Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
Pakistan

পলিটিক্স, পর্নোগ্রাফি, পাকিস্তান, এই তিন ‘পি’ ঘুরছে দেশের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে!

পলিটিক্স অর্থাৎ রাজনীতি, পর্নোগ্রাফি, আর পাকিস্তান। মাত্র তিনটে শব্দ। মাঝের শব্দটার সঙ্গে প্রথম শব্দ রাজনীতির কোনও সংযোগ থাকার তো কথাই নয়

অঙ্কন: শৌভিক দেবনাথ

অঙ্কন: শৌভিক দেবনাথ

সংবাদ সংস্থা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৫ মার্চ ২০১৯ ১৫:২৩
Share: Save:

পলিটিক্স অর্থাৎ রাজনীতি, পর্নোগ্রাফি, আর পাকিস্তান। মাত্র তিনটে শব্দ। মাঝের শব্দটার সঙ্গে প্রথম শব্দ রাজনীতির কোনও সংযোগ থাকার তো কথাই নয়। শব্দের ভারটাই আলাদা। যদিও পাকিস্তান শব্দের সঙ্গে রাজনীতির একটা সম্পর্ক রয়েছে। কিন্তু পর্নোগ্রাফি? কীভাবে মিলেমিশে গেল এই তিন শব্দ?

আপামর জনসাধারণের ‘উদ্ভট’ নেটদুনিয়ায় আপনাকে স্বাগত। পুলওয়ামার হামলার পর থেকেই বেশ কিছু হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে শুধু দুটি শব্দই ঘুরে ফিরে এসেছে। বেশ কিছু পাকিস্তানি নম্বর (আইএসডি কোড +৯২) ওই গ্রুপে ঘোরাফেরা করছে। রাওয়ালপিণ্ডি বা করাচির নম্বর রয়েছে এর মধ্যে, বলছে ট্রুকলার। এ ছাড়াও ঘুরছে ‘কল গার্লস প্রাইভেট নাম্বার’। মাল্টিলেভেল মার্কেটিং স্কিমের অংশই নাকি এগুলি। রাশিয়ার বেশ বেশ কিছু ‘পর্ন বটস’-ও ঘুরছে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে।

কখনও বা পুলওয়ামা হামলার পরই ‘হিন্দু যুব বাহিনী’-র মতো দক্ষিণপন্থী সংগঠন পাকিস্তানের তুলোধোনা করেছে বিভিন্ন হোয়াটসঅ্যাপ স্টেটাসে। জাতীয়তাবাদী বেশ কিছু সংগঠনের ‘নকশে সে পাকিস্তান কো মিটানা হ্যায়’ পোস্টে ছেয়ে গিয়েছে সোশ্যাল মিডিয়া।

আরও পড়ুন: বোফর্সের চেয়েও শক্তিশালী এই দেশি কামান থেকে ছোড়া যায় মিনিটে ছ’টা গোলা!​

ভারতীয় বায়ুসেনার উইং কমান্ডার অভিনন্দন বর্তমানকে পাক সেনাবাহিনী গ্রেফতার করার পর তাঁর রক্তাক্ত চেহারার ছবি পোস্ট করে বলা হয়েছে, এ জাতীয় ছবি শেয়ার না করাই ভাল। তাঁর ফিরে আসার প্রার্থনার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ‘পাকিস্তান জিন্দাবাদ’ স্লোগানও। ওয়াঘা সীমান্ত হয়ে তিনি ফেরার পর সোশ্যাল মিডিয়া ছেয়ে গিয়েছে তাঁকে নিয়ে লেখা পোস্ট, কবিতা ও ছবিতে। কোথাও পাকিস্তান, কোথাও বা রাজনীতি মিলেমিশে গিয়েছে সোশ্যাল মিডিয়াগুলোয়।

আরও পড়ুন: হিন্দুরা গোমূত্র পান করেন, বিতর্কিত মন্তব্যের জন্য পাক মন্ত্রীকে সতর্ক করল ইমরানের দল​

সুপ্রভাত মেসেজের পরিবর্তে গত ১৫ দিন জয় শ্রীরাম ধ্বনি দিয়ে শুরু হয়েছে হোয়াটসঅ্যাপ জগতের সকাল, নেটদুনিয়ার বিশেষজ্ঞরা বলছেন এমনটাই। শেয়ার চ্যাট, হেলো। হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুক, টুইটারে বিজেপি ও বিজেপিবিরোধী দলগুলির কর্মীরা আরও বেশি সক্রিয় হয়েছেন গত ১৫ দিনে। পাকিস্তানকে উল্লেখ করে ঘৃণা, বিদ্বেষের মিম ছড়িয়ে পড়েছে বিভিন্ন গ্রুপে। এক রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ বলেন, ২০১৮ সালের অক্টোবর থেকে বিজেপি, কংগ্রেস, শিবসেনা, এনসিপি, আম আদমি পার্টি, সমাজবাদী পার্টির কর্মী-সমর্থকদের প্রায় ৮০-১০০টি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের উপর সমীক্ষা চালানো হয়েছিল। সেখানে মধ্যপ্রদেশ, হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থান, ছত্তিশগড়, দিল্লি, মহারাষ্ট্র, পশ্চিমবঙ্গ, কর্নাটক—এই রাজ্যগুলির বাসিন্দাদের মন্তব্য বা পোস্টই সবচেয়ে বেশি ঘুরেছে নেটদুনিয়ায়।

দক্ষিণপন্থী সংগঠনের থেকেও কোনও কোনও ক্ষেত্রে কংগ্রেসের মতো বিরোধী দলের সদস্যরা পাকিস্তান শব্দটা বেশি ব্যবহার করেছেন। লো প্রোফাইল তবে ‘হাইলি অ্যাক্টিভ’ বা অতি সক্রিয় এই গ্রুপগুলির কর্মী-সমর্থকরা। বলা ভাল হোয়াটসঅ্যাপ আর্মি। তবে রাজনীতি আর পাকিস্তান এই দুটি শব্দই ঘুরেফিরে এসেছে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপগুলোয়।

আরও পড়ুন: ৮৫০০ রহস্যজনক লেনদেন, সন্ত্রাসে অর্থ জোগান নিয়ে পাকিস্তানকে সতর্কবার্তা

নির্বাচন যত এগোচ্ছে, এই গ্রুপগুলির ভূমিকা তত বেশি জরুরি হয়ে উঠছে। ভারতের নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে ‘হোয়াটসঅ্যাপ আর্মি’ জানিয়েছেন নেটদুনিয়ার এক বিশেষজ্ঞ। ২০১৮ সালের নভেম্বর থেকেই শুরু হয়েছে শুরু হয়েছে ‘পলিটিক্যাল স্প্যামিং’। রাজনৈতিক দলগুলি নতুন নম্বর ব্যবহার করছে, গ্রুপ তৈরি করছে, অচেনায় ব্যক্তিদের গ্রুপে সংযুক্ত করে ‘ইনভিটেশন’ পাঠাচ্ছে দলে যোগদানের, দলকে সমর্থন করার। তবে এখন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে, ‘ওয়ান ইনভাইট লিঙ্ক অ্যাট আ টাইম’।

অপর এক নেটবিশেষজ্ঞ সংবাদ সংস্থাকে বলেন, নমো মিশন ২০১৯ (লোকেশন) নামে দশটি গ্রুপ রয়েছে অন্ততপক্ষে। কিন্তু সবক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোর হাতে এর নিয়ন্ত্রণ থাকে না। বেশির ভাগ পাবলিক গ্রুপই সহজেই পাওয়া যায়, যোগদান করা যায়। তবে গত ছয় মাসে হোয়াটসঅ্যাপে কোনও একটি লিঙ্ক একবারে পাঁচটি গ্রুপের বেশি শেয়ার করা যায় না।

এ বার আসা যাক, পর্নোগ্রাফিক ভিডিয়োর কথায়। এই সংক্রান্ত কোনও লিঙ্ক কোনও গ্রুপে এলেই তা রিভোক করতে পারেন অ্যাডমিন। মূলত রাশিয়া, চিন, আমেরিকার বেশ কিছু নম্বর থেকে ছড়িয়ে পড়ছে এই পর্নোগ্রাফির লিঙ্ক।বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গ্রুপে যোগদান করা বা না করাটা নিজের ইচ্ছে। কিন্তু অনেক সময় অচেনা কোনও গ্রুপে ব্যবহারকারীকে অ্যাড করা হচ্ছে আচমকাই। এ বার এই গ্রুপ ছাড়ার আগেই কোনও তথ্য ফাঁস হয়ে গিয়েছে কি না, তা দেখছে সাইবার অপরাধ বিশেষজ্ঞরাও।

আরও পড়ুন: ইঞ্জিনিয়ার, ব্যবসায়ী, বিজেপি নেত্রী...ইনি রবীন্দ্র জাডেজার স্ত্রী

একটি রাজনৈতিক দলের প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ বলেন, নির্বাচনের মাত্র এক মাস আগে যে গ্রুপগুলি রাজনৈতিক দলের নামে তৈরি, তা প্রচারের কথা মাথায় রেখেই। তাতে আচমকা কোনওরকম লিঙ্ক চলে এলে তা ডিলিট করে দেওয়া হয়। এ ছাড়াও রয়েছে ‘পাকিস্তান প্রোবলেম’ নামের গ্রুপও। অদ্ভুতভাবে এই লিঙ্কেও রয়েছে পর্নোগ্রাফির লিঙ্কও।

আরও পড়ুন: ভারতের বর, পাকিস্তানের কনে, বিয়ে পিছল দুই দেশের টেনশনে

ভারতের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে পাকিস্তানের নম্বর আচমকা কী ভাবে চলে আসছে, তা নিয়েও সাইবার অপরাধ দমন বিভাগ কাজ করছে। ভারতীয় ভাষা পাকিস্তানের নাগরিকদের বোঝার কথা নয় এ কথা উল্লেখ করেই এক নেট বিশেষজ্ঞ বলেন, গুগল ট্রান্সলেটের যুগে কিছুই অসম্ভব নয়। গত ২৩ ডিসেম্বরই জয় বিজেপি সরকার নামে একটি গ্রুপে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ছবি আইকন হিসেবে ব্যবহার করে এক ব্যবহারকারী হোয়াটসঅ্যাপে লিঙ্ক পাঠায়। ইনভাইট লিঙ্কে জবরদস্তি বা রেপ-সেক্স ভিডিয়ো এ জাতীয় শব্দগুলি ব্যবহার করা হয়েছিল। এমনকি, এই গ্রুপে যোগ দিলে মহিলাদের ব্যক্তিগত নম্বর দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। ‘সব কা সাথ, সব কা বিকাশ’ নামে একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে চাইল্ড পর্নোগ্রাফির ভিডিয়ো শেয়ার করার অভিযোগও আসে। হোয়াটসঅ্যাপের এক মুখপাত্র সম্প্রতি জানান, রাজনীতি(পলিটিক্স), পর্নোগ্রাফি ও পাকিস্তান এই সংক্রান্ত অসংখ্য তথ্য বিনিময় হচ্ছে, এটা কেউ রিপোর্ট করলেই বোঝা সম্ভব। সে ভাবেই অ্যাকাউন্টে নিষেধাজ্ঞা জারি করা যেতে পারে। কিন্তু ব্যবহারকারী কী তথ্য ব্যবহার করেছেন, তা কখনও দেখা যায় না।

আরও পড়ুন: পাক জলসীমায় ঢোকার চেষ্টা করেছে ভারতীয় সাবমেরিন! দাবি ইসলামাবাদের

শেয়ার চ্যাট বা হেলো, টিকটক-এই প্ল্যাটফর্মগুলোয় নির্বাচনকে ঢাল করে বিদ্বেষমূলক পোস্ট ছড়ানো হচ্ছে, এমনটাও অভিযোগ এসেছে। উত্তরপ্রদেশ ও বিহারে ৫০-১০০ টাকায় এসডি কার্ড মিলছে ধর্ষণের ভিডিয়োর, হোয়াটসঅ্যাপে তা ছড়িয়ে পড়ছে, যেমন ছড়িয়ে পড়ছে পাকিস্তানের প্রতি ঘৃণা উদ্রেককারী পোস্টও, এমন অভিযোগও এসেছে।

আরও পড়ুন: পুলওয়ামার ত্রালে জঙ্গিদের ডেরা ভাঙতে সেনা অভিযান, নিকেশ দুই সন্ত্রাসবাদী

এক ডিজিটাল মিডিয়া প্রোফেশনাল বলেন, গ্রাম বা আধা-মফস্বল এলাকাকেই ‘টার্গেট’ করা হচ্ছে এ জাতীয় পোস্ট ছড়ানোর ক্ষেত্রে। ঘুরছে ইনভাইট লিঙ্কও, যেখানে রাজনীতির বিরোধী দলগুলির পরস্পরের প্রতি, পাকিস্তানের প্রতি বিদ্বেষমূলক পোস্টের মাঝেই ঘুরছে পর্নোগ্রাফিক ভিডিয়োর লিঙ্কও। নির্বাচনের আগে সবচেয়ে বড় অস্ত্র হোয়াটসঅ্যাপ, এ কথা অস্বীকার করতে পারছেন না নেট বিশেষজ্ঞরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE