রাষ্ট্রপতি পদ থেকে অবসরের পরে প্রণব মুখোপাধ্যায় আর সক্রিয় রাজনীতিতে আসবেন না বলে জানিয়েছেন শর্মিষ্ঠা মুখোপাধ্যায়।
প্রণব মুখোপাধ্যায়কে বিকল্প প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে সামনে রেখে ২০১৯-এ বিরোধীদের জোটে ভাঙন ধরাতে চাইছে বিজেপি তথা আরএসএস। যার মূল লক্ষ্য একটাই। প্রধানমন্ত্রীর পদে রাহুল গাঁধীর উত্তরণ আটকানো।
সেই চেষ্টায় জল ঢেলে দিলেন প্রণব-কন্যা শর্মিষ্ঠা মুখোপাধ্যায়। তাঁর দাবি, ‘‘রাষ্ট্রপতি পদ থেকে অবসরের পরে আমার বাবা আর সক্রিয় রাজনীতিতে আসবেন না।’’ সঙ্ঘের অনুষ্ঠানে যোগদানের ৭২ ঘণ্টা কেটে গিয়েছে। তবে নাগপুরে প্রণবের উপস্থিতির চুলচেরা বিচার চলছে কংগ্রেস, বাম, ইউপিএ-শরিক তথা বিজেপি-বিরোধী শিবিরে।
বিরোধী শিবিরের অনেকেই মনে করছেন, একের পর এক উপনির্বাচনে বিজেপির হার এবং মোদী-সরকারের জনপ্রিয়তার নিম্নমুখী গ্রাফ দেখে আরএসএস-এর মধ্যে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে, লোকসভা ভোটে মোদীর নেতৃত্বে বিজেপি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না-ও পেতে পারে। সে ক্ষেত্রে রাহুলের নেতৃত্বে বিকল্প সরকারের সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়। কিন্তু সরকার গড়তে কর্তৃত্ব জিইয়ে রাখতে চায় সঙ্ঘ। সেই কারণেই প্রণবকে বিকল্প প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সামনে রেখে, আঞ্চলিক দলগুলির সরকার গঠনে চেষ্টা করতে পারে আরএসএস।
আরএসএস-এর এই পরিকল্পনা খোলসা করে দিয়েছে শিব সেনা। শনিবার তাদের মুখপত্র সামনা-য় লেখা হয়, দিল্লির রাজনৈতিক করিডরে আলোচনা চলছে, বিজেপি লোকসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে ব্যর্থ হলে, প্রণব সর্বসম্মত প্রার্থী হতে পারেন। শিব সেনার নেতা সঞ্জয় রাউত রবিবার বলেন, ‘‘বিজেপির অন্তত ১১০টি আসন কমতে চলেছে। সঙ্ঘ এমন পরিস্থিতির জন্য তৈরি হচ্ছে, যেখানে বিজেপি সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলে প্রধানমন্ত্রী পদে প্রণব মুখোপাধ্যায়ের নাম তারা সামনে আনবে।’’ এর জবাবেই আজ শর্মিষ্ঠা দাবি করেন, রাউত যা-ই বলুন, তাঁর বাবা সক্রিয় রাজনীতিতে আসবেন না।
কিন্তু প্রণবের নেতৃত্বে মিলিজুলি সরকার হলে আরএসএস-এর কী লাভ? সিপিএমের মহম্মদ সেলিমের ব্যাখ্যা, ‘‘নয়ের দশকের মাঝামাঝি থেকেই আরএসএস জাতীয় সরকার তৈরির চেষ্টা করছে। প্রণববাবু প্রধানমন্ত্রী হলে ভাল হত, কংগ্রেস তাঁকে হতে দেয়নি, এই মতের শরিকরাও এতে আগ্রহী।’’ পাশাপাশি সিপিএম নেতার মতে, কর্পোরেট দুনিয়া প্ল্যান-বি, প্ল্যান-সি তৈরি রাখতে চায়। মোদী এলে কর্পোরেট জগতের ভাল। কিন্তু না হলে তাঁরা সকলের গ্রহণযোগ্য লোককে প্রধানমন্ত্রী চাইবে। আরএসএস সেই কারণেই প্রণবের নাম বলছে। জেডি(এস) নেতা দানিশ আলির অবশ্য যুক্তি, ‘‘সঙ্ঘের অনুষ্ঠানে প্রণববাবুর যাওয়াই উচিত হয়নি।’’
আরএসএস-এর এই পরিকল্পনা ভেস্তে দিতে শর্মিষ্ঠার পদক্ষেপে খুশি এআইসিসি-ও। কংগ্রেস নেতাদের যুক্তি, প্রথমে চন্দ্রশেখর রাওকে দিয়ে ফেডারেল ফ্রন্টের প্রস্তাব, তার পরে প্রণবকে সামনে রেখে বিকল্প সরকারের জল্পনা ভাসিয়ে বিরোধী জোটে ভাঙন ধরানোর চেষ্টা করছিল সঙ্ঘ। শর্মিষ্ঠা তাতে জল ঢেলে দিয়েছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy