Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪
India

ভিসার নামে জঙ্গি বাছাই পাক দূতাবাসে!

খাতায় কলমে প্রায় আড়াইশো জনের হিসেব রয়েছে ভারতের কাছে, যাঁরা আইনি পথে পাক হাইকমিশনের ভিসা নিয়ে সে দেশে গিয়ে আর ফিরে আসেননি।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

অগ্নি রায় 
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৭ জুন ২০২০ ০৪:৪৯
Share: Save:

গত কয়েক বছরে নয়াদিল্লির চাণক্যপুরীতে অবস্থিত পাকিস্তানের দূতাবাসে ভিড় বেড়েছে জম্মু ও কাশ্মীর থেকে আসা যুবকদের। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সূত্রের বক্তব্য, ভিতরে তাঁদের ভিসা ইন্টারভিউ হচ্ছে দীর্ঘক্ষণ ধরে। উঁচু পাঁচিল ঘেরা ওই অফিসে অনেকটা সময় কাটাচ্ছেন এই ঝকঝকে চেহারার পাঠানস্যুট, কাশ্মীরি কোট পরা যুবকেরা। যথাসময়ে মিলছে পাকিস্তানে যাওয়ার ভিসা। কিন্তু যাঁরা যাচ্ছেন, তাঁদের অনেকেই আর ফিরে আসছেন না ভূস্বর্গে, নিজেদের গ্রামে।

আর এই সূত্রেই সম্প্রতি পাক দূতাবাস ভারতের আতসকাচের নীচে। পাক দূতাবাসের দু’জন কর্মীকে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে ভারত থেকে ফেরত পাঠানো হয়েছে কয়েক সপ্তাহ আগে। সম্প্রতি পাক দূতাবাসের কর্মীসংখ্যা ৫০ শতাংশ কমানোর সিদ্ধান্ত তাদের ‘চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার’কে জানিয়ে দিয়েছে সাউথ ব্লক। সূত্রের মতে, কারণটা শুধু গুপ্তচরবৃত্তি নয়। অভিযোগ আরও মারাত্মক। পাকিস্তানের মদতপুষ্ট জঙ্গি গোষ্ঠীগুলির জন্য প্রথম বাছাইটা হচ্ছে এই দূতাবাস থেকেই!

খাতায় কলমে প্রায় আড়াইশো জনের হিসেব রয়েছে ভারতের কাছে, যাঁরা আইনি পথে পাক হাইকমিশনের ভিসা নিয়ে সে দেশে গিয়ে আর ফিরে আসেননি। গোয়েন্দা সূত্রের খবর অনুযায়ী, মূলত জইশ ই মহম্মদ এবং লস্কর ই তইবা-য় এঁদের যোগ দেওয়ার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।

কেন্দ্রীয় সরকারের হিসেব অনুযায়ী, ২০১৭ থেকে এখনও পর্যন্ত মোট ৩৯৯ জন জম্মু ও কাশ্মীরের নাগরিককে তাদের দেশে যাওয়ার ভিসা দিয়েছে দিল্লির পাক হাইকমিশন। তাঁদের মধ্যে ২১৮ জনের কোনও খোঁজ আর মেলেনি। তাঁরা দেশে ফেরেননি। মোবাইলেও তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। পাকিস্তানে গিয়ে তাঁরা স্রেফ হারিয়ে গিয়েছেন!

এপ্রিল মাসের গোড়ায় কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণরেখার কাছে কেরান সেক্টরে পাঁচ জন লস্কর জঙ্গি নিহত হয়। তারা ভারতে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করছিল। ওই সংঘর্ষে মারা যান সেনাবাহিনীর স্পেশাল ফোর্স-এর পাঁচ জনও। এই জঙ্গিদের মধ্যে তিন জনের পরিচয় পাওয়া গিয়েছিল। তদন্তে দেখা যায়, এই তিন জন অর্থাৎ, আদিল হুসেন মির, উমর নাজির খান এবং সাজ্জাদ আহমেদ হুরা — প্রত্যেকেই জম্মু ও কাশ্মীরের বাসিন্দা। পাক হাইকমিশনের দেওয়া ভিসা নিয়ে ২০১৮-র এপ্রিলে এরা পাকিস্তানে গিয়েছিল।

কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সূত্রের রিপোর্ট অনুযায়ী, জম্মু ও কাশ্মীরের যুবকদের বাছাই করে তাদের মগজধোলাই করে পাকিস্তানে পাঠানো পর্যন্ত একটা বড় ভূমিকা রয়েছে দিল্লিতে অবস্থিত পাক দূতাবাসের। লস্কর বা জইশ তাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে ভারতের বিরুদ্ধে ছায়াযুদ্ধে ব্যবহার করছে। সূত্রের মতে, এরা নিহত হওয়ার পরে কোনও ভাবে তাদের পরিচয় প্রকাশিত হলে এখন আরও বেশি করে মুখ পুড়বে ভারতেরই। জম্মু ও কাশ্মীরের নাগরিকেরাই সন্ত্রাসের পথ বেছে নিচ্ছেন— এই তথ্যকে ব্যবহার করে পাকিস্তান সরব হবে আন্তর্জাতিক মঞ্চে। তারা বোঝাবে, উপত্যকার বিশেষ মর্যাদা অবলুপ্ত করে তাকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল করার প্রতিবাদ এ ভাবেই করছেন কাশ্মীরবাসী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

India Pakistan Pakistan Embassy
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE