Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Ashok Gehlot

গহলৌতেই আস্থা, রফার খোঁজ প্রিয়ঙ্কার

কংগ্রেস সূত্রের খবর, রাজস্থানের বিদ্রোহী উপমুখ্যমন্ত্রী সচিন পাইলটকে বোঝাতে প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরা তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন।

জয়পুরে নিজের বাসভবনে রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গহলৌত। সোমবার। পিটিআই

জয়পুরে নিজের বাসভবনে রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গহলৌত। সোমবার। পিটিআই

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৪ জুলাই ২০২০ ০৪:০১
Share: Save:

মরু-রাজ্যে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের চোরাবালিতে কংগ্রেস সরকারের তলিয়ে যাওয়া রুখতে অবশেষে সক্রিয় হল গাঁধী পরিবার।

কংগ্রেস সূত্রের খবর, রাজস্থানের বিদ্রোহী উপমুখ্যমন্ত্রী সচিন পাইলটকে বোঝাতে প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরা তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন। তাঁর ক্ষোভ কমাতে যাবতীয় অভিযোগ প্রিয়ঙ্কা মন দিয়ে শুনেছেন। রাহুল গাঁধী এ নিয়ে মুখ না-খুললেও কংগ্রেস সূত্রের খবর, তিনিও দূতের মাধ্যমে সচিনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। রাহুলের ঘনিষ্ঠ শিবির থেকে জানানো হয়েছে, সচিনের সঙ্গে রাহুলের ব্যক্তিগত সম্পর্ক মধুর। দু’জনের প্রায়ই কথাবার্তা হয়। দুজনেই একে অপরকে সম্মান করেন।

তবে সচিনের ক্ষোভ নিরসনের চেষ্টা হলেও, মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে অশোক গহলৌতকে সরিয়ে সচিনকে গদিতে বসানোর সম্ভাবনা কংগ্রেস নেতৃত্ব প্রথমেই খারিজ করে দিচ্ছেন। তবে মুখ্যমন্ত্রী-উপমুখ্যমন্ত্রীর মধ্যে একটা রফাসূত্র বার করার চেষ্টা হচ্ছে। সচিনের অভিযোগ, গহলৌত তাঁর সঙ্গে তুচ্ছ বিষয় নিয়েও রাজনীতি করছেন। সরকারি প্রকল্পের বিজ্ঞাপন থেকে তাঁর নাম বাদ যাচ্ছে। দলকে ক্ষমতায় ফেরাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিলেও, তাঁকে অপমান করা হচ্ছে। অর্থ বা স্বরাষ্ট্র দফতরের মতো গুরুত্বপূর্ণ দফতর গহলৌত নিজের হাতে রেখেছেন। এখন তাঁকে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি পদ থেকেও হটানোর চেষ্টা হচ্ছে। এরই মধ্যে কংগ্রেসের দল ভাঙানোর বিরুদ্ধে তদন্তে নেমে রাজস্থান পুলিশের পাঠানো নোটিস নিয়েও সচিন ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন। একই নোটিস মুখ্যমন্ত্রী, কংগ্রেসের মুখ্য সচেতকের কাছে গেলেও সচিনের নালিশ, দেশদ্রোহের আইনে এফআইআর করে শুরু করা তদন্তে তাঁকেই নিশানা করা হচ্ছে। তাঁর ফোনে সিআইডি আড়ি পাতছে।

আরও পড়ুন: কংগ্রেস হাইকমান্ডের কি আর দলের উপরে ‘কমান্ড’ নেই? প্রশ্ন তুলে দিল ‘বিদ্রোহ’

প্রিয়ঙ্কা-সচিনের আলোচনায় কোনও সমাধান বের হয়নি। রফাসূত্র হিসেবে সচিনের কাছে কংগ্রেস নেতৃত্বের প্রস্তাব, তিনিই রাজ্য সভাপতি ও উপমুখ্যমন্ত্রী পদে থাকবেন। অর্থ বা স্বরাষ্ট্রের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ দফতর সচিন বা তাঁর শিবিরের কাউকে দেওয়া যেতে পারে। সচিনকে কংগ্রেসের ওয়ার্কিং কমিটিতে নিয়ে আসা হতে পারে বলেও একটি সূত্রের দাবি। কিন্তু সচিনের মুখ্যমন্ত্রিত্ব মেনে নেওয়ার দাবি কংগ্রেস নেতৃত্ব মানতে নারাজ। দলীয় সূত্রের ব্যাখ্যা, সিংহ ভাগ বিধায়কের সমর্থন পোড়খাওয়া গহলৌতের সঙ্গে। তিনি ওবিসি সম্প্রদায়ের নেতা। উল্টো দিকে সচিন গুর্জর হলেও তাঁকে গুর্জর সম্প্রদায়ের একচ্ছত্র নেতা বলা যায় না।

আরও পড়ুন: লাদাখ: আজ আবার কথা চিনের সঙ্গে

আজ গহলৌত জয়পুরে মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবনে কংগ্রেস বিধায়কদের বৈঠক ডেকে দাবি করেছেন, তাঁর সঙ্গে ১০৭ জন বিধায়কের সমর্থন রয়েছে। ফলে ২০০ আসনের বিধানসভায় সরকার পতনের আশঙ্কা নেই। মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবনে ওই বৈঠকে সচিন ও রাজ্যের দুজন মন্ত্রী গরহাজির ছিলেন। কংগ্রেস, নির্দল ও বাইরে থেকে সমর্থনকারী দলের মোট ১৮ জন বিধায়ক ছিলেন না। বৈঠকের পর কংগ্রেসের পরিষদীয় দল গহলৌতের নেতৃত্বে আস্থা জানিয়ে প্রস্তাব পাশ করে। সেই সঙ্গে দাবি জানানো হয়, দলের ভাবমূর্তি কালিমালিপ্ত করার কাজে জড়িতদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হোক। বৈঠকের পরেই বিধায়কদের বাসে তুলে জয়পুরের একটি পাঁচতারা হোটেলে নিয়ে যাওয়া হয়।

উল্টো দিকে সচিনের ঘনিষ্ঠ এক নেতা বলেন, “গহলৌত সরকারের পাশে যথেষ্ট সংখ্যক বিধায়ক নেই। মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির উঠোন সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণের জায়গা নয়। রাজ্যপালের কাছে বিধায়কদের নিয়ে যাওয়া হচ্ছে না কেন?” রাজ্যের মন্ত্রী রমেশ মিনা জানিয়েছেন, তিনি সচিনের সঙ্গে রয়েছেন। বিজেপি এই বিষয়ে ‘ওয়েট অ্যান্ড ওয়াচ’ নীতি নিলেও আজ গহলৌতের বাড়িতে বৈঠকের সময়ই তাঁর ঘনিষ্ঠ দুই কংগ্রেস নেতা রাজীব অরোরা ও ধর্মেন্দ্র রাঠৌরের বাড়িতে আয়কর দফতর হানা দেয়। এর পর জয়পুরের ফেয়ারমন্ট হোটেলে হানা দেয় ইডি। ওই হোটেলেই কংগ্রেস বিধায়কদের রাখা হয়েছে। বিজেপির অভিযোগ, ওই হোটেলের আসল মালিক মুখ্যমন্ত্রী-পুত্র বৈভব গহলৌত। কংগ্রেসের অভিযোগ, বিজেপি নিজের এজেন্টদের নামিয়ে দিয়েছে।

সচিন এখনও ‘বিদ্রোহী’ অবস্থানে অনড় থাকলেও তাঁর শিবির একটি বিষয় স্পষ্ট করে দিচ্ছে। তা হল, সচিন কোনও ভাবেই বিজেপিতে যাচ্ছেন না। তাঁর ঘনিষ্ঠ শিবিরের ব্যাখ্যা, সচিনের স্ত্রী সারা কাশ্মীরের ফারুখ আবদুল্লার কন্যা, ওমর আবদুল্লার বোন। ৩৭০ রদের পর ফারুখ-ওমরকে দীর্ঘদিন জম্মু-কাশ্মীর প্রশাসন ঘরবন্দি করে রেখেছিল। এর পরেও সচিন বিজেপিতে যোগ দিলে তাঁকে প্রশ্নের মুখে পড়তে হবে। কংগ্রেস ছাড়লে তাই তাঁকে আঞ্চলিক দলই তৈরি করতে হবে। কিন্তু সোমবার সকালেও সচিনের শিবির যে ৩০ জন বিধায়কের সমর্থন দাবি করছিলেন, সেখান থেকে তাঁরা নিজেরাই সরে এসেছেন।

দিল্লি থেকে জয়পুরে পরিস্থিতি সামলাতে যাওয়া রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালা বলেন, “সচিন পাইলট ও অন্য বিধায়কদের জন্য দরজা সব সময় খোলা। পরিবারে মতান্তর হয়ই। কথা বলে তা মিটিয়ে নেওয়া যায়।” সচিন যে নিজের মুখে এখনও কংগ্রেসের বিরুদ্ধে একটি কথাও বলেননি, তা-ও মনে করিয়ে দিয়েছেন সুরজেওয়ালা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Ashok Gehlot Congress Priyanka Gandhi Vadra
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE