Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
ঠান্ডা বিপদ

নরম বোতলে নরম পানীয়ে বিষ, সংসদে জানাল কেন্দ্র

ম্যাগির পরে এ বার ঠান্ডা পানীয়। দু’টি বহুজাতিক সংস্থার তৈরি পাঁচটি নরম পানীয়ের নমুনাতে অতিরিক্ত সিসা, ক্যাডমিয়াম, ক্রোমিয়ামের মতো ক্ষতিকর রাসায়নিক পাওয়া গিয়েছে বলে রাজ্যসভায় জানাল কেন্দ্র।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৩ নভেম্বর ২০১৬ ০৩:০২
Share: Save:

ম্যাগির পরে এ বার ঠান্ডা পানীয়।

দু’টি বহুজাতিক সংস্থার তৈরি পাঁচটি নরম পানীয়ের নমুনাতে অতিরিক্ত সিসা, ক্যাডমিয়াম, ক্রোমিয়ামের মতো ক্ষতিকর রাসায়নিক পাওয়া গিয়েছে বলে রাজ্যসভায় জানাল কেন্দ্র। মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ফগ্গন সিংহ কুলস্তে এক লিখিত জবাবে জানান, ‘স্প্রাইট’, ‘মাউন্টেন ডিউ’, ‘সেভেন আপ’, ‘পেপসি’ ও ‘কোকা কোলা’— এই পাঁচটি ঠান্ডা পানীয়ের নমুনা জমা দেওয়া হয়েছিল কলকাতার ন্যাশনাল টেস্ট হাউসে। সেখানে পরীক্ষাতেই ওই সব পানীয়ে অতিরিক্ত সিসা, ক্যাডমিয়াম ও ক্রোমিয়াম ধরা পড়েছে।

ভারতে দু’টি বহুজাতিক সংস্থার তৈরি করা ঠান্ডা পানীয়ে পাঁচ রকম বিষাক্ত পদার্থ (টক্সিন) ধরা পড়েছে কি না, এই মর্মে একটি প্রশ্ন জমা পড়েছিল রাজ্যসভায়। সেই প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে কুলস্তে ওই কথা বলেন। শারীরবিজ্ঞানীরা বলছেন, ক্যাডমিয়াম, সিসা, ক্রোমিয়ামের মতো ভারী ধাতু শরীরে অতিরিক্ত পরিমাণে জমা হলে তা বিষের কাজ করে। ওই বিষক্রিয়ায় ফুসফুসের ক্যানসার পর্যন্ত হতে পারে। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের একটি সূত্র বলেন, কাচের ছাড়া অন্য কোনও রকম বোতলে ঠান্ডা পানীয়, ওষুধ ইত্যাদি ভরা হলে বোতলের ভিতরের গায়ে অতিরিক্ত মাত্রায় ভারী ধাতু জমা হয় বলে বিভিন্ন মহল থেকে অভিযোগ উঠেছিল। সেই অভিযোগের সারবত্তা খতিয়ে দেখতে গত বছরের এপ্রিলে ওই সব পানীয়ের নমুনা পরীক্ষা করার জন্য কলকাতার অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব হেলথ অ্যান্ড হাইজিনকে নির্দেশ দিয়েছিল কেন্দ্র। সেখান থেকে নমুনা যায় ন্যাশনাল টেস্ট হাউস।

সূত্রটির বক্তব্য, পরীক্ষায় দেখা গিয়েছে, ওই পাঁচ রকম ঠান্ডা পানীয়ের ‘পেট বট্ল’ (চলতি কথায় যাকে আমরা প্লাস্টিকের বোতল বলি) থেকে ক্ষতিকর পদার্থ নির্গত হচ্ছে। তাপমাত্রা যত বাড়ছে, ক্ষতিকর ধাতুর পরিমাণও তত বাড়ছে। বোতল তৈরির কাঁচামালের সঙ্গে পানীয়ের রাসায়নিক বিক্রিয়াতেই এমন হচ্ছে বলেই পরীক্ষায় ইঙ্গিত।

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের শারীরবিজ্ঞানের এক শিক্ষক বলেন, যে কোনও ভারী ধাতু শরীরে অতিরিক্ত পরিমাণে ঢুকলে শারীরবৃত্তীয় নানা প্রতিক্রিয়া হয়। বিশেষ করে স্নায়ুতন্ত্র, ফুসফুস এবং রক্তের উপরে তা বিরূপ প্রভাব ফেলে। রক্তে অতিরিক্ত সিসা মস্তিষ্কে জলের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। স্নায়ুতন্ত্রের স্বাভাবিক কাজকর্ম তাতে ব্যাহত হয়। অ্যানিমিয়াও অতিরিক্ত সিসার একটি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। অতিরিক্ত সিসা কিডনির মাধ্যমে শরীর থেকে বেরোতে চায়। তাতে কি়ডনির উপরেও চাপ পড়ে। রক্তে সিসার পরিমাণ অতিরিক্ত হারে বেড়ে গেলে কিডনি বিকল হওয়ারও আশঙ্কা থাকে।

রক্তে ক্যাডমিয়ামের পরিমাণ অতিরিক্ত হয়ে গেলে তা হিমোগ্লোবিনের রাসায়নিক গঠনই বদলে দেয়। হিমোগ্লোবিনের লোহার জায়গা নিয়ে নেয় ক্যাডমিয়াম। এর ফলে শরীরে অক্সিজেন বহন ক্ষমতা কমে যায়। বিভিন্ন কোষে পর্যাপ্ত অক্সিজেন ঢুকতে পারে না। ফলে মস্তিষ্ক, কিডনি, ফুসফুসের মতো গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলির স্বাভাবিক কাজকর্ম নষ্ট হয়। শারীরবিজ্ঞানীদের অনেকেরই আশঙ্কা, কিছু কিছু ক্ষেত্রে ক্যাডিয়ামের বিষক্রিয়ায় ফুসফুসের ক্যানসার পর্যন্ত হতে পারে।

অতিরিক্ত মাত্রার ক্রোমিয়াম আবার খাদ্যনালীর কোষের রক্তজালিকাগুলি ফাটিয়ে দিয়ে রক্তক্ষরণ ঘটাতে পারে বলে জানিয়েছেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের শারীরবিজ্ঞানের এক শিক্ষক। তিনি বলেন, রঙের কারখানায় যাঁরা কাজ করেন, তাঁদের অনেকেরই শরীরে ক্রোমিয়াম বিষক্রিয়া হয়। তার জেরে লোহিত রক্তকণিকা ভেঙে যেতে পারে, কিডনির কাজকর্ম বিপর্যস্ত হতে পারে এবং ফুসফুসের ক্যানসারও হতে পারে। তবে এই বিষক্রিয়া কতটা গুরুতর হবে, তা নির্ভর করে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির শারীরিক অবস্থার উপরে।পাঁচটি ঠান্ডা পানীয়ের নমুনায় সিসা, ক্যাডমিয়াম এবং ক্রোমিয়ামের মতো ভারী ধাতু অতিরিক্ত পরিমাণে মিললেও ওই পানীয়গুলির উৎপাদন ও বিক্রি বন্ধ হবে কি না, সে বিষয়ে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী এ দিন কিছু বলেননি। প্রশ্ন উঠেছে, ওই সমস্ত ঠান্ডা পানীয় তো কাচের বোতলেও বিক্রি হয়। তা হলে কি কাচের বোতলের পানীয় নিরাপদ? একটি সরকারি সূত্রের বক্তব্য, অভিযোগ এসেছিল পেট বট্ল নিয়ে। তাই এ ক্ষেত্রে শুধু ওই ধরনের বোতলে ভরা পানীয় নিয়েই পরীক্ষা করা হয়েছিল। কাচের বোতল নিয়ে পরীক্ষা করা হয়নি।

এই পাঁচটি ঠান্ডা পানীয় যারা তৈরি করে— সেই কোকা কোলা এবং পেপসির কাছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর ঘোষণা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়েছিল। দুই সংস্থার তরফেই জানানো হয়, কেন্দ্রের বক্তব্য খতিয়ে দেখে তারা প্রতিক্রিয়া জানাবে। পরে পেপসিকো ইন্ডিয়ার তরফে এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘‘এই সমস্ত রিপোর্ট ভিত্তিহীন। আমাদের সমস্ত পণ্যে ভারী ধাতু ব্যবহারের ক্ষেত্রে ভারতের ফুড সেফটি অ্যান্ড স্ট্যান্ডার্ডস রেগুলেশনস-এর নির্ধারিত মাত্রা বজায় রাখা হয়।’’ কোকা কোলার তরফে অবশ্য মাঝরাত পর্যন্ত কোনও প্রতিক্রিয়া আসেনি।

নজরে দুই সংস্থার পাঁচটি ঠান্ডা পানীয়

মিলেছে সিসা, ক্রোমিয়াম, ক্যাডমিয়াম

পেট বট্‌লে রাখা পানীয়ে তৈরি হচ্ছে এমন রাসায়নিক, বলছে পরীক্ষা

কাচের বোতলের পানীয় নিরাপদ কি না, সেই পরীক্ষা হয়নি

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Poison cold drinks
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE