রাকেশ আস্থানা এবং এ কে শর্মা
সিবিআই দ্বৈরথে ‘বিরক্ত’ প্রধানমন্ত্রী রাকেশ আস্থানাকে ফের গুজরাতেই ফেরত পাঠানোর কথা ভাবছেন।
আগামী ৩১ জানুয়ারি সিবিআইয়ের বর্তমান প্রধান অলোক বর্মা অবসর নেবেন। পরিস্থিতি যা দাঁড়িয়েছে, তাতে গুজরাত ক্যাডারের আমলা আস্থানাকে নতুন সিবিআই প্রধান করা কার্যত অসম্ভব। এক দিকে দুর্নীতির অভিযোগে বর্মা তাঁকে সাসপেন্ড করতে উদ্যোগী। অন্য দিকে, এফআইআর থেকে গ্রেফতারি এড়াতে আস্থানা আদালতে গিয়েছেন। সাত দিন সময়ও পেয়েছেন। কিন্তু এত কিছুর পরে তাঁকে সিবিআই প্রধান হওয়াটা হবে না বলেই মনে করা হচ্ছে।
আস্থানা এমনিতে প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। রাহুল গাঁধী আগের দিন তাই নিয়ে কটাক্ষও করেছেন। সূত্রের খবর, ভোটের আগে বিতর্ক সামাল দিতে আস্থানাকে এখন গুজরাত সরকারেরই কোনও গুরুত্বপূর্ণ পদে পাঠিয়ে দিতে চাইছেন মোদী। প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ের কিছু উপদেষ্টাও মনে করেন, এটাই বর্তমান পরিস্থিতিতে সরকারের কাছে উপযুক্ত সমাধানের রাস্তা।
তা হলে সিবিআইয়ের নতুন প্রধান কে হতে পারেন? কিছু দিন আগে গুজরাত ক্যাডারের আর এক অফিসার এ কে শর্মাকে সিবিআইতে নিয়ে এসে যুগ্ম অধিকর্তা পদে নিযুক্ত করেছিলেন বর্মা। এ কে শর্মাকে দিয়েই তিনি আস্থানার বিরুদ্ধে চাপ সৃষ্টি করেছেন। এ কে শর্মা কিন্তু নরেন্দ্র মোদীরও ঘনিষ্ঠ। মোদী যখন মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন, তখন শর্মা তাঁর নিরাপত্তার প্রধান দায়িত্বে ছিলেন। ফলে আস্থানার বদলে নতুন সিবিআই প্রধান এ কে শর্মাকে করার কথা ভাবছেন প্রধানমন্ত্রী, পিএমও সূত্রে এমন সম্ভাবনার কথা শোনা যাচ্ছে।
২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বর্মা সিবিআই প্রধান হন। তিনি একাধারে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালের ঘনিষ্ঠ ছিলেন। ডোভালের সুপারিশেই বর্মাকে সিবিআইয়ের দায়িত্ব দেন প্রধানমন্ত্রী। বর্মা আগে কোনও দিন সিবিআইয়ে কাজ করেননি। তিনি দিল্লি পুলিশের কমিশনার ছিলেন। তিনি তাঁর পছন্দের পাঁচ–ছ’জন অফিসারকে সিবিআইতে নিযুক্ত করেন। অন্য দিকে বর্মা থাকতে থাকতেই আস্থানাকে সিবিআইতে নিয়ে আসার পিছনে অমিত শাহের প্রভাব ছিল প্রবল। আস্থানা আসতেই সারদা থেকে শুরু করে মায়াবতীর ভাইয়ের আর্থিক কেলেঙ্কারির মতো গুরুত্বপূর্ণ তদন্তের ভার তাঁর হাতে তুলে দেওয়া হয়। কিন্তু বর্মা আর আস্থানার বনিবনা হয়নি।
মোদী-ঘনিষ্ঠ আস্থানা প্রথমে সিভিসি-র কাছে এবং ক্যাবিনেট সচিবের কাছে বর্মার বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে চিঠি দেন। তাতে বর্মা তাঁর পাল্টা জবাবে আস্থানার বিরুদ্ধে মইন কুরেশির কাছ থেকে টাকা তোলার অভিযোগ এনে একেবারে এফআইআর করে দেন। মোদী মন্ত্রিসভার এক বিশিষ্ট মন্ত্রী আজ বলেন, ‘‘সিবিআইয়ের এই অন্তর্কলহে প্রধানমন্ত্রী প্রথমে মাথা গলাতে চাননি। বোধহয় সেটাই সবচেয়ে ভুল হয়েছে। আস্থানাকে প্রশ্রয় দিতে গিয়ে পরিস্থিতি যে ব্যুমেরাং হয়ে যাবে, তা সম্ভবত বোঝেননি শীর্ষ নেতৃত্ব।’’
ডোভাল এখন বর্মাকে বোঝাচ্ছেন, আস্থানা যদি সিবিআই প্রধান না-হন এবং তাঁরই পছন্দের এ কে শর্মা যদি ওই পদে বসেন, তা হলে সমস্যা থাকা উচিত নয়। বরং কাদা ছোড়াছুড়ি বন্ধ করে সিবিআইয়ের মতো প্রতিষ্ঠানকে বাঁচানো জরুরি। সুতরাং বিজেপির কৌশল হল, আস্থানাকে বলির পাঁঠা করে সঙ্কট থেকে বেরিয়ে আসা।
যদিও সেটাও মসৃণ ভাবে করা যাবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। কারণ সিবিআইয়ে শর্মার থেকে প্রবীণ অফিসারেরা রয়েছেন। এর আগে অলোক বর্মাকে ডিরেক্টর করার সময়েও আরও অনেকে পদপ্রত্যাশী ছিলেন। তাঁদের ডিঙিয়েই অলোককে বেছে নেন মোদী। এ বার আবার বাকিদের বঞ্চিত করে এ কে শর্মাকে মাথায় বসালে সিবিআইয়ে নতুন অন্তর্কলহ দেখা দিতে পারে। উপরন্তু বিরোধীরাও রাজনৈতিক নিয়োগ হচ্ছে বলে হইচই বাধাতে পারেন। শুধু তাই নয়। অলোক-আস্থানা বিরোধে ইতিমধ্যে শর্মার নামও জড়িয়ে গিয়েছে। সিবিআইয়ের সন্দেহের তালিকায় থাকা লোকজনের সঙ্গে অংশীদারিতে শর্মা পরিবারের ব্যবসায়িক সম্পর্ক রয়েছে বলে সিভিসি-র কাছে অভিযোগ এনেছেন আস্থানাই। ফলে সিবিআই জট নিয়ে ভালই গেরো হয়েছে মোদীর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy