রাহুল গাঁধী
আরএসএস-কে মোহনদাস কর্মচন্দ গাঁধীর হত্যাকারী বলে মন্তব্য করে বিপাকে পড়েছেন রাহুল গাঁধী। সুপ্রিম কোর্ট আজ কংগ্রেসের সহ-সভাপতিকে ভর্ৎসনা করে বলেছে, হয় রাহুলকে এই মন্তব্যের জন্য দুঃখ প্রকাশ করতে হবে। না হলে আদালতে প্রমাণ করতে হবে, তিনি যা বলেছেন, ঐতিহাসিক তথ্যের ভিত্তিতেই বলেছেন।
গত বছর মার্চ মাসে মহারাষ্ট্রের ঠাণেতে এক জনসভায় রাহুল অভিযোগ করেছিলেন, ‘‘আরএসএস-এর লোকেরাই গাঁধীজিকে খুন করেছিল।’’ এর পরেই আরএসএস-এর তরফে তাঁর বিরুদ্ধে মানহানির মামলা ঠোকা হয়। আজ সুপ্রিম কোর্টে তার শুনানিতে বিচারপতি দীপক মিশ্র রাহুলের উদ্দেশে প্রশ্ন তোলেন, ‘‘আপনি কেন সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত সকলকে এক তুলিতে রাঙিয়ে ফেললেন? একটি সংগঠনকে আপনি সার্বিক ভাবে নিন্দা করতে পারেন না।’’
আদালতের তিরস্কারে রাহুল অবশ্য পিছু হটবেন না বলেই কংগ্রেসের তরফে জানানো হয়েছে। কংগ্রেসের মুখপাত্র রণদীপ সুরজেওয়ালা বলেন, ‘‘রাহুল যা বলেছেন, ভেবেচিন্তেই বলেছেন। ঐতিহাসিক তথ্যের ভিত্তিতেই বলেছেন। এ জন্য দুঃখ প্রকাশ করার কোনও প্রশ্ন নেই।’’ রাহুলের আইনজীবী মহালক্ষ্মী পাভানিও আদালতে বলেছেন, গাঁধী হত্যা মামলায় বিশেষ আদালত গঠন করে লালকেল্লায় যে শুনানি হয়েছিল এবং পঞ্জাব হাইকোর্ট যে রায় দিয়েছিল, সেই সমস্ত নথি রয়েছে। তার ভিত্তিতেই রাহুল যা বলার বলেছেন। ২৭ জুলাইয়ের মধ্যে তিনি এ বিষয়ে হলফনামা জমা দেবেন। যদিও তার আগে সুপ্রিম কোর্টের প্রাথমিক পর্যবেক্ষণ হল, পঞ্জাব হাইকোর্ট নাথুরাম গডসেকে আরএসএস-কর্মী বলে অভিহিত করেছিল ঠিকই। কিন্তু গডসে গাঁধীকে হত্যা করেছেন এবং আরএসএস গাঁধীকে হত্যা করেছে— এই দু’টি এক কথা নয়।
ইতিহাস কী বলছে? দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অধ্যাপক নীরজা সিংহ এ দিন বলেন, ‘‘১৯৪৮-এর ২৭ ফেব্রুয়ারি জওহরলাল নেহরুকে একটি চিঠিতে বল্লভভাই পটেল লিখেছেন, আরএসএস এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিল না। ষড়যন্ত্রটি করেছিল হিন্দু মহাসভার একটি শাখা, বিনায়ক দামোদর সাভারকরের নেতৃত্বে।’’ তবে নীরজা এ কথাও মনে করিয়ে দিচ্ছেন যে, আরএসএস গাঁধী-হত্যাকে স্বাগতই জানিয়েছিল। তারা ওই ঘটনার পরে মিষ্টি বিলি করেছিল বলেও নেহরুকে লিখেছিলেন পটেল। ইদানীং কালে আরএসএস অবশ্য সেই অবস্থানকে আর ফিরিয়ে আনতে চায় না। তাই গত বছর হিন্দু মহাসভা গডসের ফাঁসির দিনটি বলিদান দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নিলেও আরএসএস সমালোচনা করেছিল। এ দিন আরএসএস মুখপাত্র এম জি বৈদ্য আদালতের বক্তব্যে সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, ‘‘আরএসএস-এর বিরুদ্ধে লাগাতার মিথ্যে প্রচার চালাচ্ছে কংগ্রেস। আজকের রায় ওদের মুখোশ খুলে দিয়েছে।’’
কংগ্রেসের তরফে এবং রাহুলের আইনজীবীর তরফে যদিও বোঝানোর চেষ্টা চলছে, এই তিরস্কারই শেষ কথা নয়। আইনজীবী মহালক্ষ্মীর যুক্তি, ‘‘এমন নয় যে আমরা মামলা হেরে গিয়েছি বা আদালত আমার মক্কেলকে দোষী সাব্যস্ত করেছে। আমরা আদালতে বোঝাতে পারব যে, উনি যা বলেছেন তথ্যের ভিত্তিতেই বলেছেন।’’ রাহুলের তরফে আবেদন জানানো হয়েছিল, তাঁর প্রধান আইনজীবী ২৭ জুলাই অবধি ব্যস্ত থাকবেন। কাজেই শুনানি দু’সপ্তাহ স্থগিত রাখা হোক। আদালত সেই আবেদন মানেনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy