Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

গোরখপুরে ‘ভুল’ রামায়ণ শোধরাতে চায় আরএসএস

আরএসএসের ‘অখিল ভারতীয় ইতিহাস সংকলন যোজনা’র সংগঠন সচিব বালমুকুন্দ পাণ্ডের মতে, ‘যুদ্ধকাণ্ডে’র পর রামায়ণ আর বাল্মীকির রচনা নয়। ‘উত্তরাকাণ্ড’ যোগ হয়েছে পরে।

দিগন্ত বন্দ্যোপাধ্যায়
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১০ জুলাই ২০১৭ ০৩:৪৪
Share: Save:

রামচন্দ্রের অগ্নিপরীক্ষা। আয়োজক আরএসএস।

রাম কি সত্যিই সীতাকে বনবাসে পাঠিয়েছিলেন? সীতার অগ্নিপরীক্ষা নিয়েছিলেন? না কি সবই রটনা? রামায়ণে প্রক্ষিপ্ত? উত্তর খুঁজতে ১২-১৩ অগস্ট গোরখপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্মেলনের আয়োজন করছে আরএসএস। অযোধ্যায় রামমন্দির নির্মাণের আশায় বুক বেঁধে আছে তারা। এখন রামচন্দ্রকে নতুন করে মেলে ধরতে বদলের চেষ্টা হচ্ছে রামের আখ্যানও।

আরএসএসের ‘অখিল ভারতীয় ইতিহাস সংকলন যোজনা’র সংগঠন সচিব বালমুকুন্দ পাণ্ডের মতে, ‘যুদ্ধকাণ্ডে’র পর রামায়ণ আর বাল্মীকির রচনা নয়। ‘উত্তরাকাণ্ড’ যোগ হয়েছে পরে। সেখানেই যাবতীয় বিকৃতি ঘটেছে। সীতার বনবাস থেকে অগ্নিপরীক্ষা— রামের ‘নারীবিরোধী’ ভাবমূর্তি ফুটে উঠেছে।

বিশ্বে প্রায় ৩ হাজার রামায়ণ লেখা হয়েছে। ‘উত্তরাকাণ্ড’ পরে যোগ হয়েছে, অনেকেই তা মানেন। কিন্তু কেন তা বদলের চেষ্টা? সঙ্ঘ কি মনে করে, রামের ‘পুরুষতান্ত্রিক’ ভাবমূর্তি এ যুগে অচল?

আরও পড়ুন: অভাবের ঠেলা, লাঙল টানছে নাবালিকারাই

সঙ্ঘের যুক্তি, রাবণের স্ত্রী মন্দোদরীকে যে রাম পটমহিষী করেছেন, অহল্যার সামাজিক প্রতিষ্ঠা দিয়েছেন, তিনি কী করে সীতাকে বনবাস বা অগ্নিপরীক্ষায় পাঠাতে পারেন? সঙ্ঘের এক নেতার অভিযোগ, সম্রাট অশোকের জমানার পর বৌদ্ধ-প্রচারের জন্য রামকে খাটো করা হয়েছে। ১৯৫০ সালের পর থেকে কমিউনিস্টরা সেই বিকৃত রামায়ণ বেশি করে প্রচার করেছেন। যদিও অনেকেরই প্রশ্ন, অগ্নিপরীক্ষা তো শুধু উত্তরাকাণ্ডে নেই! তার আগেও তো সীতাকে অগ্নিপরীক্ষা দিতে হয়েছে! তার কী হবে?

আপাতত ১৬টি সংশোধনের জায়গা চিহ্নিত করে জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃতের অধ্যাপক সন্তোষ কুমার শুক্লকে আহ্বায়ক করে সম্মেলন হচ্ছে। কিন্তু সেই বিভাগেরই অধ্যাপক সত্যমূর্তির প্রশ্ন, ‘‘উত্তরাকাণ্ড পরে লেখা হলেও সেটি বাল্মীকি রামায়ণেরই অঙ্গ। আগেই যদি কেউ উপসংহার স্থির করে ফেলে, তা হলে আলোচনার কী প্রয়োজন?’’

নবনীতা দেবসেন তেলুগু রামায়ণ, বাংলা চন্দ্রাবতী রামায়ণ নিয়ে কাজ করেছেন। তিনি কোনও কিছুই প্রক্ষিপ্ত মনে করেন না। কারণ, রামায়ণ হোক বা মহাভারত হাজার হাজার বছর ধরে মুখে-মুখে ফিরেছে। সময়ের ফেরে কিছু যোগ হয়, কিছু বাদ যায়। তাঁর কথায়, ‘‘প্রক্ষিপ্ত বলে উত্তরাকাণ্ড বাদ গেলে একটি ব্রাহ্মণ্যবাদী ছিবড়ে পড়ে থাকে।’’ আর নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ী মনে করালেন, উত্তরাকাণ্ড না থাকলে শম্বুকবধ বা লব-কুশও থাকে না।

কিষ্কিন্ধ্যাকাণ্ডে বালীকে পিছন থেকে তির মারা নিয়েও বিতর্ক রয়েছে। তা-ও কি বদলাবে? সঙ্ঘের যুক্তি, ভাইয়ের স্ত্রীর প্রতি অনুচিত ব্যবহারের জন্য বালীকে শাস্তি দিয়েছিলেন রাম। কিন্তু ‘উত্তরাকাণ্ডে’র বিকৃতি সংশোধন করা দরকার। প্রয়োজনে মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকেরও দ্বারস্থ হবে তারা।

(সহ-প্রতিবেদন: গৌতম চক্রবর্তী)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE