Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪
Migrant Workers

শ্রমিকের যন্ত্রণা: রাহুলের খোঁচা, প্রলেপ মোদীর

বাড়িফিরতি পথে রেললাইনে ঘুমের মধ্যে পরিযায়ী শ্রমিক ও তাঁদের সঙ্গী পরিবারের সদস্যদের বেঘোরে কাটা পড়ার ছবি এখনও স্মৃতিতে টাটকা।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০২:১৭
Share: Save:

উন্নয়নের বাজনা বনাম পরিযায়ী শ্রমিকদের যন্ত্রণা। বিহারে কুর্সির লড়াই যে মূলত এই দুই বিষয়ে ভর করেই হতে চলেছে, তা স্পষ্ট মঙ্গলবার নরেন্দ্র মোদী আর রাহুল গাঁধীর তাল ঠোকাঠুকিতে।

লকডাউনের সময়ে কাজ খুইয়ে বাড়ির পথ ধরা কত জন পরিযায়ী শ্রমিক রাস্তাতেই মারা গিয়েছেন, সেই বিষয়ে কোনও তথ্য নেই বলে সোমবার সংসদে দাবি করেছে কেন্দ্র। জানিয়েছে, তেমন তথ্য রাখার রেওয়াজ না-থাকায় মৃতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার প্রশ্ন নেই। কোভিডের জেরে কত জন পরিযায়ী শ্রমিক কাজ হারিয়েছেন, সেই সম্পর্কেও সরকারের ঘরে পরিসংখ্যান না-থাকার কথা মেনে নিয়েছে শ্রম মন্ত্রক। অথচ বরাবরই এই ভিন্ রাজ্যে কাজে যাওয়া কর্মীদের একটি বড় অংশ বিহারের। কেন্দ্রও মেনেছে, লকডাউনের জেরে শুধু এই ভোটমুখী রাজ্যেই ফিরতে বাধ্য হয়েছেন অন্তত ১৩ লক্ষ পরিযায়ী শ্রমিক (সারা দেশে ১.০৪ কোটি)। যাঁদের পরিবারের চাপা ক্ষোভ ব্যালট বাক্সে অনেক হিসেব উল্টে দিতে পারে বলে আশায় বুক বাঁধছেন বিরোধীরা।

এ দিন সেই ক্ষোভকে উস্কে দিয়েই কংগ্রেস নেতা রাহুল গাঁধীর টুইট, “মোদী সরকার জানেই না, লকডাউনে কত জন পরিযায়ী শ্রমিকের প্রাণ গিয়েছে, চাকরি খুইয়েছেন কত জন।” তার পরে হিন্দিতে কবিতার ছলে তিনি যা লিখেছেন, তার বাংলা তর্জমা, “তুমি গোনোনি বলে কি মৃত্যু হয়নি? কিন্তু দুঃখের কথা, সরকারের উপরে তার কোনও ছাপ পড়েনি। ওঁদের মৃত্যু সারা পৃথিবী দেখেছে। শুধু মোদী সরকারের কাছেই খবর পৌঁছয়নি।”

স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার দাবি
২৫ মার্চ থেকে
৪ জুলাই, ২০২০
মৃত পরিযায়ী শ্রমিক ৯৭২
• আর্থিক সমস্যা
ও অনাহারে ২১৬
• রেল বা পথ দুর্ঘটনায় ২০৯
• আত্মহত্যা ১৩৩
• শ্রমিক
স্পেশালে মৃত ৯৬
• চিকিৎসার
অভাবে ৭৭
• কোয়রান্টিন সেন্টারে ৪৯
• বিভিন্ন
কারণে ১৯২

সূত্র: স্ট্র্যান্ডেড ওয়ার্কার্স অ্যাকশন নেটওয়ার্ক

আরও পড়ুন: স্ত্রী করোনা পজিটিভ হয়ে আইডিতে, কোয়রান্টিনে সূর্যকান্ত মিশ্র

হঠাৎ লকডাউন ঘোষণার পরে পরিযায়ী শ্রমিকদের চরম দুর্দশা যে বিহার ভোটে বিরোধীদের অস্ত্র হতে চলেছে, তা শুরু থেকেই আঁচ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেই কারণে বিহারে প্রকল্প ঘোষণার প্রায় সমস্ত বক্তৃতায় নিয়ম করে ওই সমস্ত কর্মীদের গুণগান করেছেন তিনি। কখনও বিহারি মেধা এবং শ্রমশক্তির তুমুল প্রশংসা করেছেন, তো কখনও বলেছেন, গুজরাত, মহারাষ্ট্র-সহ ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের উন্নয়নে বড় ভূমিকা রয়েছে ওই বিহারি শ্রমিকদেরই। এ দিনও ওই ভোটমুখী রাজ্যের জন্য ‘বাড়ির দরজায় কল থেকে পানীয় জল’ সমেত এক গুচ্ছ প্রকল্পের কথা উল্লেখ করতে গিয়ে বলেছেন, “যে সমস্ত শ্রমিক সাথী ঘরে ফিরতে বাধ্য হয়েছেন, জল জীবন মিশনের সাফল্য তাঁদের প্রতি সমর্পিত।” ভিন্ রাজ্য থেকে ফেরা কর্মীদের বাড়ির কাছে কাজ দিতে কেন্দ্র যে প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ রোজগার অভিযান চালু করেছে, তার অনলাইন-উদ্বোধনও বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারকে পাশে নিয়ে তাঁর রাজ্য থেকেই করেন মোদী। প্রায় বক্তৃতাতেই প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, লালুপ্রসাদ-রাবড়ী দেবীর জমানায় উন্নয়নের কাজ আটকে গিয়েছিল পুরোপুরি। তার সঙ্গে এ দিন মনে করিয়েছেন, সেই সময়ের দুর্নীতিকে। কৌশলে বোঝাতে চেয়েছেন, এই অনুন্নয়ন আর দুর্নীতির জন্যই আর্থিক ভাবে পিছিয়ে পড়েছে বিহার। তাতে কাজের সুযোগ তো তৈরিই হয়নি, উপরন্তু জোটেনি পানীয় জল, নিকাশি ব্যবস্থার মতো ন্যূনতম বন্দোবস্ত। তাই পরিযায়ী শ্রমিকদের ক্ষতে প্রলেপ দিতে এই সমস্ত সুবিধা আর ঘরের কাছে কাজের সুযোগ তৈরির কথা বার বার বলছেন তিনি।

আরও পড়ুন: ৫০ লক্ষে ভারত, তবু লকডাউনের গুণগান​

কিন্তু বিরোধীদের মতে, বাড়িফিরতি পথে রেললাইনে ঘুমের মধ্যে পরিযায়ী শ্রমিক ও তাঁদের সঙ্গী পরিবারের সদস্যদের বেঘোরে কাটা পড়ার ছবি এখনও স্মৃতিতে টাটকা। মন থেকে মুছে যায়নি মাইলের পর মাইল হাঁটতে গিয়ে ক্লান্তিতে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ার স্মৃতিও। সেই ক্ষোভ ভোট-বাক্সে ওই সমস্ত পরিবার উজাড় করে দেবেন বলেই ধারণা বিরোধীদের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE