Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

নরেন্দ্র মোদীর ‘স্বচ্ছতা’ নিয়েই গুঞ্জন সংবাদমাধ্যমে

এই প্রশংসা বাক্যে কিন্তু সাধারণ ভাবে উচ্ছ্বসিত নন দিল্লির সাংবাদিককুল। ৯, অশোক রোডের সবুজ প্রাঙ্গণে গুঞ্জন উঠল, গত তিন বছরে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে  তাঁর সম্পর্কে কতটা স্বচ্ছতার নিদর্শন রেখেছেন প্রধানমন্ত্রী?

নরেন্দ্র মোদী।

নরেন্দ্র মোদী।

জয়ন্ত ঘোষাল
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৯ অক্টোবর ২০১৭ ০৩:৪৫
Share: Save:

গোটা দেশ জুড়ে স্বচ্ছতার যে কর্মসূচি তাঁর সরকার নিয়েছে, তাকে সমর্থন করার জন্য সংবাদমাধ্যমের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানালেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আজ বিজেপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দীপাবলি মঙ্গল মিলন উৎসবে মোদী বলেন, অন্য অনেক বিষয়ে সরকারের সমালোচক হলেও স্বচ্ছতার অভিযানকে সংবাদমাধ্যম এক সুরে সমর্থন জানিয়েছে।

এই প্রশংসা বাক্যে কিন্তু সাধারণ ভাবে উচ্ছ্বসিত নন দিল্লির সাংবাদিককুল। ৯, অশোক রোডের সবুজ প্রাঙ্গণে গুঞ্জন উঠল, গত তিন বছরে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কে কতটা স্বচ্ছতার নিদর্শন রেখেছেন প্রধানমন্ত্রী? এখানেই শেষ নয়, বিজেপি দফতরে অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার তিন ঘণ্টার মধ্যেই ঢিল ছোড়া দূরত্বে প্রেস ক্লাবে জড়ো হয়ে বিনয় বর্মাকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে সরব হলেন সাংবাদিকেরা। প্রশ্ন তুললেন, উত্তরপ্রদেশ সরকারের সাহায্য নিয়ে রাতের অন্ধকারে ছত্তীসগঢ় পুলিশ এক জন সাংবাদিককে গ্রেফতার করল কোন অধিকারে? এ কোন স্বচ্ছতা!

আরও পড়ুন: একনায়ক নন, দাবি মোদীর

দিল্লির প্রবীণ নাগরিকদের মতে, গত তিন বছরে নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে সাংবাদিকদের সম্পর্ক কখনওই সহজ-স্বাভাবিক হয়নি। যেমনটা ছিল আগের প্রধানমন্ত্রীদের সঙ্গে। আজই যেমন। প্রায় সওয়া ঘণ্টা বিজেপি দফতরে কাটালেন মোদী। দু’পাশে লোহার রড দেওয়া ব্যারিকেডের মাঝের রাস্তা দিয়ে হাঁটলেন। মাঝে মাঝে থেমে পড়ে ব্যারিকেডের ও-পারে থাকা কোনও সাংবাদিককে নাটকীয় ভাবে বললেন, ‘ক্যায়সে হো’। কোনও সাংবাদিকের ভাগ্য আরও একটু সুপ্রসন্ন হলে সুযোগ মিলল প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে করমর্দনের। কিন্তু কোনও প্রশ্ন নেই, কোনও উত্তর নেই।

জওহরলাল নেহরু থেকে ইন্দিরা গাঁধী, নরসিংহ রাও থেকে বিশ্বনাথপ্রতাপ সিংহ— সকলেই কিন্তু ঘনঘন দেখা করতেন সাংবাদিকদের সঙ্গে। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করতেন। সাংবাদিক কুলদীপ নাইয়ারের কথায়, ‘‘নেহরু, শাস্ত্রী এমনকী ইন্দিরা গাঁধী জরুরি অবস্থা করলেও নানা ধরনের সাংবাদিকদের সঙ্গে দেখা করতেন। মতের অমিল হলে প্রকাশ্যে ঝগড়া করেছেন। কিন্তু চোরাগোপ্তা আক্রমণ হানেননি।’’

অথচ মোদী গত তিন বছরে একটিও সাংবাদিক বৈঠক করেননি। বিদেশ সফরে এক বারের জন্যও নিয়ে যাননি কোনও সাংবাদিককে। এ নিয়ে বলতে গেলে তাঁর জবাব ছিল, ‘‘ম্যায় ২৫ হাজার ফিট উঁচাই মে হাওয়াই জাহাজ মে পত্রকার লেকে ঘুমনেওয়ালা নেতা নেহি হুঁ।’’
মোদীর জনসংযোগ সোশ্যাল মিডিয়ায়— একমুখী।

সংবাদমাধ্যমকে দূরে রাখার কারণ ব্যাখ্যা করে বিজেপির এক শীর্ষনেতা আজ বলেন, ‘‘সর্দার পটেল থেকে মোরারাজি দেশাই, সকলকেই দিল্লি ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ করেছে। সে জন্য মোদীজিরও ধারণা, তাঁর মতো দেহাতি গুজরাতি নেতাকে অভিজাত সংবাদমাধ্যম গ্রহণ করতে রাজি নয়।’’ যদিও জনসংযোগ বিশেষজ্ঞ দিলীপ চেরিয়ানের মতে, ‘‘এক একজন রাজনৈতিক নেতার এক একরকম স্টাইল। কিন্তু সংবাদমাধ্যমকে দূরে সরিয়ে রাখা মানে যে মানুষের থেকে দূরে সরে যাওয়া, এটা ক্ষমতাসীন নেতারা বুঝতে পারেন না।’’ সাংবাদিক নিহাল সিংহ আবার বলেন, ‘‘আসলে স্বরচিত দূরত্ব রচনা করে নিজের তৈরি এক লৌহবর্মের মধ্যে বসবাস করেন মোদী। মানুষের সঙ্গে প্রত্যক্ষ যোগাযোগ না-রেখে এক ধরনের ভার্চুয়াল রিয়ালিটিতে থাকার জন্যই হয়তো তাঁর ভাবমূর্তি সজীব।’’

পাল্টা বক্তব্য, ইতিহাসবিদ ইরফান হাবিবের। তিনি বলেন, ‘‘হো চি মিন গ্রামের বাড়িতে আদুড় গায়ে খাটিয়ায় বসে মানুষের সঙ্গে মিশতেন। তিনি ভিয়েতনামের মহানায়ক ছিলেন। অথচ আমজনতা তাঁকে ঘরের লোক বলেই মনে করত।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE