বিরোধীরা তোপ দাগছেন, রিজার্ভ নয়, এ তো ‘রিভার্স’ ব্যাঙ্ক! নোট বাতিলের দিন থেকে যার কাজই হয়েছে নিত্যনতুন ঘোষণা করা আর দু’দিন না যেতেই তা পাল্টে ফেলা। এই লাগাতার ডিগবাজির ‘মুকুটে নতুন পালক’ ৫ হাজার টাকার বেশি বাতিল নোট জমা করা নিয়ে বিভ্রান্তি।
বুধবার রিজার্ভ ব্যাঙ্ক জানিয়েছে, পুরনো পাঁচশো ও হাজারের নোটে এক লপ্তে ৫,০০০ টাকার বেশি একটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা দিতে গেলে, কোনও প্রশ্নের মুখে পড়তে হবে না। ৩০ ডিসেম্বরের মধ্যে টাকা জমাও দেওয়া যাবে যত বার খুশি। শর্ত হল, অ্যাকাউন্টের জন্য জমা দেওয়া থাকতে হবে কেওয়াইসি নথি। এই ঘোষণা দু’দিন আগে তাদের নিজেদের জারি করা বিবৃতির উল্টো। খানিকটা বাড়তি ছাড় মঙ্গলবার অর্থমন্ত্রীর করা ঘোষণার তুলনাতেও।
নোট নাকচের পরে ৪৩ দিনে এই নিয়ে ৬০ বার নতুন ঘোষণা করল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ও অর্থ মন্ত্রক। নতুন নিয়ম চালু এবং দু’দিন না যেতেই তা পাল্টে ফেলা এখন আর অবাক করা ঘটনা নয়। কিন্তু অনেকের মতে, এ দিনের ডিগবাজি চোখে আঙুল দিয়ে দেখাল যে, প্রধানমন্ত্রীর অফিস, অর্থমন্ত্রীর দফতর ও রিজার্ভ ব্যাঙ্কের মধ্যে বোঝাপড়ার অভাব কতটা। নোট নাকচ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী এবং অর্থমন্ত্রীর মতের ফারাকও এতে ধরা পড়েছে।
নোট কাহিনি
• ৫,৯২,৬১৩ কোটি টাকার
• মোট সংখ্যা: ২২৬০ কোটি
• ১০, ২০, ৫০ ও ১০০ টাকার নোট: ২০৪০ কোটি
• ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট: ২২০ কোটি
*১০ নভেম্বর থেকে ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত
সোমবার রিজার্ভ ব্যাঙ্ক বলেছিল, বাতিল নোটে এক লপ্তে ৫,০০০ টাকার বেশি একটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা দিতে হলে, ৩০ ডিসেম্বরের মধ্যে তা করা যাবে আর এক বারই। সে ক্ষেত্রেও ব্যাঙ্কে জিজ্ঞাসাবাদ করবেন অন্তত দু’জন অফিসার। জানতে চাইবেন, টাকা এত দিন জমা দেননি কেন? সন্তোষজনক ব্যাখ্যা দিয়ে তবেই টাকা অ্যাকাউন্টে জমা করা যাবে। বারবার অল্প করে জমা দিতে থাকলেও সেই টাকা যোগ হবে। মোট ৫,০০০ ছাড়ালে একই ভাবে পড়তে হবে প্রশ্নের মুখে।
কিন্তু ওই দিনই অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি আশ্বাস দেন, বাতিল নোটের পরিমাণ যতই হোক, প্রথম বার জমা দিতে গেলে কোনও প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হবে না। তখনই প্রশ্ন উঠেছিল, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ও অর্থ মন্ত্রক এমন উল্টো কথা বলছে কী ভাবে? এ দিন দেখা গেল, দুই বিধিনিষেধই ফিরিয়ে নিল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। তা ছাড়া, জেটলি শুধু প্রথম বারে জবাবদিহি না করার কথা বলেছিলেন। কেউ কত বারে টাকা জমা দেবেন, তা নিয়েও আর কোনও নিষেধাজ্ঞা রাখল না শীর্ষ ব্যাঙ্ক।
সূত্রের খবর, জেটলি নোট বাতিলের বিরোধী নন। কিন্তু যে ভাবে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ও অর্থ মন্ত্রকের কয়েকজন পুরো বিষয়টি কুক্ষিগত করে রেখেছেন, তা তাঁর পছন্দ হয়নি। সম্ভবত সেই কারণেই রিজার্ভ ব্যাঙ্কের নির্দেশিকার উল্টো অবস্থান নেন তিনি। টাকা জমা নিয়ে জেটলির ঘনিষ্ঠ রাজ্যসভা সাংসদ স্বপন দাশগুপ্তের টুইটও এই জল্পনায় ঘি ঢেলেছে।
বিরোধীরা বলছেন, মোদীই সব সিদ্ধান্ত নেন। রিজার্ভ ব্যাঙ্ককেও চলতে হচ্ছে তাঁর কথাতে। কংগ্রেসের রণদীপ সুরজেওয়ালা বলেন, ‘‘এ তো রিজার্ভ ব্যাঙ্ক নয়, রিভার্স ব্যাঙ্ক।’’ সিপিএম নেত্রী বৃন্দা কারাটের মন্তব্য, ‘‘মোদীই যে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক চালাচ্ছেন, তা স্পষ্ট।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy