বক্তা: লোকসভায় চলছে প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতা। শুক্রবার। ছবি: পিটিআই।
রাহুল গাঁধীর রাফাল হানায় কার্যত ছত্রভঙ্গ হয়ে গেল শাসক শিবির! অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে বিতর্কে কংগ্রেস সভাপতি বেকারত্ব, কৃষকদের সমস্যা বা নোটবন্দি নিয়ে সরব হবেন, এটা প্রত্যাশিতই ছিল। কিন্তু রাফাল বিমানের প্রসঙ্গ তুলে রাহুল যে বিপক্ষ শিবিরকে তছনছ করে দেবেন তা সম্ভবত আঁচও করতে পারেননি নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহরা। আর তাই অনাস্থা বিতর্কে রাফাল প্রসঙ্গ উঠতে দৃশ্যতই হতভম্ব হয়ে যান প্রতিরক্ষামন্ত্রী নির্মলা সীতারামন।
মোদী নিজেকে বলেন দেশের স্বঘোষিত চৌকিদার। তাঁকে আজ রাফাল দুর্নীতির ভাগিদার বলে বিঁধেছেন রাহুল। মোদীর সঙ্গে বিশেষ কিছু ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর সুসম্পর্ক ও তাদের বরাতপ্রাপ্তি নিয়ে প্রশ্ন তুলে সরকারের ‘মুখোশ খুলে দিতে’ সক্রিয় হন রাহুল। নির্মলা পরে রাফাল চুক্তি নিয়ে বিস্তারিত জবাব দিলেও, ওই চুক্তি যে পুরোপুরি দুর্নীতিমুক্ত, সে কথা জোর দিয়ে বলতে পারলেন না।
রাফাল নিয়ে আগেও অস্বস্তিতে পড়েছে মোদী সরকার। ফ্রান্সের সঙ্গে গোপনীয়তার চুক্তি আছে, এই যুক্তিতে সব প্রশ্ন ও বিতর্ক এড়িয়েছেন নির্মলারা। সেই দুর্বল জায়গাটিতে ঘা দিয়েই রাহুল লোকসভায় দাবি করেন, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট তাঁকে জানিয়েছেন দু’দেশের মধ্যে এমন কোনও গোপন চুক্তি নেই। যা শুনে হতচকিত হয়ে পড়েন নির্মলারা। রাহুল এ-ও জানতে চান, ইউপিএ আমলের ৫২০ কোটি টাকার বিমানের দাম কী ভাবে মোদী জমানায় ১৬০০ কোটি টাকা হয়ে গেল! কেন বরাত পেলেন মোদী ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ীরাই? নিরুত্তর নির্মলাকে কোণঠাসা হতে দেখে রাহুলের এই আক্রমণ মোকাবিলায় নামেন বিজেপি সাংসদেরা। অধিবেশন সাময়িক ভাবে থামিয়ে দিতে বাধ্য হন স্পিকার।
হাঁফ ছাড়ে শাসক শিবির। দশ মিনিটের বিরতিতে দ্রুত প্রথম সারিতে নির্মলাকে ডেকে নেন মোদী। যোগ দেন রাজনাথ সিংহ, সুষমা স্বরাজ। লোকসভাতেই তড়িঘড়ি বৈঠকে বসে যান মন্ত্রিসভার সুরক্ষা কমিটির সদস্যরা। প্রতিরক্ষা মন্ত্রক থেকে দ্রুত আনা হয় রাফাল চুক্তির কাগজপত্র। ঠিক হয়, কাগজ দেখিয়ে বলা হবে, অসত্য বলছেন রাহুল।
প্রতিরক্ষামন্ত্রী নির্মলা নন, আজ শুরু থেকেই মোদীকে নিশানা করেছেন রাহুল। রাহুলের কথায়, ‘‘প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ফ্রান্সে যাওয়া ওই ব্যবসায়ীর ৩৫ হাজার কোটি দেনা টাকা মকুব করে দিয়ে ৪৫ হাজার কোটি টাকার বরাত দেওয়া হয়েছে। ওই ব্যক্তি জীবনে একটিও বিমান বানাননি। অথচ, বাদ পড়ে হিন্দুস্তান অ্যারোনটিক্স লিমিটেড।’’ এর ব্যাখ্যাও দাবি করেন রাহুল। যার কোন সদুত্তর দিতে পারেনি সরকার।
বিজেপি পরে অস্ত্র করে ফ্রান্স সরকারের বিবৃতিকে। রাহুলের বক্তব্যের পরেই বিবৃতি দিয়ে ফ্রান্স সরকার জানায়, ভারত ও তাদের মধ্যে গোপনীয়তার চুক্তি রয়েছে। এর পরেই সংসদকে ভুল তথ্য দেওয়ার অভিযোগে রাহুলের বিরুদ্ধে অধিকার ভঙ্গের অভিযোগ আনার সিদ্ধান্ত নেয় বিজেপি। যদিও ফ্রান্স সরকারের ওই দাবি উড়িয়ে দিয়ে রাহুল পরে বলেন, ‘‘যদি ওরা (ফ্রান্স) অস্বীকার করতে চায় করুক। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট আমাকে ওই কথা বলেছিলেন। সেখানে আমি ছাড়াও ছিলেন আনন্দ শর্মা ও মনমোহন সিংহ।’’
জবাবি ভাষণে মোদীর বক্তব্য, ‘‘লোকসভায় এমন অভিযোগ তোলা হল যে (ফ্রান্স ও ভারত) দু’-দু’টি সরকারকে বিবৃতি দিয়ে তা খারিজ করতে হল। এ তো ছেলেমানুষি। সংসদের গরিমা এতে বাড়ল কি?’’ যদিও রাহুল যে অভিযোগগুলি এ দিন তুলেছেন, সেগুলির জবাব কিন্তু দেননি মোদী। দিনের শেষে রাহুলের বিরুদ্ধে অধিকার ভঙ্গের প্রস্তাব এনে মুখ বাঁচানোর চেষ্টা চালায় বিজেপি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy