Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

সেনা-মন্তব্যের জন্য ক্ষমা চান ভাগবত: রাহুল

সঙ্ঘপ্রধান মোহন ভাগবত বলে বসলেন, সঙ্ঘ তিন দিনেই বাহিনী তৈরিতে সক্ষম, যেখানে সেনার তৈরি হতে ৬-৭ মাস লেগে যাবে! সঙ্ঘপ্রধানের এমন মন্তব্যে ঝড় উঠল সঙ্গে সঙ্গে।

মোহন ভাগবত এবং রাহুল গাঁধী।

মোহন ভাগবত এবং রাহুল গাঁধী।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০২:৩৭
Share: Save:

আধা-সেনার ডিজি যাচ্ছেন সঙ্ঘের মঞ্চে। আর সেই সঙ্ঘেরই প্রধান খাটো করছেন সেনাকে।

গত কাল কলকাতায় সঙ্ঘের মঞ্চে বিএসএফের ডিজি যাওয়ার পরে নিরাপত্তাবাহিনীতেও গেরুয়া অনুপ্রবেশ নিয়ে কথা উঠেছিল। তার রেশ না কাটতেই সঙ্ঘপ্রধান মোহন ভাগবত বলে বসলেন, সঙ্ঘ তিন দিনেই বাহিনী তৈরিতে সক্ষম, যেখানে সেনার তৈরি হতে ৬-৭ মাস লেগে যাবে! সঙ্ঘপ্রধানের এমন মন্তব্যে ঝড় উঠল সঙ্গে সঙ্গে। জম্মু-কাশ্মীরে যে সেনা প্রতিদিন জঙ্গি বুলেটের মোকাবিলা করছেন, তাঁদের সঙ্গে সঙ্ঘের তুলনা? সেনাকে এত অপমান কোন সাহসে, উঠছে প্রশ্ন। তার থেকেও বড় প্রশ্ন, দেশ রক্ষা করতে সঙ্ঘের প্রয়োজনটা কী?

মোহন ভাগবতের সঙ্গে নরেন্দ্র মোদীও উঠে এলেন রাহুল গাঁধীদের নিশানায়। রাহুল বললেন, সেনা, শহিদ, তেরঙ্গাকে অপমান করেছেন ভাগবত। সেনা ও দেশবাসীর কাছে ক্ষমা চান ভাগবত। কংগ্রেস বলল, সঙ্ঘের এমন কথা আশ্চর্যের নয়। ‘প্রচারক’ হিসেবে মোদীই তো বলেছিলেন, সেনার থেকে বেশি ঝুঁকি নেন ব্যবসায়ীরা। দলের এক নেতার কথায়, ‘‘তিন দিনে সেনা তৈরি করবে আরএসএস! অথচ ১৯২৫ সালে জন্মের পরে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত একজন স্বাধীনতা সংগ্রামী তৈরি করতে পারল না!’’

আরও পড়ুন: মন্দির-মসজিদ, এক পথে মোদী-রাহুল

হোক বেফাঁস মন্তব্য, করেছেন তো সঙ্ঘপ্রধান। তাই জেনেও চুপ করে থেকে বিতর্ক এড়ালেন বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ। ক্ষত মেরামতে তড়িঘড়ি জম্মুতে পাঠানো হল প্রতিরক্ষামন্ত্রী নির্মলা সীতারামনকে। উপত্যকায় জঙ্গিদের বাড়বাড়ন্ত নিয়ে পাকিস্তানকে মূল্য চোকাতে হবে বলে জাতীয়তাবাদী আবেগ তোলার চেষ্টা চালালেন নির্মলা। কিন্তু সেটা কাজে লাগল না।

বেগতিক দেখে আত্মপক্ষ সমর্থনে নামল সঙ্ঘ। আর তাতে বিপত্তি বাড়ল! মোহন ভাগবতের মন্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা হচ্ছে দাবি করে সঙ্ঘের প্রচার-প্রমুখ মনমোহন বৈদ্য বললেন, ভাগবত আসলে বলেছেন, তেমন পরিস্থিতি তৈরি হলে এবং সংবিধান অনুমতি দিলে স্বয়ংসেবকদের দিয়ে তিন দিনেই বাহিনী তৈরি করা যাবে। যেখানে একই কাজ করতে সেনার লাগবে ছ’মাস।

প্রশ্ন উঠল, সঙ্ঘের সেনা তৈরির দরকারটা কী? সঙ্ঘ ও বিজেপি নেতারা বলছেন, যদি তেমন পরিস্থিতি আসে। কেমন পরিস্থিতি? মোদী সরকারের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কিরেণ রিজিজু বললেন, জরুরি পরিস্থিতি। কংগ্রেসের আনা ‘জরুরি অবস্থা’ নয়। আর যে নীতীশ কুমার এক সময় ‘সঙ্ঘ-মুক্ত ভারতে’র দাবি তুলেছিলেন, তিনি সঙ্ঘ প্রধানের মন্তব্যে বিতর্কের কিছু দেখছেন না!

সঙ্ঘের বক্তব্যকে হাতিয়ার করে কংগ্রেস নেতা আনন্দ শর্মা বলেন, ‘‘আফগানিস্তান, ইরাক, সোমালিয়া, কঙ্গোর মতো যে সব দেশে ব্যক্তিগত বাহিনী গড়ে উঠেছে, সেখানেই বিপর্যয় নেমে এসেছে।’’ সেই সঙ্গেই সরাসরি মোদীকে নিশানা করে তাঁর মন্তব্য, ‘‘প্রধানমন্ত্রী স্পষ্ট করে বলুন, তিনি দেশরক্ষার ভার সঙ্ঘের হাতে তুলে দিতে চান কি না।’’ পিছিয়ে নেই অন্য বিরোধীরাও। তৃণমূলের ডেরেক ও ব্রায়েনের বক্তব্য, ‘‘রিজিজু তো ‘মিনিস্টার অফ স্টেট’ না থেকে ‘মিনিস্টার অফ সঙ্ঘ’ হয়ে গিয়েছেন!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE