক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ এখানে নেহাতই এক পার্শ্বচরিত্র বই নন।

অগ্নি রায়
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৮ এপ্রিল ২০১৬ ২১:১৫
Share: Save:

পাক রাষ্ট্রদূত আব্দুল বসিত গতকাল যে শরনিক্ষেপ করলেন, তা সে দেশের সেনাপ্রধান রাহিল শরিফের তূণ থেকেই এসেছে। পাক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ এখানে নেহাতই এক পার্শ্বচরিত্র বই নন।

গতকাল ভারত-পাকিস্তান হাই ভোল্টেজ চিত্রনাট্যের পর এ কথাই মনে করছে সাউথ ব্লক। বিদেশমন্ত্রকের পাকিস্তান ডেস্ক গতকালের পর থেকেই ঝাঁপিয়ে পড়েছে পরিস্থিতির পর্যালোচনায়। দফায় দফায় কথা হয়েছে সে দেশে নিযুক্ত ভারতীয় রাষ্ট্রদূত গৌতম বাম্বেওয়ালার সঙ্গে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের প্রতিনিধি, বিদেশসচিব এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা দফায় দফায় নিজেদের মধ্যে আলোচনা সেরেছেন বিষয়টি নিয়ে।

বিদেশমন্ত্রক সূত্রের বক্তব্য, গত কয়েক সপ্তাহে খুব দ্রুত খর্ব হয়েছে নওয়াজ শরিফের রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিক কতৃত্ব। গোটা দেশের রাশ ধীরে ধীরে চলে যাচ্ছে পাক সেনা প্রধানের হাতে। গতকাল বসিতের ভারতকে পঠানকোট নিয়ে চাপ দেওয়া, দ্বিপাক্ষিক আলোচনা স্থগিত ঘোষণা, সর্বোপরি সে দেশে গ্রেফতার হওয়া ভারতের প্রাক্তন নৌ সেনা অফিসার কূলভূষণ যাদবের বিষয়ে কঠোর অবস্থান নেওয়া একই সুতোয় গাঁথা বলেই মনে করা হচ্ছে। নওয়াজকে অগ্রাহ্য করে রাহিল শরিফের সরাসরি পাক দূতাবাসের (নয়াদিল্লির) নির্দেশেই বসিত কড়া অবস্থান নিয়েছেন, এ কথা মনে করা হচ্ছে।

আরও পড়ুন- অনিশ্চিত এনআইএ-র সফর, পাক দূতের গোলায় বেকায়দায় দিল্লি

ক্ষমতা এবং রাজনৈতিক কর্তৃত্বের প্রশ্নে পাকিস্তান যে আড়াআড়ি ভাবে বিভক্ত হয়ে গিয়েছে, এই পরিস্থিতিতে তা ক্রমশ স্পষ্ট হয়ে উঠছে বলে সাউথ ব্লকে রিপোর্ট পাঠিয়েছে পাকিস্তানের ভারতীয় দূতাবাস। প্রথমত পানামা নথিতে নওয়াজের পরিবারের নাম জড়িয়ে গিয়েছে। যদিও নওয়াজ এবং তাঁর পুত্র এ ব্যাপারে নিজেদের দায় ঝেড়ে ফেলার জন্য বিবৃতি দিয়েছেন কিন্তু পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে বিষয়টি নিয়ে হৈ চৈ শুরু হয়ে গিয়েছে। বিরোধী দলগুলি নওয়াজের পদত্যাগের দাবি করে শ্লোগান দিচ্ছে যে তিনি কর ফাঁকি দেওয়ার জন্য বিদেশি সংস্থার দ্বারস্থ হয়েছেন। এমতাবস্থায় রাজনৈতিকভাবে বেকায়দায় পড়া নওয়াজকে কোনঠাসা করতে পূর্ণ উদ্যোগ নিয়ে মাঠে নেমেছে পাক সেনার একটি বড় অংশ। বলা হচ্ছে ইসলামি মৌলবাদীদের অন্তর্ঘাত আটকানোর প্রশ্নে নওয়াজ সম্পূর্ণ ব্যর্থ। লাহৌরে ২৭ মার্চ জঙ্গি হামলার পর এই অভিযোগ আরও বেড়েছে। পরিস্থিতি নওয়াজের এতটাই হাতের বাইরে চলে গিয়েছে যে তার অনুমতির অপেক্ষা না করেই রাহিল শরিফ লাহৌর হামলার পর পঞ্জাব প্রদেশে জঙ্গি ঘাঁটিগুলির উপর আক্রমণ চালিয়েছেন। সেনাবাহিনীর মুখপাত্র স্পষ্ট জানিয়েছেন যে এই প্রত্যাঘাত প্রধানমন্ত্রী নন, ঘটেছে রাহিলের নির্দেশে। তাৎপর্যপূর্ণভাবে এই পঞ্জাবই কিন্তু নওয়াজের মূল রাজনৈতিক ভিত।

বিদেশমন্ত্রকের মতে, কিছু ইসলামিক গোষ্ঠাকে পাক সেনাপ্রধান মদত দিচ্ছেন নওয়াজকে দুর্বল করার জন্য। পাক সেনাবাহিনীর সে দেশের রাজনৈতিক নেতৃত্বের উপর অবিশ্বাসের মূল কারণ হল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর এবং নওয়াজের ঘনিষ্ঠতা। অভিযোগ, কাশ্মীরকে পিছনে ফেলে অথবা ততোটা গুরুত্ব না দিয়েই দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উন্নতি ঘটানোর চেষ্টা করে চলেছেন শরিফ।

আরও একটি বিষয়কে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে দেখতে চাইছে নয়াদিল্লি। সেটা হল, ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রোহানির ইসলামাবাদ সফরের দু’দিন আগে গ্রেফতার করা হয়েছে ভারতের প্রাক্তন অফিসার কূলভূষণকে। বলা হয়েছে তিনি ভারতের র’-এর চর, বালুচিস্তানে পাক বিরোধী ষড়যন্ত্র ফাঁদছেন। ইরানের চাবাহারে আগে দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিলেন ভারতের প্রাক্তন এই নৌ অফিসার। এই উদাহরণটি তুলে ধরে পাক সেনাপ্রধান ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রোহানিকে বলেছেন, ইরানে চাবাহার বন্দর গড়ার নামে (এটি ভারত আফগানিস্তান এবং ইরানের ত্রিপাক্ষিক উদ্যোগ, ইসলামাবাদ যাতে নানাভাবে বাগড়া দিয়ে আসছে) ভারত র’এর অফিস খুলে বসেছে! পাকিস্তান বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন। অবিলম্বে বিষয়টি দেখুক ইরান। চাবাহারের সঙ্গে র’-এর সংযোগ হিসাবে কূলভূষণকে উদাহরণস্বরূপ খাড়া করা হয়েছে ইরানের সামনে। গতকাল আব্দুল বসিতের কথা অনুযায়ী, কূলভুষণ যাদবের ভবিষ্যত এখনও স্পষ্ট নয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE