নন্দিনী ভৌমিক নিজের মতামত জানালেন।
ধর্মীয় আচার পালনে ঋতুস্রাব কোনও বাধা নয়। স্বাভাবিক প্রাকৃতিক নিয়ম কেনই বা কোনও অনুষ্ঠানে বাধা হয়ে দাঁড়াবে! বিভিন্ন মহলেই নাগরিকেরা ঋতুস্রাবের ভ্রান্ত ধারণা কাটানোর চেষ্টা করছেন। সুপ্রিম কোর্টের রায় তাঁদের পাশে থাকার আশ্বাস দিল। তবে, সাধারণ মানুষের সমস্ত ছুতমার্গ কাটিয়ে উঠতে আরও কিছুটা সময় লাগবে। কয়েক শতকের ধারণা একদিনে বদলে যাবে না।
ঋতুস্রাবের সময় মহিলারা অপবিত্র বলে দাবি করা হয়। তাই শবরীমালায় দশের বেশি ও পঞ্চাশের কম বয়সি মহিলাদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা ছিল। ঋতুস্রাব ও অপবিত্রতার ধারণা সম্পূর্ণ ভ্রান্ত। বৈদিক সাহিত্য কখনও ঋতুস্রাবের অপবিত্রতা নিয়ে মাথা ঘামায়নি। এই ধরনের অবৈজ্ঞানিক, অযৌক্তিক ভাবনা সে সময় ছিল না। জাত-পাত, মহিলাদের পর্দাপ্রথার মতো কুসংস্কার সমাজে প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গে অবৈজ্ঞানিক ধারণারও প্রবেশ ঘটে। পুজো করা কিংবা ধর্মীয় অনুষ্ঠানে ঋতুস্রাব কোনও বাধা নয়। সংস্কৃত শ্লোক, বৈদিক সাহিত্য বিশ্লেষণ করলে এ দেশের ঐতিহ্যকে চেনা যাবে। অবৈজ্ঞানিক, অযৌক্তিক কথা বললে সেই ঐতিহ্যকেই নষ্ট করা হয়।
এখনও বহু পরিবারে ঋতুস্রাবের সময় মেয়েদের পুজোর ঘরে প্রবেশাধিকার থাকে না। অঞ্জলি দেওয়াও নিষেধ। কোনও যুক্তি নেই। মাসের ওই নির্দিষ্ট সময়ে মেয়েরা অপবিত্র হয় না। বরং সেই সময় গর্বের। কারণ, ওই প্রাকৃতিক নিয়মের মধ্যেই পরবর্তী প্রজন্মকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা লুকিয়ে রয়েছে।
আমি এবং আমার মতো কয়েক জন যখন বিয়েতে পৌরোহিত্যের কাজ শুরু করেছিলাম, তখন অনেকেই এই পবিত্রতা-অপবিত্রতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। কিন্তু যাঁদের সন্তানের বিয়ে, তাঁরা প্রাকৃতিক নিয়মকেই প্রাধান্য দিয়েছিলেন। অযৌক্তিক কথাবার্তাকে গুরুত্বই দেননি।
তারপর দশ বছর কেটে গিয়েছে। ৪০টির মতো বিয়ে দিয়েছি। বলতেই হবে যে এখন তুলনায় অনেক বেশি মানুষ ধর্মীয় আচরণ নিয়ে নতুন ভাবে ভাবতে শিখেছেন। সেটা অন্তত পরিবর্তনের আশা বাড়িয়ে দিচ্ছে।
লেখিকা যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে সংস্কৃতের অতিথি-অধ্যাপক
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy