Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Vidyasagar College Vandalization

বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙায় রাগে-দুঃখে ফুঁসছে করমাটাঁড়

কলকাতা থেকে অনেক দূরে শত প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও করমাটাঁড়ে বিদ্যাসাগরের স্মৃতিবিজড়িত বাড়ি ‘নন্দনকানন’-কে সযত্নে রক্ষা করছেন সেখানকার বাঙালিরা।

ছবি: পিটিআই।

ছবি: পিটিআই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ মে ২০১৯ ০২:০৫
Share: Save:

টেলিভিশনে মঙ্গলবার রাতেই খবরটা দেখেছিলেন তাঁরা। খাস কলকাতা বিদ্যাসাগরের নামাঙ্কিত কলেজে ঢুকে তাঁর মূর্তি ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়ার খবর। দেখে যতটা দুঃখ পেয়েছেন, তার থেকেও বেশি রাগ হয়েছে ঝাড়খণ্ডের জামতাড়া, করমাটাঁড়ের বাসিন্দা দেবাশিস মিশ্র, অরুণকুমার বোস, চন্দন মুখোপাধ্যায়দের। বারবার তাঁদের মনে হয়েছে, বিদ্যাসাগরের মতো মনীষীদের মূর্তি ভেঙে আসলে আত্মহননের পথই বেছে নেওয়া হচ্ছে।

কলকাতা থেকে অনেক দূরে শত প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও করমাটাঁড়ে বিদ্যাসাগরের স্মৃতিবিজড়িত বাড়ি ‘নন্দনকানন’-কে সযত্নে রক্ষা করছেন সেখানকার বাঙালিরা। অথচ ভোট-প্রচারকে কেন্দ্র করে খাস কলকাতা শহরের বুকে একটি কলেজে বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভেঙে দিল এক দল দুষ্কৃতী! কেউ সেটা রক্ষা করতে পারল না! কেউ রুখে দাঁড়াল না! হতবাক হয়ে গিয়েছেন, রাগে ফুঁসছেন জামতাড়া, করমাটাঁড়ের বাঙালিরা। ভীষণ মন খারাপ তাঁদের।

স্বাস্থ্যোদ্ধারের জন্য বাঙালি এক সময় ‘পশ্চিম’-এ, অর্থাৎ সাঁওতাল পরগনা, মধুপুর, ভাগলপুরে যেত। ১৮৭১ সাল নাগাদ স্বাস্থ্যের অবনতি হয় বিদ্যাসাগরের। স্বাস্থ্য ফেরাতেই করমাটাঁড়ে একটি বাগান-সহ বাড়ি কেনেন তিনি। পরে স্কুলও খোলেন। পরবর্তী কালে বিদ্যাসাগরের ছেলে নারায়ণচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতার মল্লিক পরিবারকে বিক্রি করে দেন সেই বাড়ি। অযত্নে, অবহেলায় ভগ্নদশায় পৌঁছয় বাড়িটি। বিহার বেঙ্গল অ্যাসোসিয়েশন অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে বাড়িটি কিনে নেয় ১৯৭২ সালে। করমাটাঁড়ের সেই নন্দনকাননের দেখাশোনা করে স্থানীয় নন্দনকানন পরিচালন সমিতি।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

পরিচালন সমিতির সম্পাদক দেবাশিস মিশ্র বলেন, ‘‘করমাটাঁড়ে বিদ্যাসাগরের বাড়ি এখন দর্শনীয় স্থান। তাঁর স্মৃতি বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টায় আমরা, প্রবাসী বাঙালিরা সব সময়েই সজাগ। বাগানবাড়ির ভিতরে পর্যটকদের থাকার জন্য রয়েছে একটি অতিথি নিবাসও। আছে স্কুল। সেখানে আদিবাসীদের ছেলেমেয়েদের পড়ানো হয়। সেলাই শেখানো হয় মেয়েদের।’’

শুধু জামতাড়া বা করমাটাঁড়ের বাসিন্দারা নন। বিদ্যাসাগরের সেই বাড়ি দেখভাল করতে রাঁচী, জামশেদপুর, গিরিডি থেকেও বারবার ছুটে আসেন বাঙালিরা। যেমন ঝাড়খণ্ডের বাংলা অ্যাকাডেমির প্রেসিডেন্ট সিদ্ধার্থজ্যোতি রায় মাঝেমধ্যেই রাঁচী থেকে আসেন করমাটাঁড়ে। পেশায় আইনজীবী সিদ্ধার্থবাবু বলেন, ‘‘ওই বাড়ির চার দিকে পাঁচিল তোলার কাজ আমরা সকলে মিলেই করেছি। অতিথি নিবাস তৈরির কাজও সম্প্রতি শেষ হয়েছে। ওই বাড়ির রক্ষণাবেক্ষণের জন্য এখনও মাঝেমধ্যেই ছুটে যাই ওখানে।’’ সিদ্ধার্থবাবু জানান, মঙ্গলবার রাতে বিদ্যাসাগরের মূর্তির উপরে হামলার খবর শুনে তাঁরা বেদনাহত। তাঁর দাবি, ‘‘যে বা যারা এর সঙ্গে যুক্ত, তাদের গ্রেফতার করে উপযুক্ত শাস্তি দিতে হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE