Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

চব্বিশ বছর পরে মুক্ত তিন কাশ্মীরি

লতিফ আহমেদ, মির্জা নিসার হুসেন এবং মহম্মদ আলি বাট। দিল্লির লাজপত নগর বাজার বিস্ফোরণে কাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে এই তিন কাশ্মীরিকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ।

শ্রীনগরের বাড়িতে মায়ের সঙ্গে লতিফ আহমেদ। নিজস্ব চিত্র

শ্রীনগরের বাড়িতে মায়ের সঙ্গে লতিফ আহমেদ। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
শ্রীনগর শেষ আপডেট: ২৫ জুলাই ২০১৯ ০২:২৫
Share: Save:

বিস্ফোরণ কাণ্ডে জড়িত থাকার ‘অপরাধে’ দীর্ঘ চব্বিশ বছর জেল খেটেছেন তাঁরা। অবশেষে ওই তিন কাশ্মীরিকে মুক্তি দিল দিল্লি এবং রাজস্থান হাইকোর্ট। আজ শ্রীনগরে ওই তিন জনের পাড়ায় শুরু হয়েছে উল্লাস।

লতিফ আহমেদ, মির্জা নিসার হুসেন এবং মহম্মদ আলি বাট। দিল্লির লাজপত নগর বাজার বিস্ফোরণে কাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে এই তিন কাশ্মীরিকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। ১৯৯৬ সালের ২১ মে-র ওই বিস্ফোরণে ১৩ জনের মৃত্যু হয়। ৩৯ জন আহত হন। ঘটনার আগে অস্ত্র ও বিস্ফোরক জোগাড়ে ওই তিন জনের হাত রয়েছে বলে মামলা দায়ের করে পুলিশ। নির্দোষ হওয়া সত্ত্বেও প্রথমে জয়পুর এবং তার পরে তিহাড় জেলে কম করে ২৪ বছর কাটিয়েছেন শ্রীনগরের বাসিন্দা লতিফ, মির্জা এবং মহম্মদ।

সম্প্রতি রাজস্থান হাইকোর্ট এক রায়ে জানায়, অস্ত্র জোগাড়ে ওই তিন যুবকের হাত থাকার প্রমাণ মেলেনি। অবিলম্বে যেন তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়। দিল্লি হাইকোর্টও একই রায় দেয়। কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে আজ বাড়ি ফিরেছেন এই তিন জন। তবে এত বছর পরিবার-বন্ধুবান্ধব বিচ্ছিন্ন এই তিন জনেরই এখন খুব কাছের মানুষদেরও অচেনা লাগছে।

শ্রীনগরের শামসওয়ারি এলাকায় থাকে লতিফের পরিবার। তাঁর ফেরার খবর পেয়ে বাড়িতে ভিড় করেছেন বহু আত্মীয় আর বন্ধু। সঙ্গে ফুলের তোড়া, মালা, মিষ্টি। জেলে বন্দি থাকাকালীন এক বার লতিফকে দেখে ফেরার পথে মৃত্যু হয় তাঁর বাবার। এত বছর পরে জঙ্গি তকমা মুক্ত ছেলেকে ফিরে পেয়ে এক নাগাড়ে কেঁদে চলেছেন তাঁর মা। বললেন, ‘‘সব আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম। সব শুনানির পরেই বলা হত, এর পরে আরও শুনানি আছে। ঈশ্বর ছাড়া আর কারও উপরে ভরসা ছিল না।’’ লতিফের দাবি, তাঁর মতো আরও অনেক কাশ্মীরিকেই বিনা দোষে জয়পুরের জেলে বন্দি থাকতে হচ্ছে। বললেন, ‘‘মনে হচ্ছে দীর্ঘদিন ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখছিলাম। এত দিনে জীবন ফিরে পেলাম।’’

জেলে থাকাকালীন মহম্মদ আলি বাটের বাবা-মা দু’জনেই মারা গিয়েছেন। হাসান্নাবাদের বাড়িতে পরিবারের বাকিরা তাঁকে স্বাগত জানাতে হাজির ছিলেন। মহম্মদের কথায়, ‘‘নেপাল থেকে প্রথমে আটক করা হয়েছিল আমায়। কার্পেট বেচতাম ওখানে। গ্রেফতারির পরে জেল হয়। ভেবেছিলাম জীবদ্দশায় হয়তো পরিবারের বাকিদের আর দেখতে পাব না। ঈশ্বরের কৃপায় ফের সবাইকে দেখতে পাচ্ছি। তবে অনেককেই এখন অচেনা লাগছে।’’

মির্জার দাবি, তাঁকেও নেপাল থেকে ধরা হয়েছিল। তখন তাঁর বয়স সতেরো। আজ ফতেহ কাদাল এলাকায় তাঁর বাড়িতেও উপচে পড়ছে ভিড়। মির্জার বক্তব্য, ‘‘শেষ পর্যন্ত আমরা নির্দোষ প্রমাণিত হলাম। চব্বিশ বছর বিনা অপরাধে জেলে আটক থেকেছি। সব আশা শেষ হয়ে গিয়েছিল। শুধু ঈশ্বরে আস্থা রেখেছি এতগুলো বছর।’’

এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও।সাবস্ক্রাইব করুনআমাদেরYouTube Channel - এ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Kashmir Samleti blast case
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE