সংসদে অধিবেশনের ফাঁকে রাহুল গাঁধী। পিটিআই
ডিসেম্বরের দিল্লি। জাঁকিয়ে বসেছে ঠান্ডা। মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, ছত্তীসগঢ়— তিন রাজ্যেই বিজেপির থেকে ক্ষমতা ছিনিয়ে নিয়েছে কংগ্রেস। কিন্তু বিশেষ করে রাজস্থান আর মধ্যপ্রদেশে মুখ্যমন্ত্রী বাছাই করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তখন দলের সভাপতি রাহুল গাঁধীকে। কারণ, দুই রাজ্যেই সে পদের দাবিদার এক জন প্রবীণ ও আর এক জন নবীন। রাজস্থানে অশোক গহলৌত ও সচিন পাইলট। মধ্যপ্রদেশে কমল নাথ ও জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া।
দিনটি ১৩ ডিসেম্বর, ২০১৮। সকালে নিজের বাড়িতে সচিন ও গহলৌতের সঙ্গে আলাদা বৈঠক করলেন রাহুল। কিন্তু জট কাটাতে পারেননি। অথবা কেটেছিল, ঘোষণা করেননি। এর পর ডাকলেন সিন্ধিয়া ও কমল নাথকে। মধ্যপ্রদেশের জট কাটিয়ে ছবি তুললেন দু’জনের সঙ্গে। মুখ্যমন্ত্রী কমল নাথই। অপেক্ষা করতে বললেন সিন্ধিয়াকে। সিন্ধিয়া-কমল নাথের হাতে জড়িয়ে ছবি টুইটে পোস্ট করে রাহুল উদ্ধৃত করলেন লিও টলস্টয়কে: ‘‘সব থেকে শক্তিশালী দুই যোদ্ধা হল, ধৈর্য ও সময়।’’ সিন্ধিয়ার কানে ‘অপেক্ষা’র মন্ত্র দিয়ে ফেরত পাঠালেও ক’দিন পর রাজস্থানে কিন্তু গহলৌতকে মুখ্যমন্ত্রী করার পাশাপাশি সচিনকে উপমুখ্যমন্ত্রী করেছিলেন রাহুল।
আজ সন্ধেয় পনেরো মাস আগের সেই টুইটটাই আবার রিটুইট করলেন রাহুল। তার আগে নিজের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগও খণ্ডন করেছেন। সিন্ধিয়া নাকি গত কয়েক দিনে সনিয়া গাঁধী, রাহুল গাঁধীর সঙ্গে দেখা করতে চেয়েও সময় পাননি। সিন্ধিয়ার উদ্দেশে রাহুল আজ বললেন, ‘‘উনিই একমাত্র লোক, যিনি যে কোনও সময়ে আমার বাড়িতে চলে আসতে পারেন।’’ আজ বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পরেও রাহুল সম্পর্কে কোনও বিরূপ মন্তব্য করেননি সিন্ধিয়া। বরং জাতীয় স্তরে কংগ্রেসে ‘নতুন নেতৃত্ব’ যে স্বীকৃত হচ্ছে না, সে কথা বলে পরোক্ষে রাহুলের পাশেই দাঁড়িয়েছেন।
অথচ কাল থেকেই অশোক গহলৌত থেকে দিগ্বিজয় সিংহের মতো প্রবীণ নেতারা সিন্ধিয়াকে কার্যত ‘বিশ্বাসঘাতকে’ পর্যবসিত করলেন। তাঁরা হিসেব দিচ্ছেন, গত ১৮ বছরে ১৭ বছর সাংসদ ছিলেন সিন্ধিয়া। আট বার পদোন্নতি হয়েছে। এআইসিসি-র সাধারণ সম্পাদক, ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য। দিগ্বিজয়রা জানাচ্ছেন, মধ্যপ্রদেশের সভাপতি পদের প্রস্তাব দেওয়াও হয়েছিল সিন্ধিয়াকে, তিনিই নেননি। সকালে নিজের টুইটে কংগ্রেসের সরকারকে অস্থির করার কথা বলার পর দলের অনেক নেতার মনে হয়েছিল, রাহুল বুঝি সিন্ধিয়ার বিরুদ্ধে। কিন্তু সন্ধের টুইটে তাঁরাও থতমত। এআইসিসি-র এক নেতার কথায়, আসলে সিন্ধিয়ার জন্য দরজা খোলা রাখলেন রাহুল। বোঝালেন, রাহুলের লড়াইয়ে তিনি সঙ্গে থাকতে পারতেন। কারণ, রাহুলও দলের প্রবীণদের বিরুদ্ধেই লড়ছেন। বিজেপি দফতরে গিয়ে সিন্ধিয়া আজ বার বার তাঁর বাবা মাধবরাওয়ের কথাই বলেছেন। বিজেপিতে আসার ‘খুশি’ প্রকাশ না-করে বরং কংগ্রেস ছাড়ার ‘দুঃখ’ই শুনিয়েছেন। বলেছেন, ‘‘আমি ব্যথিত। কংগ্রেস আগে যা ছিল, আজ নেই। এখন বাস্তবকে অস্বীকার করে চলে কংগ্রেস। নতুন আদর্শ, ভাবনা ও নতুন নেতৃত্বের জায়গা নেই।’’
এই পরিস্থিতিতে আজই সনিয়া গাঁধী দিল্লি ও কর্নাটকের নতুন সভাপতি নিয়োগ করলেন। দিল্লিতে অনিল চৌধুরী, কর্নাটকে জি কে শিবকুমার। প্রবীণদের পাশ কাটিয়ে এই দুই নিয়োগই নবীন নেতার। দলের এক নেতা বলছেন, সিন্ধিয়া বিদায়ের পর ঝড় শুরু হল কংগ্রেসে। সচিন পাইলট, মিলিন্দ দেওরা, কুলদীপ বিশনোই, জিতিন প্রসাদের মতো অসন্তুষ্ট নবীন নেতারাও পা বাড়িয়ে আছেন। কুলদীপ তো নিজেই জানিয়েছেন, অনেক নেতা নিজেদের বিচ্ছিন্ন মনে করছেন। ভারতের সব থেকে প্রাচীন দলে কঠোর পরিশ্রম করা যুবকদের হাতে ক্ষমতা দিতে হবে। এর পরে রাহুলের চাপেই আজ সনিয়া নবীনদের নিয়োগ করলেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy