Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
ঝাঁপাবে লস্করের আত্মঘাতী মেয়েরাও

আবার সংসদে হানার ছক জইশের

‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’-এ ঘা খেয়েছে পাকিস্তান। আইএসআই এর বদলা নিতে মরিয়া। তাদের হুকুমে তাই পনেরো বছর পর ফের ভারতের সংসদে আত্মঘাতী হামলার জন্য তৈরি হচ্ছে পাক সন্ত্রাসবাদী সংগঠন জইশ-ই-মহম্মদ।

—ফাইল চিত্র।

—ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৩ অক্টোবর ২০১৬ ০৩:৩২
Share: Save:

‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’-এ ঘা খেয়েছে পাকিস্তান। আইএসআই এর বদলা নিতে মরিয়া। তাদের হুকুমে তাই পনেরো বছর পর ফের ভারতের সংসদে আত্মঘাতী হামলার জন্য তৈরি হচ্ছে পাক সন্ত্রাসবাদী সংগঠন জইশ-ই-মহম্মদ। লস্কর-ই-তইবাও মহিলা ফিদায়েঁকে সামনে রেখে আলাদা তিনটি গোষ্ঠী বানিয়ে ভারতে বড়সড় হামলার ছক কষছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রের খবর, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতীয় সেনার ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’-এর পর পাক গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই-এর ভিত নড়বড়ে হয়ে গিয়েছে। যে কারণে হাফিজ সইদ ও সালাউদ্দিনের মতো সন্ত্রাসবাদী চাঁইকে লাহৌরে সেনা ছাউনিতে কড়া নিরাপত্তায় রাখা হয়েছে। ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ও জম্মু-কাশ্মীরের সিআইডি জানতে পেরেছে, ভারতের অভিযানের বদলা নিতে সন্ত্রাসবাদী সংগঠনগুলিকে এ দেশে বড়সড় হামলার নির্দেশ দিয়েছে আইএসআই। এ ক্ষেত্রে তাদের প্রথম নিশানা হল ভারতের সংসদ। কোনও ভাবে সংসদে হামলা করতে ব্যর্থ হলে দিল্লি সচিবালয়কেও নিশানা করা হতে পারে। অক্ষরধাম, লোটাস মন্দির, রেল স্টেশন, বাজার বা অন্য যে কোনও জনবহুল এলাকাও রয়েছে সন্ত্রাসবাদীদের নিশানায়।

বিভিন্ন সূত্রে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে খবর, সন্ত্রাসবাদীরা নিয়ন্ত্রণরেখার কাছে পাকিস্তানি রেঞ্জারের পোশাকে ঘোরাফেরা করছে। সুযোগ বুঝেই ভারতে ঢুকে হামলা চালানোর জন্য ওত পেতে আছে তারা। সব থেকে বড় হামলার ছক কষছে জইশ-ই-মহম্মদ। ২০০১-এর ১৩ ডিসেম্বর তারা আফজল গুরুর নেতৃত্বে সংসদে হামলা চালিয়েছিল। এই হামলায় পাঁচ জঙ্গিকে খতম করা গেলেও মৃত্যু হয় ৬ দিল্লি পুলিশকর্মী, ও সংসদের ২ নিরাপত্তা কর্মী ও এক জন মালির।

সন্ত্রাসবাদীদের কথাবার্তায় আড়ি পেতে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা জানতে পেরেছে, ভারতে হামলা চালানোর জন্য লস্কর-ই-তইবা যে তিনটি আত্মঘাতী গোষ্ঠী তৈরি করেছে, তার একটির নেতৃত্ব দেবে ফতিমা বলে এক মহিলা। বাকি দু’টির মাথায় রয়েছে আবু ওসামা এবং হাম্মাদ।

পাঠানকোটে জঙ্গি হানার পর থকেই জইশ পাণ্ডা মাসুদ আজহারকে ‘নিষিদ্ধ সন্ত্রাসবাদী’ ঘোষণার জন্য রাষ্ট্রপুঞ্জে চাপ দিয়ে যাচ্ছে ভারত। কিন্তু পাকিস্তানের অনুরোধে তাতে বাদ সেধেছে চিন। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ সম্প্রতি তাঁদের দলের বৈঠকে কাশ্মীরে নিহত সন্ত্রাসবাদী বুরহান ওয়ানির প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করেছেন। পাকিস্তান এই ভাবে প্রকাশ্যেই সন্ত্রাসে মদত জুগিয়ে চললেও চিন কিন্তু তাদের পাশেই আছে। মাসুদ আজহারকে নিয়ে ভারতের বক্তব্য উড়িয়ে নয়াদিল্লির বিরুদ্ধে মন্তব্য করেছে চিন। ব্রিকস সম্মেলনে চিনা রাষ্ট্রপতির সফরের আগেই বেজিংয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ভারতকে পরমাণু সরবরাহকারী দেশগুলির গোষ্ঠী (এনএসজি)-র সদস্য করার বিষয়টি নিয়ে আলোচনায় তারা রাজি। কিন্তু সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলার নামে ভারত যেন রাজনৈতিক ফায়দা তোলার চেষ্টা না করে।

বিদেশ মন্ত্রকের স্পষ্ট বক্তব্য, এনএসজি-র বিষয়টি নিয়ে চিনের সঙ্গে অবশ্যই আলোচনা করবে ভারত। কিন্তু সন্ত্রাসবাদের মোকাবিলা করাই এখন নয়াদিল্লির কাছে সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জ। রোজই জম্মু-কাশ্মীরে জঙ্গি পাচার করছে পাকিস্তান। শ্রীনগরের কাছে পাম্পোরে সন্ত্রাসবাদী হামলার মোকাবিলা করেছে কম্যান্ডোরা। জঙ্গিদের দিয়ে পাকিস্তান এ দেশে বড়সড় ফিদায়েঁ হামলার ছক কষছে জেনে দিল্লি-সহ দেশ জুড়ে সতর্কতা জারি করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রসচিব তথা সাংসদ আর কে সিংহ বলেছেন, “যদি এ ধরনের কোনও হামলার চেষ্টা হয়, সেটা হবে চরম সীমা (রেড লাইন) পেরিয়ে যাওয়া এবং আমাদের উপর যুদ্ধ চাপিয়ে দেওয়া। এর আগে সংসদ হামলার পর সীমান্তে সেনা পাঠানো হয়েছিল, কিন্তু হামলা করা হয়নি। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সেই সময়ই সেনা অভিযান করা উচিত ছিল।”

ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা কিছু দিন আগেই জানতে পেরেছিল, জইশের দুই আত্মঘাতী জঙ্গি কাশ্মীর থেকে আপেলের ট্রাকে করে দিল্লি রওনা দিয়েছে। কালাশনিকভ-সহ বিভিন্ন অত্যাধুনিক অস্ত্রশত্র রয়েছে এই জঙ্গিদের কাছে। গোয়েন্দারা এখনও নিশ্চিত নন, দিল্লিতে বড় হামলার ছকের সঙ্গে ভারতে ঢুকে পড়া এই দুই জঙ্গির প্রত্যক্ষ কোনও যোগ আছে কি না। নাকি ফের একটা সংসদ হামলার জন্য জঙ্গিরা ইতিমধ্যেই রাজধানীতে ঢুকে বসে আছে! আপেলের ট্রাকে দুই জঙ্গি দিল্লিতে আসছে খবর পেয়েই রাজধানীতে ঢোকা ও বেরোনোর সব ক’টি পথে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। তল্লাশি করা হচ্ছে প্রতিটি গাড়ি।

পাকিস্তানের ছায়াযুদ্ধের অঙ্গ হিসেবে লড়াই চলছে সাইবার জগতেও। উরির হামলার পরই মনোজ ঠাকুর নামে হিমাচলপ্রদেশের এক হেড কনস্টেবলের একটি কবিতার ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল। দেশপ্রেমের কবিতা লেখা ও প্রচার করার জন্য মনোজকে খুন করার হুমকি দেওয়া হয়েছে। ফরমান খান নামে দুবাইয়ের এক ব্যক্তি ফেসবুকে এই হুমকি দিয়েছে। মনোজের জবাব, কোনও হুমকিকেই তিনি পরোয়া করেন না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

parliament Isis Jaish-e-Mohammed surgical strike
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE