রামমন্দির নির্মাণ থেকে ‘শহুরে নকশাল’দের রুখতে ব্যর্থতা, তফসিলি জাতি-উপজাতিদের জন্য কাজ করতে না পারা থেকে দেশে ‘সংস্কার’ কায়েম করতে না পারা— গত সাড়ে চার বছরে নরেন্দ্র মোদী সরকারের বিরুদ্ধে হিন্দুদের অসন্তোষকে আজ ভোটের আগে মেলে ধরলেন সরসঙ্ঘচালক মোহন ভাগবত।
প্রতি বছর বিজয়া দশমীতে সরসঙ্ঘচালকের বক্তৃতার দিকে নজর থাকে শাসক এবং বিরোধী দুই শিবিরেরই। আজ নোবেলজয়ী কৈলাস সত্যার্থীকে আমন্ত্রণ জানিয়ে আরএসএসের সদর দফতর নাগপুরে ভোটেরই কথা বললেন ভাগবত। আরএসএস রাজনীতিতে থাকে না বললেও ভাগবত স্পষ্ট বুঝিয়ে দিলেন, ভোট কাকে দিতে হবে। বললেন, একশো শতাংশ ভাল কেউই নন। যেমনটি পাণ্ডব আর কৌরবদের বেলায় বলেছিলেন কৃষ্ণ। দু’জনেরই দোষ আছে। কিন্তু এক জনকে একেবারে পছন্দ নয়, আর এক জনও ‘বেকার’। একটু ভাল হতে পারত। এমন দু’জনের মধ্যে তাঁকেই বাছতে হবে, যিনি দেশহিতে কাজ করবেন, যাঁর মধ্যে দক্ষতা আছে। কিন্তু ‘নোটা’য় ভোট দিলে ‘বেশি খারাপ’-এরই ফায়দা হবে। ফলে ‘নোটা’য় ভোট দেওয়া মানে আত্মঘাতী পদক্ষেপ।
ভাগবতের এই মন্তব্যের প্রেক্ষিতে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা স্পষ্ট বুঝছেন, নরেন্দ্র মোদীকেও ‘একশো শতাংশ ভাল’ বলতে পারলেন না খোদ সঙ্ঘপ্রধান। মোদীর প্রতি অসন্তোষ বাড়ছে হিন্দু সমাজের। সেই অসন্তোষের ঝাঁঝ কমাতে মোদীর সমালোচনার মধ্যেও হিন্দুদের একজোট করার চেষ্টা চালালেন ভাগবত। আর সেটা করতে গিয়ে হাতিয়ার করলেন রামমন্দির নির্মাণকে। যে কথা ক’দিন আগেও বলেছেন। আজ ফের বললেন, রামমন্দির দ্রুত নির্মাণ করতে সরকার আইন করুক। স্রেফ রাজনীতির জন্য একদল এটিকে আদালতে ঝুলিয়ে রাখতে চাইছে। এ ব্যাপারে সাধু-সন্তরা যে সিদ্ধান্ত নেবেন, আরএসএস পাশে থাকবে। ক’দিন আগেই সাধু-সন্তরা দিল্লিতে বৈঠক করে মোদীকে ঠিক এই ‘আদেশ’ই দিয়েছেন।
হিন্দুত্বের তাস খেলতে বিজেপির শরিক শিবসেনা প্রধান উদ্ধব
ঠাকরে আজই বলেছেন, ২৫ নভেম্বর তিনি অযোধ্যা যাবেন। উদ্ধবের কথায়, ‘‘হিন্দুত্ব মরে যায়নি। আমরা এখনও বেঁচে।’’ মন্দির-মন্তব্যের পরে শরিক জেডিইউ-এর কে সি ত্যাগী থেকে ‘বন্ধু-বিরোধী’ বলে পরিচিত আসাউদ্দিন ওয়াইসি
আইন করে রামমন্দির নির্মাণের বিরোধিতা করেছেন।
কিন্তু মন্দির তো উপলক্ষ। ভোটের আগে আজ ভাগবত জোর দিয়েছেন জাতপাত মুছে হিন্দুদের একজোটের বার্তা দিতে। আর সে কাজ করতে গিয়ে মোদীর প্রতি জমতে থাকা অসন্তোষকেও মাথায় রাখতে হয়েছে। তাই পরতে পরতে সমালোচনা করলেন সরকারের।
ভাগবতের কথায়, ‘‘সরকার ধীরে চলে। কে চালাচ্ছে, জানি না। প্রশাসন আরামে চলে। তাই বদল ধীরে ধীরে আসে। সাড়ে চার বছর হয়ে গেল। এখনও দেরিতে চলা ট্রেনের মতো স্টেশনে আসেনি। হতে পারে, ব্যক্তি চাইছেন, কিন্তু প্রশাসন-আমলারা করতে দেন না।’’ তাঁর আক্ষেপ, তফসিলি জাতি, উপজাতিদের জন্য একাধিক পরিকল্পনা রয়েছে। কিন্তু ঠিক মতো রূপায়ণ হয় না। আদিবাসীদের ক্ষোভকে ‘বারুদ’ হিসেবে ব্যবহার করেন ‘শহুরে নকশাল’রা। এদের খুঁজে বের করে অসন্তোষ দূর করার দায়িত্বে ‘সমাজ’কেই নিতে হবে বলে জানান সঙ্ঘপ্রধান।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy