পনীরসেলভম
তামিলনাড়ুর মসনদেও এক চা-ওয়ালা।
চা-ওয়ালার ছেলে নরেন্দ্র মোদীর দেশের প্রধানমন্ত্রী হওয়া নিয়ে চর্চা হয়েছে বিস্তর। আজ তামিলনাড়ুর ‘আম্মা’ চলে যাওয়ার পরে রাজ্যের ভার নিলেন যিনি, তিনিও অতীতে চা বিক্রি করেছেন।
বছর পঁয়যট্টির এডিএমকে নেতা ও পনীরসেলভমকে তামিল রাজনৈতিক শিবির চেনে ওপিএস নামে। এ নিয়ে তিন বার মুখ্যমন্ত্রী হলেন তিনি। আগে দু’বার জয়ললিতা জেলে যাওয়ায় সাময়িক ভাবে রাজ্যের দায়িত্ব নিতে হয়েছিল। এ বার দায়িত্ব পেলেন পুরোপুরি। দলনেত্রীর মৃত্যুর পরে গত কাল মাঝরাতেই মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তাঁকে নির্বাচিত করে দল। রাজনৈতিক শিবিরের মতে, আপাতত দলে ভাঙন রোখাই নতুন মুখ্যমন্ত্রীর সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
এডিএমকে রাজনীতিতে পনীরসেলভম বরাবরই জয়ললিতার ঘনিষ্ঠ সহযোগী বলে পরিচিত। ২০০১ এবং ২০১৪ সালে জয়ললিতা দুর্নীতি মামলায় জড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে সরে দাঁড়ান। দু’দফাতেই নিজের রাজ্যপাট চালানোর জন্য পনীরসেলভমকেই বেছে নেন জয়া। এডিএমকে নেতাদের মতে, দলনেত্রীর ভরসার মর্যাদাও দিতেন পনীর। মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে এ যাবৎ জয়ললিতার চেয়ারে বসে তিনি কোনও মন্ত্রিসভার বৈঠক করেননি। ভরতের মতো পাদুকা না হলেও, মুখ্যমন্ত্রীর ফাঁকা চেয়ারের সামনে জয়ললিতার ছবি রেখে বৈঠক করতেন পনীর। এমনকী সচিবালয়ে যেখানে জয়ললিতা গাড়ি রাখতেন, তার আশপাশে গাড়ি পর্যন্ত রাখতেন না তিনি। প্রশাসন চালাতেন জয়ললিতার নির্দেশ মেনে। যে কারণে বিরোধীদের আক্রমণের নিশানাও হতে হয়েছে তাঁকে।
বিশ্বস্ততার জন্যই দলনেত্রী যে পনীরসেলভমকে পছন্দ করেন এই তথ্য সকলেরই জানা। সে কারণেই গত অক্টোবরে জয়ললিতা অসুস্থ হলে দলের বিধায়করা মন্ত্রিসভা চালানোর দায়িত্ব পনীরসেলভমের হাতেই তুলে দেন। এডিএমকের অন্দরমহলে পনীরসেলভম ও শশিকলা নটরাজনের দ্বন্দ্ব রয়েছে। কিন্তু প্রশাসনিক বিষয়ে পনীরসেলভমের উপরে আস্থার বার্তা খোদ জয়ললিতাই দিয়ে গিয়েছেন। তাই মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তাঁর নামে আপত্তি জানাননি শশিকলাও।
জীবনের শুরুর দিকে অবশ্য রাজনীতির সঙ্গে সম্পর্ক ছিল না পনীরসেলভমের। ১৯৭০ সালে বন্ধু বিজয়নের সঙ্গে ক্যান্টিনে চায়ের দোকান খুলেছিলেন তিনি। দশ বছর চা বিক্রির পরে সেই দোকান ভাইয়ের হাতে তুলে দিয়ে রাজনীতিতে নামেন পনীরসেলভম। ১৯৯৬ সালে পেরিয়াকুলাম পুরসভার চেয়ারম্যান। পাঁচ বছর বাদে পেরিয়াকুলাম কেন্দ্র থেকে তামিলনাড়ু বিধানসভায় পা দেন পনীর। শুরুতেই মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতার আস্থাভাজন হিসেবে এডিএমকে-র অলিন্দে গুরুত্ব পেতে শুরু করেন। প্রথম বার বিধায়ক হয়েই মন্ত্রী হন। উপরন্তু সে সময়ে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে জয়ললিতা মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে সরে দাঁড়ালে তাঁর পরিবর্তে পনীরসেলভম দায়িত্ব নেন। তার পর যত দিন গিয়েছে তত আম্মার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বেড়েছে পনীরসেলভমের।
এখন তামিলনাড়ুর রাজনীতিতে তিনি কী ভূমিকা নেবেন তা-ই দেখার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy