হাজিরার নির্ঘণ্টের বারোটা তো বেজেই গিয়েছে। এ বারের বর্ষা ভারতীয় ভূখণ্ডে পা রাখার পরেও যে ক্রমাগত ভুগিয়ে যাবে, মঙ্গলবার তার ইঙ্গিত দিয়ে রাখল মৌসম ভবন। সৌজন্য: এল নিনো।
নয়াদিল্লির কেন্দ্রীয় হাওয়া অফিস এ দিন হুঁশিয়ারি দিয়েছে, এ মরসুমে দেশে বর্ষা যত এগোবে, তত বাড়বে এল নিনোর দাপট। ফলে দেশ জুড়ে বৃষ্টি হবে স্বাভাবিকের অনেকটাই কম। এক আবহ-বিজ্ঞানীর বক্তব্য, যে সময়টায় বর্ষার গতি পাওয়ার কথা, তখনই এল নিনো শক্তি বাড়াতে শুরু করবে। পরিণামে জুলাই-অগস্টে, অর্থাৎ ‘ভরা বর্ষাকালে’ও প্রত্যাশিত বৃষ্টি না-হওয়ার প্রভূত আশঙ্কা।
এ দিন মৌসম ভবনের দেওয়া চূড়ান্ত পূর্বাভাস অনুযায়ী, এ বার সারা দেশে বর্ষা হবে স্বাভাবিকের ৮৮%-৯০%। উল্লেখ্য, বৃষ্টিপাত স্বাভাবিকের ৯৬ শতাংশের কম হলে আবহ-পরিভাষায় তা ‘ঘাটতি’র তকমা পেয়ে যায়। সেই হিসেবে এ বছর ঘাটতি বৃষ্টির অপবাদ মাথায় নিয়েই বর্ষাকে বিদায় নিতে হতে পারে।
তবে সে পরের ভাবনা। আপাতত দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর কেরলে পদার্পণ নিয়েই দুশ্চিন্তা দানা বেঁধেছে। চিরাচরিত আবহাওয়া-ক্যালেন্ডার মানলে ১ জুন বর্ষার কেরলে ঢুকে পড়ার কথা। এ বার বায়ুপ্রবাহের গতি-প্রকৃতি গোড়ায় এতটাই অনুকূল ছিল যে, মৌসম ভবন বর্ষার আগাম হাজিরার সম্ভাবনাও জানিয়ে দেয়। বলা হয়, নির্ধারিত সময়ের দু’-এক দিন আগেই বর্ষা হয়তো কেরলে ঢুকে পড়বে, তার পরে হু হু করে উঠে আসবে উপরে। গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গেও ‘বিফোর টাইমে’ ঢুকে পড়তে পারে।
কিন্তু ‘এল নিনো’ যাবতীয় হিসেব গুলিয়ে দিয়েছে। আবহবিজ্ঞানীরা স্বীকার করছেন, প্রশান্ত মহাসাগরের জলস্তরের তাপমাত্রা যে এত তাড়াতাড়ি চড়ে গিয়ে গোটা পরিস্থিতিকে এ ভাবে আমূল বদলে দেবে, মার্চ-এপ্রিলেও তার আঁচ মেলেনি। কী রকম?
মৌসম ভবনের খবর, প্রশান্ত মহাসাগরের জলতলের উষ্ণতা মাত্রাতিরিক্ত বেড়ে গিয়ে যে ‘এল নিনো’র সৃষ্টি, সেটাই পাঁচিল তুলে দিয়েছে বর্ষার যাত্রাপথে। তাই কেরলে বর্ষা সমাগমের নির্ঘণ্ট রোজ একটু করে পিছোচ্ছে। এ দিন মৌসম ভবন জানিয়েছে, এখন যা অবস্থা, তাতে আগামী শুক্রবার নাগাদ বর্ষা কেরলে ঢুকতে পারে। কিন্তু তার সাত দিনের মধ্যে বর্ষা গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে পৌঁছাবে কি না, তা বলা যাচ্ছে না। কারণ, সেই এল নিনো। উপরন্তু আগামী ক’দিনের মধ্যে আরবসাগরের নীচের দিকে কোনও ঘূর্ণাবর্ত গজিয়ে উঠলে সমস্যা আরও জোরালো হয়ে উঠবে। কেননা ঘূর্ণাবর্তের টানে মৌসুমি বায়ু নীচে নেমে যাবে, ধাক্কা খাবে তার গতি। বস্তুত আরবসাগরে এই মুহূর্তে তেমন একটা সম্ভাবনাই ঘোঁট পাকাচ্ছে বলে ইঙ্গিত পেয়েছেন আবহ-বিজ্ঞানীরা।
সব মিলিয়ে ভারতের বর্ষা–ভাগ্যে আশঙ্কারই ছায়া। মৌসম ভবনের পূর্বাভাস, সর্বাধিক ভুগবে উত্তর-পশ্চিম ভারত, যেখানে সম্ভাব্য বৃষ্টিপাত স্বাভাবিকের ৮৫%। একেই শীতের শেষে ওই তল্লাটে লাগাতার বৃষ্টিতে ফসল নষ্ট হয়েছে। প্রবল গ্রীষ্মে ফুটিফাটা মাঠে চাষও বিপর্যস্ত। খরা-দুর্গত মধ্য ভারতে স্বাভাবিকের ৯০% বৃষ্টির পূর্বাভাস, উত্তর-পূর্বে স্বাভাবিকের ৯০%। তুলনায় দক্ষিণ ভারত বেশি বৃষ্টি পেতে পারে— স্বাভাবিকের ৯২%।
গত ক’বছরে ভারতে বর্ষা-ক্যালেন্ডার ক্রমশ পিছোচ্ছে। এখন মূল বৃষ্টিটা হচ্ছে ১৫ অগস্টের পরে। এতে কৃষকেরা ভুগছেন। এল নিনোর দৌলতে তাঁদের দুর্ভোগ আরও বাড়বে বলে আবহবিদেরা মনে করছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy