Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

পশ্চিমবঙ্গ থেকে ট্রেনে পাড়ি, সপরিবার কেরলের পথে রোহিঙ্গারা, সতর্ক পুলিশ

রেল সূত্র বলছে, গত এক-দেড় দশক ধরেই উত্তর-পূর্ব, পশ্চিমবঙ্গ, বিহার ও ওড়িশা থেকে কেরলে কাজ করতে যাওয়ার একটি প্রবণতা তৈরি হয়েছে।

রোহিঙ্গারা পরিবার নিয়ে কেরলের দিকে যাত্রা করছেন বা করার উদ্দেশ্যে জমায়েত হচ্ছেন বলেই জানতে পেরেছেন গোয়েন্দারা। ছবি: সংগৃহীত।

রোহিঙ্গারা পরিবার নিয়ে কেরলের দিকে যাত্রা করছেন বা করার উদ্দেশ্যে জমায়েত হচ্ছেন বলেই জানতে পেরেছেন গোয়েন্দারা। ছবি: সংগৃহীত।

অনমিত্র সেনগুপ্ত
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০১ অক্টোবর ২০১৮ ০৫:১৫
Share: Save:

উত্তর-পূর্ব ভারত থেকে বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা কেরলের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছে বলে সতর্ক করে দিল রেল পুলিশ। যাত্রার জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে হাওড়া, শালিমার বা সাঁতরাগাছির মতো স্টেশন। কলকাতা-সংলগ্ন ওই স্টেশনগুলি থেকে ওই রোহিঙ্গারা পরিবার নিয়ে কেরলের দিকে যাত্রা করছেন বা করার উদ্দেশ্যে জমায়েত হচ্ছেন বলেই জানতে পেরেছেন গোয়েন্দারা। কেরলগামী ওই রোহিঙ্গাদের যাত্রাপথে আটক করে প্রশাসনের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য যাত্রাপথের সব ক’টি জোনকে নির্দেশ দিয়েছে রেল পুলিশ।

রেল সূত্র বলছে, গত এক-দেড় দশক ধরেই উত্তর-পূর্ব, পশ্চিমবঙ্গ, বিহার ও ওড়িশা থেকে কেরলে কাজ করতে যাওয়ার একটি প্রবণতা তৈরি হয়েছে। সমীক্ষায় পাওয়া গিয়েছে ওই ‘মাইগ্র্যান্ট করিডরের’ কল্যাণে কেরলে প্রায় ২৫ লক্ষ অন্য রাজ্যের শ্রমিক বসবাস করেন। কিন্তু ওই রাজ্যে সাম্প্রতিক বিধ্বংসী বন্যার পরে সেই শ্রমিকদের একটি বড় অংশ নিজেদের রাজ্যে ফিরে যায়। বন্যার ধাক্কা সামলে ফের ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে কেরল। ফের ওই ঠিকা শ্রমিকদের প্রয়োজন দেখা দিতে শুরু করেছে। রেল মনে করছে, কেরলে গেলে কাজের সুযোগ পাওয়া যাবে ওই ভরসাতেই উত্তর-পূর্ব ভারত থেকে রোহিঙ্গারা কেরলের উদ্দেশ্যে যেতে শুরু করেছেন। বিষয়টি নজর রাখছিলেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা। গত সপ্তাহে কেরল সফরে গিয়েও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহও স্থানীয় প্রশাসনকে সতর্ক করে দিয়ে জানিয়েছিলেন যে, বিভিন্ন রাজ্য থেকে রোহিঙ্গারা কেরলে প্রবেশের চেষ্টা শুরু করেছে। যা সেই রাজ্যের নিরাপত্তার প্রশ্নে উদ্বেগজনক।

তার ঠিক এক দিন পরেই জোনগুলির উদ্দেশ্যে গোপন বার্তা পাঠান চেন্নাই প্রশাসনের মুখ্য নিরাপত্তা কমিশনার পি সেথু মাধবন। তাতে উত্তর-পূর্ব ভারত থেকে কেরলগামী ১৪টি ট্রেনকে চিহ্নিত করা হয়েছে। ওই ট্রেনগুলিকে মূলত কেরল যাওয়ার জন্য ব্যবহার করছে রোহিঙ্গারা। এর মধ্যে শিলচর-তিরুঅনন্তপুরম বা গুয়াহাটি-ট্যামব্রাম এক্সপ্রেসের পাশাপাশি শালিমার থেকে মাদ্রাজ মেল, হাওড়া থেকে কন্যাকুমারী বা তিরুচিরাপল্লি এক্সপ্রেসও রয়েছে। রোহিঙ্গাদের তালিকায় রয়েছে সাঁতরাগাছি থেকে পুদুচেরি বা মাদ্রাজ অন্ত্যোদয় এক্সপ্রেসও। সব মিলিয়ে দেখা যাচ্ছে, ১৪টি ট্রেনের তালিকার মধ্যে ১০টি পূর্ব রেলের হাওড়া, শালিমার বা সাঁতারাগছি থেকে ছাড়ে। রেল পুলিশের সূত্র বলছে, উত্তর-পূর্ব ভারত থেকে হয় সরাসরি দক্ষিণের ট্রেন, না হলে পশ্চিমবঙ্গ থেকে দক্ষিণ ভারতগামী ট্রেন ধরছেন রোহিঙ্গারা। গোয়েন্দা সূত্র বলছে, ওই রোহিঙ্গারা পরিবারের সকলের সঙ্গে এক সঙ্গে সফর করছে। তাই পূর্ব থেকে দক্ষিণ ভারতের যাত্রাপথের মধ্যে এদের চিহ্নিত করে সংশ্লিষ্ট রাজ্য প্রশাসনের হাতে তুলে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিশেষ ভাবে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে, মাদুরাই, পলাক্কড়, তিরুঅনন্তপুরম জোনের রেল পুলিশকে।

বর্তমানে এ দেশে অবৈধ ভাবে বসবাসকারী প্রায় ৪০ হাজার রোহিঙ্গা রয়েছেন। প্রতিনিয়ত ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত দিয়ে এ দেশে ঢোকার চেষ্টা করে যাচ্ছেন মায়ানমারের ওই উদ্বাস্তুরা। সীমান্তে রোহিঙ্গাদের আটকানো বড় চ্যালেঞ্জ বলে দু’দিন আগেই স্বীকার করেছিলেন বিএসএফের বিদায়ী ডিজি কে কে শর্মা। রোহিঙ্গারা যাতে দেশে ছড়িয়ে পড়তে না পারে সেই কারণে প্রতিটি রাজ্যকে রোহিঙ্গাদের চিহ্নিত করে তাদের একটি নির্দিষ্ট এলাকার মধ্যে আটকে রাখতেও নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্র। কিন্তু সেই কাজে রাজ্যগুলি যে ব্যর্থ, তা ঘরোয়া মহলে একাধিকবার স্বীকার করে নিয়েছেন স্বরাষ্ট্রকর্তারা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE