Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
বরাকের গর্ব

সামান্তা চায় শিক্ষক হতে, শমীক ডাক্তার

দু’নম্বরের জন্য মাধ্যমিকের মেধা তালিকায় স্থান করে নিতে পারেনি শিলচর সাউথ পয়েন্ট স্কুলের ছাত্র শমীক দে। কোনও আক্ষেপ নেই তার। আফশোস করছেন না তার মা-বাবাও। তাঁদের গর্ব, ছেলে বাংলায় রাজ্য-সেরা। ১০০ তে ৯৬। স্কুলের অধ্যক্ষা জয়া দেব এবং অন্যান্য শিক্ষক-শিক্ষিকারা অবশ্য তার জন্য দুঃখ প্রকাশ করছেন। অধ্যক্ষার আক্ষেপ, ‘‘ইস্, আর দুই নম্বর পেয়ে গেলেই মেধা তালিকায় ঢুকে যেত শমীক!’’

সামান্তা দে ও শমীক দে।

সামান্তা দে ও শমীক দে।

উত্তম সাহা
শিলচর শেষ আপডেট: ০৩ জুন ২০১৫ ০৩:২৩
Share: Save:

দু’নম্বরের জন্য মাধ্যমিকের মেধা তালিকায় স্থান করে নিতে পারেনি শিলচর সাউথ পয়েন্ট স্কুলের ছাত্র শমীক দে। কোনও আক্ষেপ নেই তার। আফশোস করছেন না তার মা-বাবাও। তাঁদের গর্ব, ছেলে বাংলায় রাজ্য-সেরা। ১০০ তে ৯৬।

স্কুলের অধ্যক্ষা জয়া দেব এবং অন্যান্য শিক্ষক-শিক্ষিকারা অবশ্য তার জন্য দুঃখ প্রকাশ করছেন। অধ্যক্ষার আক্ষেপ, ‘‘ইস্, আর দুই নম্বর পেয়ে গেলেই মেধা তালিকায় ঢুকে যেত শমীক!’’ পাশে দাঁড়িয়ে নীচু গলায় শমীকের জবাব, ‘‘এতটা আশা করিনি। ৫৭৫ পেয়েছি, ভালই লাগছে। বাংলায় ৯৬।’’

শমীকের বাবা শিশির দে ও মা অর্পিতা দে, দু’জনই জীবন বিমা নিগমে চাকরি করেন। তাঁদের কথায়, ‘‘পরীক্ষার পর অঙ্কে ১০০ পাবে না বুঝতে পেরেই নিশ্চিত হয়ে যাই, মেধা তালিকায় ও থাকছে না। তাই দুইয়ের জন্য আটকে যাওয়ায় আফশোস নেই। বরং বেশি ভাল লাগছে, বাংলায় সারা রাজ্যের মধ্যে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছে।’’ মা অর্পিতা দেবী একই সঙ্গে এটাও জানিয়ে দিলেন, বাংলায় শমীকের কিন্তু কোনও গৃহশিক্ষক ছিল না। কী করে সম্ভব হল বাংলায় ৯৬? বাংলার প্রতি ছেলের আগ্রহকেই প্রধান কারণ বলে মনে করছেন শিশিরবাবু। তিনি জানান, শমীক নিয়মিত বাংলা গল্প-উপন্যাস পড়ে। পুজো সংখ্যা সবক’টি তার পড়া চাই-ই চাই।

বাংলায় রাজ্যসেরা হয়েও শমীকের লক্ষ্য ডাক্তারি পড়বে। মাধ্যমিক পরীক্ষায় যারা মেধা তালিকায় স্থান পেয়েছে, বা তার মতো কাছাকাছি, সবার অবশ্য ও-ই লক্ষ্য, ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হবে। মা-বাবারাও তাই চান। দু’একজন আইএএস হওয়ার স্বপ্নও দেখেন। সে জায়গায় ব্যতিক্রম শিলচর কলেজিয়েট স্কুলের ছাত্রী সামান্তা দে। রাজ্যের মেধা তালিকায় নবম স্থানাধিকারী। মোট ৩২ জনের মেধা তালিকায় দক্ষিণ অসমের একমাত্র প্রতিনিধি। বাবা সুকান্ত দে ফার্মাসিস্ট। তবে সামান্তার লক্ষ্য, বড় হয়ে শিক্ষকতা করবে। উচ্চ মাধ্যমিকে আরও ভাল ফল করতে চায় সে। কিন্তু ডাক্তারি বা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে আগ্রহী নয় সামান্তা। সাধারণ পড়াশোনা করে অসাধারণ কিছু করার স্বপ্ন দেখে সামান্তা। মা সোমা দে গৃহশিক্ষিকা। মেয়ের পাশে দাঁড়িয়ে বলেন, ‘‘ছোটবেলা থেকেই ও বলত টিচার হবে।’’

বরাক উপত্যকা বঙ্গ সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলনের পক্ষ থেকে নবম স্থানাধিকারী সামান্তা ও বাংলায় রাজ্যসেরা শমীককে ধন্যবাদ জানানো হয়েছে। সংগঠনের কেন্দ্রীয় সম্পাদক গৌতম প্রসাদ দত্ত বলেন, শমীক খুব পরিশ্রমী ছেলে। বাংলায় ৯৬ পাওয়া বড় কঠিন। বাংলার শিক্ষক-পরীক্ষকরা ছাত্রদের সব সময়ই কম নম্বর দেন বলে অভিযোগ করেন তিনি। ছাত্রছাত্রীদের বাংলাভাষার প্রতি আগ্রহী করে তুলতে কার্পণ্য ছাড়তে শিক্ষকদের অনুরোধ করেন তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

uttam saha barak silchar madhyamik
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE