Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

বিরোধী জোটের পথে পয়লা কদম

লক্ষ্য ২০১৯। নরেন্দ্র মোদী সরকারের মাঝ বয়সে এসে জাতীয় রাজনীতির মোড় ঘোরাতে সংসদের বাইরে বিরোধী জোট তৈরির চেষ্টা শুরু হল। নোট বাতিলের সিদ্ধান্তের মিলিত বিরোধিতার সাংবাদিক বৈঠকে আজ একসঙ্গে সরব হলেন রাহুল গাঁধী, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মানুষের ভোগান্তি আর নোট বাতিলকে ‘মহা-দুর্নীতি’ আখ্যা দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর ইস্তফা চাইলেন মমতা।

দিল্লির কনস্টিটিউশন ক্লাবে সাংবাদিক বৈঠকের আগে রাহুল ও মমতা। মঙ্গলবার। — নিজস্ব চিত্র

দিল্লির কনস্টিটিউশন ক্লাবে সাংবাদিক বৈঠকের আগে রাহুল ও মমতা। মঙ্গলবার। — নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৮ ডিসেম্বর ২০১৬ ০৩:২৯
Share: Save:

লক্ষ্য ২০১৯। নরেন্দ্র মোদী সরকারের মাঝ বয়সে এসে জাতীয় রাজনীতির মোড় ঘোরাতে সংসদের বাইরে বিরোধী জোট তৈরির চেষ্টা শুরু হল। নোট বাতিলের সিদ্ধান্তের মিলিত বিরোধিতার সাংবাদিক বৈঠকে আজ একসঙ্গে সরব হলেন রাহুল গাঁধী, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মানুষের ভোগান্তি আর নোট বাতিলকে ‘মহা-দুর্নীতি’ আখ্যা দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর ইস্তফা চাইলেন মমতা। তাতে সুর মিলিয়ে রাহুল বিঁধলেন মোদীর দুর্নীতি নিয়ে। জোট গড়ার প্রথম কদমেই অবশ্য কাঁটা হয়ে রইল অনেক দলের অনুপস্থিতি। কংগ্রেসকে দুষে, কিংবা নিজ-নিজ রাজনৈতিক হিসেব কষেই এ দিনের উদ্যোগে সামিল হয়নি আপ, সমাজবাদী পার্টি, বিএসপি, এনসিপি ও বামেরা।

যদিও ২০১৯-এর লোকসভা ভোটকে পাখির চোখ করে মোদী-বিরোধিতায় অন্তত ৮টি দল যে এক ছাতার তলায় এল, এমনকী আলোচনার ভিত্তিতে একটি অভিন্ন ন্যূনতম কর্মসূচিও তৈরি করল, সেটাকেই বড় আন্দোলনের ভিত বলে মনে করছে সাংবাদিক বৈঠকে হাজির থাকা দলগুলি। কংগ্রেস, তৃণমূল, আরজেডি, ডিএমকে, জেডি(এস)-মতো দলের নেতারা এ দিন নোট-বাতিলের ভোগান্তি নিয়ে একসুরে ভোঁতা করে দিতে চাইলেন মোদীর ‘অচ্ছে দিন’-এর প্রতিশ্রুতি।

বিরোধী দলগুলিকে দিল্লিতে এই সাংবাদিক বৈঠকে আমন্ত্রণ জানানোর দায়িত্ব নিয়েছিলেন কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধীর রাজনৈতিক সচিব আহমেদ পটেল। মমতা ভেবেছিলেন, এ দিনের আলোচনা ও সাংবাদিক বৈঠকে সনিয়াই থাকবেন। অন্তত তিনি থাকলে আরও বিরোধী দলকে একসঙ্গে পাওয়া যাবে। সনিয়া কিন্তু এ দিন রাহুলকেই সামনে এগিয়ে দিলেন। যাতে বিরোধী শিবিরে তিনিই মধ্যমণি হয়ে উঠতে পারেন। আহমেদ পটেল আজ বলেন, ‘‘এক সপ্তাহের জন্য গোয়াতে গিয়েছেন সনিয়া। আজকের অনুষ্ঠানে তাঁর থাকার কথা ছিল না। ভবিষ্যতের অনুষ্ঠানগুলিতেও রাহুলই থাকবেন। দলের প্রতিষ্ঠা দিবসে আগামিকাল রাহুলই থাকবেন এআইসিসি দফতরে।

সওয়ালে-জবাবে

• জোট বাঁধার আগেই তো বিরোধী শিবিরে বড়সড় ফাটল। অর্ধেক এলই না।রবিশঙ্কর প্রসাদ

• সবাই একসঙ্গেই আছে। বাকিরা পরে আসবে।মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

• আমরা বিজেপি-আরএসএস নই যে, সব এক সুরে কথা বলবে!রাহুল গাঁধী

মমতা এ দিন তাঁর আপন ঝাঁঝে মানুষের ভোগান্তি নিয়ে বিঁধেছেন মোদীকে। নিজের ঘোষিত ৫০ দিনের সময়সীমার মধ্যে মানুষের ভোগান্তিতে ইতি টানতে না পারার জন্য ইস্তফাও চেয়েছেন মোদীর। রাহুল কিন্তু গত কয়েক দিনের মতো আজ ফের মোদীর ‘অতীত দুর্নীতি’ নিয়ে সরব হন। তাঁর বক্তব্য, হাওয়ালা কেলেঙ্কারির জৈন ডায়েরিতে শুধু নামের আদ্যক্ষর থাকায় ইস্তফা দিয়েছিলেন লালকৃষ্ণ আডবাণী। মোদীর তো নামই রয়েছে সহারার ডায়েরিতে। রাহুলের দাবি, দুর্নীতির অভিযোগ সত্যি বলেই প্রধানমন্ত্রী ‘অস্থির’ হয়ে উঠেছেন। চোখেমুখে চাপ স্পষ্ট। বাকি সব কিছুর জবাব দিলেও এটি নিয়ে মুখ খুলছেন না তিনি। একই ডায়েরিতে নাম থাকা সত্ত্বেও কংগ্রেসের শীলা দীক্ষিত নিরপেক্ষ তদন্তে আপত্তি করছেন না। এ কথা উল্লেখ করে কংগ্রেস সহসভাপতির প্রশ্ন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী কেন ব্যতিক্রম হবেন? সকলের আগে তাঁরই তো এগিয়ে আসা উচিত!

বিরোধী নেতারা জানেন, তাঁরা বললেও প্রধানমন্ত্রী ইস্তফা দিচ্ছেন না। কোনও তদন্তও হচ্ছে না অবিলম্বে। এই নীরবতাই রাহুলদের পুঁজি। এটা ঘটনা, রাহুলের আক্রমণকে উপেক্ষা বা কৌতুকে উড়িয়ে দেওয়ারই পথ নিয়ে চলেছেন মোদী। বড় জোর রাহুলের নাম না করে কটাক্ষ ছুড়েছেন, তিনি যে বক্তৃতা দিতে শিখছেন, সেটাই আনন্দের। আজও দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নিজে কোনও কথা বলেননি। রাজনৈতিক ভাবে পাল্টা আক্রমণে যেতে বিজেপি খুঁজছে বিরোধী শিবিরের ফাঁকফোকর।

মোদীর দুর্নীতি নিয়ে বিঁধতে উৎসাহী রাহুল। আর মমতা বেশি সরব হতে চান মানুষের ভোগান্তি নিয়ে। এই ফারাকের কথাটা অস্বীকারও করছেন না রাহুল-মমতারা। আর সে কারণেই ‘অভিন্ন ন্যূনতম কর্মসূচি’ তৈরি করে এগোনোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাঁরা। যদিও মোদী সরকারের মন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদের বক্তব্য, ‘‘জোট বাঁধার আগেই তো বিরোধী শিবিরে বড়সড় ফাটলধরল। অর্ধেক এলই না। আর অনভিজ্ঞ রাহুল প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করছেন, বাকি দলগুলি পাশে বসেও করেনি।’’ কংগ্রেসের প্রশ্ন, এ তো পাল্টা অভিযোগ মাত্র। দুর্নীতির জবাব তো এটা নয়!

আজ যে সব দল আসেনি, তাদের অনেকেরই অভিযোগ, আগাম আলোচনা করে তৈরি হয়নি ‘অভিন্ন ন্যূনতম কর্মসূচি’। তাই ভবিষ্যতে ফের সব দল একজোট হওয়ার আগে মোদী-বিরোধী অভিন্ন কর্মসূচি তৈরির কাজটি সেরে ফেলতে চাইছেন রাহুল-মমতা। কংগ্রেসের এক নেতা আজ বলেন, ‘‘এমন নয় যে, রাত পোহালেই ভোট। এখনও আড়াই বছর বাকি। কিন্তু আজ যেটি হল, সেটি ঐতিহাসিক। মোদী-বিরোধী জোটের যাত্রা শুরু হল। যেটুকু মতের ফারাক আজ দেখা গেল, অচিরেই তা দূর করা যাবে।’’ রাহুলের কথায়, ‘‘আমরা তো আর বিজেপি-আরএসএস নই যে, সব এক সুরে কথা বলবে!’’ আর মমতার কথায়, ‘‘সবাই একসঙ্গেই আছে। বাকিরা পরে আসবে।’’

দিল্লির কনস্টিটিউশন ক্লাব তার সত্তর বছরে অনেক বড় ইতিহাসের সাক্ষী হয়েছে। সেখানেই আজকের এই বিরোধী প্রয়াস তেমন কিছুরই পয়লা কদম কি না, বোঝা যাবে আড়াই বছর পর।

দেহরাদূনে প্রধানমন্ত্রী

মঙ্গলবার রাজধানীতে তাঁর নোট-নাকচের সিদ্ধান্ত নিয়ে বিরোধীরা যখন সরব, তখন দেহরাদূনে চারধাম যাত্রার নয়া সড়ক পথের শিলান্যাস অনুষ্ঠানে পাল্টা মুখ খুললেন নরেন্দ্র মোদী। ছবি: পিটিআই।

• নোট বাতিলে চোরেদের নেতারা সমস্যায় পড়েছে। তাই এই পদক্ষেপ নিয়ে কিছু লোক ক্ষুব্ধ।

• আমি নিজেকে চৌকিদার মনে করি। কালো টাকা আর কালো হৃদয়ের যে সব মানুষ দেশের সর্বনাশ করেছে তাদের মোকাবিলা করা আমার কর্তব্য।

• এখন দেরাজ আর মাদুরের নীচে রাখা কালো টাকা ব্যাঙ্কে জমা পড়েছে।

• আমি সৎ মানুষের ক্ষমতায়নের জন্য লড়ছি। নোট বাতিলে দেশের জঞ্জাল সাফ হচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE