Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

পথশিশুদের খাবার দিতে না চেয়ে বিতর্কে রেস্তোরাঁ

পথশিশুদের নিয়ে রেস্তোরাঁয় ঢুকেছিলেন এক লেখিকা। স্বামীর জন্মদিনটা সেলিব্রেট করতে চেয়েছিলেন এ ভাবেই। কিন্তু দিল্লির কনট প্লেসের রেস্তোরাঁটি ওই বাচ্চাদের খাবার পরিবেশন করতে আপত্তি করে বলে অভিযোগ।

সংবাদ সংস্থা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৩ জুন ২০১৬ ০৯:২৮
Share: Save:

পথশিশুদের নিয়ে রেস্তোরাঁয় ঢুকেছিলেন এক লেখিকা। স্বামীর জন্মদিনটা সেলিব্রেট করতে চেয়েছিলেন এ ভাবেই। কিন্তু দিল্লির কনট প্লেসের রেস্তোরাঁটি ওই বাচ্চাদের খাবার পরিবেশন করতে আপত্তি করে বলে অভিযোগ। যা জানার পরে দিল্লির উপমুখ্যমন্ত্রী মণীশ সিসৌদিয়া জানিয়েছেন, অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত হলে রেস্তোরাঁর লাইসেন্স বাতিল করা হবে।

দরিদ্রদের বিনামূল্যে চিকিৎসা দেওয়ার শর্তে সস্তায় জমি পেয়েছিল দিল্লির বেশ কিছু হাসপাতাল। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে ওই পাঁচটি নামী হাসপাতালের বিরুদ্ধেও অভিযোগ উঠেছে, তারা দরিদ্রদের বিনামূল্যে চিকিৎসা দিচ্ছে না। তাই তারা অন্যায্য পথে যে অর্থ রোজগার করেছে, সেই সাতশো কোটি টাকা জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে দিল্লি সরকার। রাজধানীতে দু’টি ঘটনা নিয়েই সমালোচনা শুরু হয়েছে সর্ব স্তরে। রেস্তোরাঁর ঘটনাটি শুনে মণীশ সিসৌদিয়া টুইট করে বলেছেন, ‘‘এটা তো ঔপনিবেশিক মানসিকতা। সহ্য করা যায় না। দিল্লির জেলাশাসককে বলেছি সবটা জেনে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে জানাতে।’’

গত কাল সোনালি শেট্টি নামে এক লেখিকা আট জন পথশিশুকে নিয়ে দুপুরবেলা খাওয়াতে নিয়ে যান ওই রেস্তোরাঁয়। কিন্তু সেখানকার কর্মীরা তাঁদের খাবার দিতে অস্বীকার করেন বলে অভিযোগ সোনালির। তাঁর দাবি, ‘‘আমাকে নিয়ে হাসাহাসি করেন অনেকে। ভয়ও দেখান, ফের ওই রেস্তোরাঁয় যেন পা না দিই।’’ আজ সকালে সেখানে যান দিল্লির জেলাশাসক। কর্মীদের জিজ্ঞাসাবাদও করেন। সোনালি ঘটনার প্রতিবাদে ওই রেস্তোরাঁর বাইরে দশ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে অবস্থান বিক্ষোভ করেন। কিন্তু তাতে লাভ হয়নি বলে জানান সোনালি। তিনি বলেন, ‘‘ওই বাচ্চাদের নিয়ে রেস্তোরাঁয় আবার যাব। কর্তৃপক্ষ বাচ্চাদের কাছে ক্ষমা না চাওয়া পর্যন্ত প্রতিবাদ চালিয়ে যাব।’’ সেইমতো রবিবারও বাচ্চাদের নিয়ে তিনি যান। কিন্তু ফের তাঁদের ফিরিয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ।

রেস্তোরাঁর তরফে বলা হয়েছে, ‘ওই বাচ্চারা সমস্যা তৈরি করছিল। অন্য ক্রেতাদের বিরক্ত করছিল।’ সেখানকার জনসংযোগ অফিসার রোমা মহাপাত্র বলেন, ‘‘আমাদের রেস্তোরাঁয় আসা অতিথিদের কেউ যদি বিরক্ত করে, আমাদের অধিকার রয়েছে তাদের বার করে দেওয়ার। এ ক্ষেত্রে আমরা সেটাই করেছি। আমার মনে হয় না কোনও অন্যায় হয়েছে।’’ যে বাচ্চাদের বার করে দেওয়া হয়েছিল, তাদের এক জনের বক্তব্য, ‘‘কাল দিদি আমাদের খাওয়াতে নিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু ওখানে এক জন আমাদের প্রায় ধাক্কা দিয়ে বেরিয়ে যেতে বলে। তার পর আমরা অন্য জায়গায় গিয়ে খেলাম।’’

রেস্তোরাঁয় পথশিশুদের বঞ্চিত করার মতোই দরিদ্রদের বিনামূল্যে চিকিৎসা না দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে রাজধানীর পাঁচটি বেসরকারি হাসপাতালের বিরুদ্ধে। দিল্লির স্বাস্থ্য দফতরের অতিরিক্ত অধিকর্তা হেম প্রকাশ জানিয়েছেন, সাকেতে ম্যাক্স সুপার স্পেশ্যালিটি হসপিটাল, ফর্টিস হার্ট ইনস্টিটিউট, শান্তি মুকুন্দ হসপিটাল, ধর্মশিলা ক্যানসার হসপিটাল এবং পুষ্পবতী সিংহানিয়া রিসার্চ ইনস্টিটিউট— এই পাঁচটি বেসরকারি হাসপাতালকে ১৯৬০ থেকে ১৯৯০ সালের মধ্যে দরিদ্রদের বিনামূল্যে চিকিৎসা দেওয়ার শর্তে সস্তায় জমি দেওয়া হয়। কিন্তু তারা সেই শর্ত মানেনি। গত বছর ডিসেম্বরে তাদের কাছে নোটিস পাঠিয়ে জানতে চাওয়া হয়েছিল, কেন তারা শর্ত পূরণ করেনি এবং কেন সে জন্য তাদের জরিমানা করা হবে না। কিন্তু কেউই সন্তোষজনক উত্তর দিতে পারেনি বলে দাবি দিল্লির স্বাস্থ্য দফতরের অতিরিক্ত অধিকর্তার। ওই হাসপাতালগুলিতে গরিবদের বিনামূল্যে চিকিৎসা না দেওয়ার অভিযোগে ২০০৭ সালে দিল্লি হাইকোর্টে একটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয়। তার পরেই নড়েচড়ে বসে স্বাস্থ্য দফতর।

এ বার হাসপাতালগুলিকে ৯ জুলাইয়ের মধ্যে মোট সাতশো কোটি টাকা সরকারকে জমা দিতে হবে। হাসপাতালগুলির তরফে দু’টি জানিয়েছে, তারা এই নির্দেশের বিরুদ্ধে উচ্চতর আদালতে যাবে। বাকি হাসপাতাল অবশ্য এ ব্যাপারে নিরুত্তর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Restaurant street children
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE