Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

বয়স বাড়ছে বোধ নয়, আক্রমণে মোদীও

ঝোড়ো বক্তৃতায় গত কাল তাঁকে আগাগোড়া আক্রমণ করেছিলেন রাহুল গাঁধী। নরেন্দ্র মোদী আজ তার জবাব দিলেন লোকসভায়। আর সেই কাজটি করতে গিয়ে কৌশলে অস্ত্র করলেন গাঁধী-নেহরু পরিবারকেই

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৪ মার্চ ২০১৬ ০৩:২৭
Share: Save:

ঝোড়ো বক্তৃতায় গত কাল তাঁকে আগাগোড়া আক্রমণ করেছিলেন রাহুল গাঁধী। নরেন্দ্র মোদী আজ তার জবাব দিলেন লোকসভায়। আর সেই কাজটি করতে গিয়ে কৌশলে অস্ত্র করলেন গাঁধী-নেহরু পরিবারকেই! চেনা নাটকীয় ভঙ্গিতে কখনও জওহরলাল নেহরু, কখনও ইন্দিরা গাঁধী, কখনও রাজীব গাঁধীর উদ্ধৃতি তুলে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বোঝাতে চাইলেন, সংসদ অচল রেখে রাহুল তাঁর পূর্বপুরুষদের কথারই অন্যথা করছেন! তাঁর বয়স হয়েছে। কিন্তু বোধশক্তি হয়নি।

রাহুলের আক্রমণের জবাব মোদী কী ভাবে দেন, তা দেখতেই আজ মুখিয়ে ছিল গোটা বিজেপি শিবির। গোড়ায় যেন একটু চাপে ছিলেন মোদী। তাঁর হাত কাঁপতেও দেখেছেন কোনও কোনও সাংসদ। তবে বক্তৃতা একটু দানা বাঁধতেই ছন্দে ফেরেন প্রধানমন্ত্রী। তখন থেকেই রাহুল তথা গাঁধী পরিবারের দিকে উড়ে আসে মোদীর বাছাই করা তির। কোনওটা রাহুলের রাজনৈতিক পরিপক্কতা নিয়ে, কোনওটা জিএসটি বিল নিয়ে, কোনওটা একশো দিনের কাজ নিয়ে।

গত কাল বিজেপি শিবিরে ফাটল ধরানোর একটা চেষ্টা করেছিলেন রাহুল। মোদী অন্য কারও কথা শোনেন না বলে অভিযোগ করেছিলেন তিনি। আজ সেই অস্ত্রই পাল্টা প্রয়োগ করেছেন মোদী। সংসদে হইহল্লার প্রসঙ্গ টেনে বলেছেন, ‘‘বিরোধী শিবিরের কেউ কেউ হীনমন্যতায় ভোগেন। পাছে অন্য কেউ আরও একটু ভাল বলে ফেলেন, সেটা ঠেকাতেই হল্লা হয়।’’ এই কটাক্ষও যে রাহুলের উদ্দেশে, বুঝতে অসুবিধে হয়নি। কারণ একটু পরেই মোদী বলেছেন, ‘‘অনেকের তো বয়স বেড়ে চলে, কিন্তু বোধশক্তি বাড়ে না!’’ হুবহু একই কথা গত কাল বলেছিলেন অরুণ জেটলি।

মোদী কিন্তু এখানেই থামেননি। লালকৃষ্ণ আডবাণীর মতো বর্ষীয়ানদের বিজেপিতে গুরুত্বহীন করে দেওয়া নিয়ে এত দিন তাঁকে আক্রমণ করেছেন রাহুলরা। আজ একই ভাবে মোদী অভিযোগ করেছেন, রাহুল কখনও মনমোহন সিংহ সরকারের অর্ডিন্যান্স ছিঁড়ে ফেলার কথা বলেছেন। কখনও (ভোটের আগে) প্রকাশ্যে ছিঁড়েও ফেলেছেন মুলায়ম সিংহের প্রতিশ্রুতির তালিকা। মোদী বোঝাতে চান, বড়দের অপমান করাটা আসলে রাহুলেরই অভ্যাস। এবং এতে ফল যে হয়নি, তা নয়। মোদীর বক্তৃতার পরে সনিয়ার পাশে বসে থাকা মুলায়ম উঠে এসে মোদীর হাত ধরে অভিনন্দন জানিয়ে যান।

বর্ষীয়ান এক রাজনীতিক সন্ধ্যায় বলছিলেন, ‘‘মোদী যে আজ রাহুলকে বিঁধবেন, জানা কথা। মাথায় রাখতে হবে, মোদীর সংস্কারের চাকা বসে গিয়েছে। এখন সংসদ সচল রেখে বাকি বিলগুলো পাশ করানোই বড় দায়। কিন্তু বাদ সাধছেন রাহুল।’’ রাজ্যসভায় এনডিএ সংখ্যালঘু। একের পর এক বিল সেখানে আটকে যাচ্ছে। যে কারণে জিএসটি বিল আটকে থাকা নিয়ে কংগ্রেসকে আজও কটাক্ষ করেছেন মোদী। তবে রাহুল গত কাল রোহিত ভেমুলার আত্মহত্যা ও জেএনইউয়ের ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে কেন্দ্রকে তোপ দেগেছিলেন। আজ মোদী কিন্তু সংসদে ওই দুই ঘটনার কোনও উল্লেখ করেননি। যা নিয়ে পরে অসন্তোষ জানিয়েছেন কংগ্রেস মুখপাত্র রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালা।

জবাবে বিজেপি নেতাদের বক্তব্য, প্রধানমন্ত্রী বিলক্ষণ জেএনইউ নিয়ে বলেছেন। আজ তিনি তো খোলাখুলিই বললেন, ‘‘লোকের অধিকার রয়েছে আমাকে প্রশ্ন করার।’’ শুধু তা-ই নয়, ক্রুশ্চেভ ও স্তালিনের গল্প শুনিয়ে মোদী বলেছেন, স্তালিন বেঁচে থাকতে রাশিয়ায় কেউ মুখ খুলতে পারতেন না। কাজেই প্রধানমন্ত্রী বুঝিয়ে দিয়েছেন, তাঁর জমানায় অসহিষ্ণুতার অভিযোগ মিথ্যে। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, আজই নাগপুরের এক অনুষ্ঠানে আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবত জেএনইউ প্রসঙ্গে খোঁচা দিয়ে বলেছেন, ‘‘বর্তমান প্রজন্মকে এখন বলে দিতে হয়, ভারতমাতার তারিফ কী ভাবে করতে হয়!’’

মোদী অবশ্য বিরোধীদের উদ্দেশে একগুচ্ছ প্রস্তাবও পেশ করেছেন। তাঁর আর্জি, ‘তু-তু-ম্যায়-ম্যায়’ ছেড়ে সংসদ যেন সচল থাকে। সংসদে একটা সপ্তাহ যেন শুধু প্রথম বারের সাংসদেরা বলেন। নারী দিবসে যেন বলেন শুধু মহিলারা। রোজকার গতানুগতিক বিতর্কের বাইরে রাষ্ট্রনীতি নিয়ে যেন বিশেষ আলোচনাসভা বসে। বলেছেন, ‘‘আমি না হয় নতুন, আপনারা অভিজ্ঞ। আসুন একসঙ্গে কাজ করি।’’

বাগ্মী প্রধানমন্ত্রীর এই কথায় অবশ্য কংগ্রেস এখনই মজতে রাজি নয়!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Narendra Modi Rajiv Gandhi Parliament
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE