আরতি: চলছে সন্ধিপুজো। দিল্লির মিন্টো রোড পূজা সমিতি। নিজস্ব চিত্র
পুজোর ঢাকে ভোটের কাঠি!
ফিতে কাটার কাজ শেষ। অথচ রাজনীতিতে মানুষের ভিড় শেষ কথা বলে। তাই জনগণেশের মধ্যে পৌঁছতে নাওয়া-খাওয়া ভুলে মণ্ডপে মণ্ডপে ঘুরছেন নেতা-মন্ত্রীরা। অষ্টপ্রহর নিরাপত্তার ঘেরাটোপে আটকে থাকা রাজনীতিকরা মানুষের মাঝে নেমে সেরে নিচ্ছেন প্রয়োজনীয় জনসম্পর্কের কাজটা। বছর ঘুরলেই ভোট। তাই নিক্তিতে মেপে নিচ্ছেন জনপ্রিয়তার পারদের ওঠানামাটুকু। আপাতত তাই ভীষণ ব্যস্ত মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবাল-উপমমুখ্যমন্ত্রী মণীশ সিসৌদিয়া, বিজেপির মীনাক্ষি লেখি-হর্ষবর্ধনেরা।
হবে নাই বা কেন। দিল্লিতে সংখ্যার বিচারে পঞ্জাবিদের পরেই বাঙালিরা। আর তাই বঙ্গ ভোটারদের মন জিততে চিত্তরঞ্জন পার্ক থেকে লক্ষ্মীবাই নগরের শিবশক্তি মন্দির— কেজরীবালের লক্ষ্য একটি পুজোও যাতে বাদ না যায়। মণীশ সিসৌদিয়ার পটপরগঞ্জ বিধানসভা ক্ষেত্রেই রয়েছে কমপক্ষে ডজন খানেক পুজো। আপ শিবির বলছে, একটি পুজোও ‘মিস’ করেননি উপমুখ্যমন্ত্রী। রুটিন বেঁধে ঘুরে এসেছেন। পুজো কমিটির অভাব-অভিযোগ শুনেছেন। সমস্যা সমাধানের প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন। পরোক্ষে চলছে ভোটের প্রচারও। অন্য দিকে মণ্ডপে বিজ্ঞাপনের ব্যানারে হাতজোড় করে সহাস্য উপস্থিতি বিজেপির মীনাক্ষি লেখি, মনোজ তিওয়ারিদের। যেন ভোট ভিক্ষায় নেমে পড়েছেন এখন থেকেই।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহের ছেলে পঙ্কজ আবার নয়ডা কালী বাড়ি এলাকার বিধায়ক। তাই সপ্তমীর রাতেই পাশে থাকার বার্তা দিতে ঘুরে এসেছেন নয়ডার সবচেয়ে প্রাচীন পুজোটি। একই ভাবে ওই নয়ডার সপ্তর্ষি সংঘ কিংবা নয়ডার সেক্টর ১০০-র এলবিএসএসের স্থানীয়দের কাছে পৌঁছতে নেতা-নেত্রীর বুড়ি ছোঁয়ার তালিকায় বাদ যাচ্ছে না কোনও মণ্ডপই। পিছিয়ে নেই বাংলার সাংসদেরাও। কংগ্রেসের অধীর চৌধুরী থেকে বিজেপির বাবুল সুপ্রিয়— সকলেই সক্রিয় দিল্লির পুজোতে।
রাফাল ও পেট্রো পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি— দুই অস্ত্রে মোদীকে হারানোর অঙ্ক কষছেন রাহুল গাঁধী। এ নিয়ে নিত্যদিনই সরব তিনি। কিন্তু পৌঁছতে হবে আরও বেশি মানুষের কাছে। সহজ করে বুঝিয়ে দিতে হবে, মোদী সরকারের দুর্নীতি। তাই বেছে নেওয়া হয়েছে পুজো মণ্ডপগুলিকেই। নয়ডা থেকে দিল্লি— বেশ কিছু পুজো মণ্ডপে কংগ্রেসের লাগানো মোদী বিরোধী পোস্টার-ব্যানারের সামনে দু’মিনিট দাঁড়িয়ে পড়ছেন অনেকেই। উঠছে প্রশ্ন। বিতর্ক। যা উৎসাহিত করছে কংগ্রেসকে।
দুর্গা পুজোই শেষ নয়! ছোট-বড় মিলিয়ে কয়েকশো রামলীলা কমিটি রয়েছে দিল্লি ও রাজধানী সংলগ্ন এলাকায়। রামলীলা ময়দান তো রয়েছেই, ফি বছর ভিড়ে-ভিড়াক্কার থাকে লালকেল্লার মাঠে হওয়া লব কুশ কমিটির রামলীলা। হর্ষবধনের মতো কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা দিল্লির বিজেপি সাংসদ আবার নবরাত্রির উপবাসের মধ্যেই নেমেছেন রামলীলা নাটকের চরিত্রে। জনকের চরিত্রে। ভোটের বছর বলেই কি রামলীলার জনসংযোগ? পূর্ব দিল্লির পূর্বাচল পুজো কমিটির উদ্বোধনে দাঁড়িয়ে হাসছেন হর্ষবর্ধন। জানা গেল, ছোট বয়স থেকেই রামলীলার মঞ্চ দাপিয়ে বেড়িয়েছেন কেন্দ্রীয় বিজ্ঞানমন্ত্রী। দিল্লির আরেক সাংসদ মনোজ তিওয়ারিও পিছিয়ে নেই। অভিনেতা তথা সাংসদের কপালে জুটেছে অঙ্গদের চরিত্র। ল্যাজ লাগিয়ে লম্ফঝম্ফ করে মঞ্চ কাঁপাতে ঘাম ফেলে রিহার্সলে ব্যস্ত তিনিও।
সব মিলিয়ে উৎসবের মরশুমকে কাজে লাগিয়ে ভোট-প্রস্তুতির সলতে পাকানো শুরু করে দিয়েছেন দিল্লির রাজনীতিকরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy