রিজার্ভ ব্যাঙ্কের স্বাধীনতা বিতর্কে সরাসরি উর্জিত পটেলের হয়েই সওয়াল করলেন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন গভর্নর রঘুরাম রাজন।
নরেন্দ্র মোদী সরকার বনাম রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সংঘাতে স্পষ্ট অবস্থান নিয়ে রাজন জানিয়ে দিলেন, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ‘না’ বলার অধিকার রয়েছে। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর বা ডেপুটি গভর্নরদের কোনও রাজনৈতিক বা ব্যক্তিগত স্বার্থ নেই। তাঁরা দেশের আর্থিক স্থায়িত্ব বজায় রাখার পক্ষে মত দিচ্ছেন। তাই সরকারের উচিত, তাঁদের কথা শোনা।
লোকসভা ভোটের আগে অর্থনীতির ‘ভাল চেহারা’ তুলে ধরতে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের উপরে একগুচ্ছ বিষয়ে চাপ তৈরি করছে মোদী সরকার। সরকারের মূল দাবি, অনাদায়ী ঋণের ভারে জর্জরিত রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির নতুন ঋণ বিলির বিধিনিষেধ শিথিল করা হোক। ব্যাঙ্ক নয়, এমন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের জন্য নগদের ব্যবস্থা হোক। ঋণ শোধ করতে না পারা বিদ্যুৎ সংস্থাগুলির ক্ষেত্রে নরম পদক্ষেপ করা হোক এবং রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সিন্দুক থেকে সরকারকে আরও বেশি অর্থ দেওয়া হোক।
কিন্তু উর্জিত এর কোনওটাই মানতে নারাজ। মোদী সরকার রিজার্ভ ব্যাঙ্ক আইনের ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে গভর্নরের উপর চাপ তৈরি করায়, ডেপুটি গভর্নর বিরল আচার্য হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের স্বাধীনতাকে মর্যাদা না দিলে, আর্থিক বাজারের রোষ টের পাওয়া যাবে।
আরও পড়ুন: মোদীর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে ডাক উর্জিতকে
বিরলের সেই মতকে সমর্থন করে রাজন বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ককে মাড়িয়ে চলে যাওয়া কোনও অর্থনীতির পক্ষেই ভাল নয়।’’ রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ও সরকারের সম্পর্ক নিয়ে তিনি বলেন, ‘‘রিজার্ভ ব্যাঙ্ক গাড়ির সিটবেল্ট, সরকার গাড়ির চালক। সরকার ঠিক করতে পারে, সিটবেল্ট পড়বে কি না। কিন্তু সিটবেল্টের মাহাত্ম্য হল, তা অর্থনীতিকে ভেঙে পড়া থেকে রক্ষা করে।’’ রাজন বলেন, ‘‘রিজার্ভ ব্যাঙ্কের নজর থাকবে আর্থিক স্থায়িত্বের দিকে। তাকে ঠিক করতে হবে, আর্থিক স্থায়িত্বে ধাক্কা না দিয়ে বৃদ্ধির জন্য কতখানি রাশ আলগা করা যায়।’’ এ প্রসঙ্গে ক্রিকেটের উপমা টেনে তাঁর মন্তব্য, ‘‘বোর্ডের লক্ষ্য হবে রাহুল দ্রাবিড়ের মতো হওয়া, নভজ্যোৎ সিংহ সিধুর মতো নয়।’’
গভর্নর থাকাকালীন প্রধানমন্ত্রীর দফতরে ‘হাই প্রোফাইল’ ব্যাঙ্ক প্রতারণার মামলার তালিকা পাঠিয়েছিলেন রাজন। কেন্দ্রীয় তথ্য কমিশনার দু’দিন আগেই রাজনের সেই তালিকা প্রকাশ করার নির্দেশ দিয়েছেন পিএমও এবং অর্থ মন্ত্রককে। আজ রাজন বলেন, ‘‘কেন ওই সব নাম প্রকাশ করা যায়নি, তা নিয়ে আমার কোনও ধারণা নেই। প্রতারক ও ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি এক নয়। ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিরা টাকা শোধ করতে চান না। তবে তাঁরা ব্যাঙ্কের টাকা নিয়ে পালিয়ে যাননি।’’ এর পরেই তাঁর হুঁশিয়ারি, ‘‘যদি প্রতারকদের শাস্তি না হয়, তা হলে আরও প্রতারণা হবে। প্রতারকদের ধরতে আইনের সমস্ত ক্ষমতা কাজে লাগানো উচিত।’’ রাজনের মতে, কোনও ঋণখেলাপিকে উদ্ধার করার দরকার হলে সেটা সরকার করুক।
রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর থাকাকালীন রাজনকেও আরএসএস-এর তোপের মুখে পড়তে হয়। সেই পর্বে রাজন নিজেই বিদায় নেন। এখন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের পরিচালন বোর্ডে আরএসএস-ঘনিষ্ঠ এস গুরুমূর্তির মতো ব্যক্তিদের বসিয়েছে মোদী সরকার। গুরুমূর্তিরা নানা ভাবে গভর্নর, ডেপুটি গভর্নরদের উপর ছড়ি ঘোরানোর চেষ্টা করছেন বলে বারবার অভিযোগ উঠেছে। তাঁর ব্যাখ্যা, ‘‘বোর্ডের সদস্যদের কাজ পরামর্শ দেওয়া। রোজকার আর্থিক সিদ্ধান্তে হস্তক্ষেপ করা নয়। কিন্তু সম্প্রতি দেখছি, বোর্ডের ভূমিকা গণ্ডি পেরিয়ে যাচ্ছে। বোর্ডের মধ্যে আলোচনা নিয়েও অনেক বিতর্ক হচ্ছে।’’
তাঁর উত্তরসূরি উর্জিতের সঙ্গে সরকারের বিবাদ বিতর্কে এই প্রথম মুখ খুললেন রাজন। নিজের সময়ের উদাহরণ টেনে তিনি জানান, তাঁর টেবিলেও সরকারের অনেক চিঠি পড়ে থাকত। একটা বিষয়ে আপত্তি জানালে, সরকার বলত, ঠিক আছে। দু’দিন পরে ফের চিঠি লিখে নতুন কোনও বিষয় তোলা হত। কিন্তু রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ‘না’ বলার অধিকার ছিল। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের আর এক প্রাক্তন গভর্নর ডি সুব্বারাওয়ের স্মৃতিকথা থেকে উদ্ধৃত করে রাজন বলেন, ‘‘ওয়াই ভি রেড্ডি গভর্নর থাকাকালীন তাঁর সঙ্গে ফোনে অর্থমন্ত্রী চিদম্বরমের কথা হচ্ছিল। রেড্ডি না, না, না বলে শেষে হ্যাঁ বলেন। সুব্বারাও প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, অর্থমন্ত্রী নানা দাবি তুলছিলেন। তিনি না বলছিলেন। শেষে ‘আমার কথা শুনতে পাচ্ছেন’ জিজ্ঞাসা করায় উত্তর দেন, হ্যাঁ!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy