Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

প্রচারে এলেও যুদ্ধে এখনই নয় প্রিয়ঙ্কা গাঁধী

জলে নামবেন। তবে ভিজবেন না! ধার যেন এতটুকু না কমে দলের শেষ ব্রহ্মাস্ত্রটির! অনেক অঙ্ক কষে উত্তরপ্রদেশের ভোটে তাঁকে এমন ভাবেই কাজে লাগাতে চাইছে দল।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১১ জুন ২০১৬ ০৯:১৪
Share: Save:

জলে নামবেন। তবে ভিজবেন না! ধার যেন এতটুকু না কমে দলের শেষ ব্রহ্মাস্ত্রটির! অনেক অঙ্ক কষে উত্তরপ্রদেশের ভোটে তাঁকে এমন ভাবেই কাজে লাগাতে চাইছে দল।

প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরা। চেহারাছবি, চলনে-বলনে ঠাকুমা ইন্দিরা গাঁধীর ছায়া। তাঁতের শাড়ি পরা ধরনটিতেও যেন সেই রকম আভিজাত্য। রাজীবকন্যা মুখ খুললে দলের প্রবীণরা অনেকেই তাঁর মধ্যে দেখতে পান ইন্দিরার দৃঢ়তা! রণকৌশল ঠিক করার ভার পেয়ে প্রশান্ত কিশোরও তাই প্রস্তাব রেখেছিলেন রাহুল গাঁধী যদি রাজি না হন তবে উত্তরপ্রদেশের ভোটে মুখ করা হোক প্রিয়ঙ্কাকেই। কিন্তু লোকসভায় মাত্র ৪৫ জন সাংসদকে নিয়ে জাতীয় রাজনীতিতে দল যখন তলানিতে, মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে একের পর এক রাজ্য, সেই অবস্থায় দলের শেষ দু’টি বড় অস্ত্রকে রাজ্য রাজনীতির গন্ডিতে নামিয়ে আনতে রাজি হয়নি দল। এমনকী খোদ সনিয়া গাঁধীও।

অথচ উত্তরপ্রদেশের ভোটে ভাল ফল করাটাও যে কতটাই জরুরি সেটা গাঁধী পরিবারের চেয়ে ভাল আর কে জানে! এই অবস্থায় দাদা রাহুলের সঙ্গে প্রিয়ঙ্কাকেও প্রচার যুদ্ধে নামাতে মনস্থ করেছে দল। এত দিন শুধু দাদার অমেঠী ও মায়ের রায়বরেলী কেন্দ্রেই ভোটপ্রচার সামলাতে দেখা দেখা গিয়েছে রাজীবকন্যাকে। দলীয় সূত্রের মতে, এ বারে তিনি গোটা রাজ্যেই দাদার সঙ্গী হতে পারেন প্রচারে। দলের অন্দরে মোটামুটি এমনটা ঠিক হলেও অবশ্যই চূড়ান্ত সিদ্ধান্তটি নেবেন সনিয়াই।

বহু দিন ধরেই প্রিয়ঙ্কাকে সক্রিয় রাজনীতিতে আনা নিয়ে দলের মধ্যেই দাবি উঠেছে। কিন্তু রাহুলকেই দলের ব্যাটন তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছেন কংগ্রেস সভানেত্রী। আনুষ্ঠানিক অভিষেকটি ঝুলে আছে শুধুই উপযুক্ত সময়ের অপেক্ষায়। এখন প্রিয়ঙ্কা ভোটের ময়দানে নেমেই যদি ধারে, ঝাঁঝে ও উজ্জ্বলতায় ছাপিয়ে যান দাদাকে! আশঙ্কাটা অমূলকও নয়, মনে করছেন কংগ্রেসের অনেক নেতা। সে কারণে বিশেষ একটি কৌশল নেওয়া হচ্ছে। ভাবনাটি এ রকম, রাহুল বা প্রিয়ঙ্কা, কাউকেই মুখ্যমন্ত্রী পদের মুখ করার প্রশ্ন নেই। রাহুলের সেনাপতি হিসেবেই গোটা রাজ্যে প্রচার অভিযানে নামবেন প্রিয়ঙ্কা। কংগ্রেসের একটি সূত্র জানাচ্ছে, এই মুহূর্তে এমন কোনও পদক্ষেপ করা হবে না, যাতে প্রিয়ঙ্কার ছায়ায় ঢাকা পড়ে যান রাহুল। কিন্তু উত্তরপ্রদেশের মতো বড় রাজ্যের নির্বাচনে হাওয়া তুলতে প্রিয়ঙ্কাকে ব্যবহার করা যেতে পারে। আর সেটি হবে রাহুলের ‘পরিপূরক’ হিসেবেই। তাতে তিনটি লাভ।

এক, রাহুলকে ছাপিয়ে যাওয়ার আশঙ্কাটা থাকবে না এতে।

দুই, ভোট যুদ্ধে নেমেও চুল ভিজবে না প্রিয়ঙ্কার। উত্তরপ্রদেশে এ বারেও কংগ্রেসের ফল খারাপ হলে, কোনও ভাবেই তার দায় চাপবে না প্রিয়ঙ্কার ঘাড়ে।

তিন, অমেঠী-রায়বরেলীর গন্ডি পেরিয়ে গোটা রাজ্যে প্রচার করলে পরের লোকসভা নির্বাচনে উত্তরপ্রদেশ থেকেই লড়ার জমিও তৈরি করে রাখতে পারবেন প্রিয়ঙ্কা। যাতে সেই সময় সক্রিয় রাজনীতিতে আসার সিদ্ধান্ত হলে খানিকটা এগিয়ে থেকে শুরু করতে পারেন।

ভবিষ্যতে প্রিয়ঙ্কা রাজনীতিতে এলে কোনটি তাঁর জন্য উপযুক্ত নির্বাচনী কেন্দ্র হতে পারে, তা নিয়েও আলোচনা চলছে কংগ্রেসের অন্দরে। প্রাথমিক আলোচনায় উঠে এসেছে অমেঠী কেন্দ্রটিই। এই মুহূর্তে অমেঠীর সাংসদ রাহুল। সেখানে স্মৃতি ইরানি গত লোকসভা নির্বাচনে ভাল টক্কর দিয়েছিলেন। রাহুলের জয়ের ব্যবধানও অনেকটা নামিয়ে এনেছিলেন। ভোটে হেরে যাওয়ার পরেও সেই কেন্দ্রে এখনও জমি আঁকড়ে রয়েছেন স্মৃতি। ফলে প্রিয়ঙ্কা অমেঠী থেকে দাঁড়ালে লড়াই হবে দুই মহিলার। সনিয়া শারীরিক অসুস্থতার জন্য আর ভোটে না লড়লে রাহুল রায়বরেলী কেন্দ্রে যেতে পারেন। কিন্তু কংগ্রেসেরই সূত্র বলছে, এই সবই এখনও ভাবনা-চিন্তার স্তরে রয়েছে। দলের মুখপাত্র মণীশ তিওয়ারি বলেন, ‘‘এ ধরনের যাবতীয় সিদ্ধান্ত নেবেন সনিয়া গাঁধী। কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে তা প্রকাশ্যে জানানো হবে।’’

অসমে-কেরলে সদ্য সরকার খোয়ানোর পরে রাহুলের নেতৃত্ব নিয়ে দলের মধ্যে ফের প্রশ্ন উঠেছে। বিরোধীরা তো সুযোগ পেলেই রাহুলকে কটাক্ষ করে যাচ্ছেন। বিজেপি নেতা-মন্ত্রীরা আকছারই বলেন, ‘‘রাহুল কংগ্রেসের দায়িত্ব নিলেই, বিজেপির ‘অচ্ছে দিন’ আসবে।’’ কিন্তু প্রিয়ঙ্কা যদি শেষ পর্যন্ত সক্রিয় রাজনীতিতে আসেন, তা হলে বিজেপির কৌশল কী হবে? বিজেপি বলছে, ওরা কী করবে নিজেরাই বুঝে উঠতে পারছে না। আর বিজেপি সভাপতি অমিত শাহের মন্তব্য, ‘‘আগে তো আসুন, তার পর দেখা যাবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Priyanka Gandhi election INC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE