Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪
National News

হাওয়া ঘুরতেই প্রকাশ্যে জোটের ফাটল, বিজেপির বিরুদ্ধে সরব একাধিক শরিক

প্রায় গোটা বিরোধী পক্ষ এক হয়েছে বিজেপি-র বিরুদ্ধে। তার জেরে উপনির্বাচনে জোরদার ধাক্কা খেয়েছে মোদী-শাহ ব্রিগেড। এ বার ধাক্কা ভিতর থেকেও। ফলপ্রকাশের পরে ২৪ ঘণ্টাও কাটেনি। এনডিএ-র বড় শরিক বিজেপির বিরুদ্ধে মুখ খুলে দিল একাধিক শরিক

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০১ জুন ২০১৮ ১৬:৫৩
Share: Save:

একা রামে রক্ষে নেই। এ বার সুগ্রীব দোসর। তাতেও শেষ নয়, উষ্মার আঁচ প্রাসাদের অন্দরেও।

প্রায় গোটা বিরোধী পক্ষ এক হয়েছে বিজেপি-র বিরুদ্ধে। তার জেরে উপনির্বাচনে জোরদার ধাক্কা খেয়েছে মোদী-শাহ ব্রিগেড। এ বার ধাক্কা ভিতর থেকেও। ফলপ্রকাশের পরে ২৪ ঘণ্টাও কাটেনি। এনডিএ-র বড় শরিক বিজেপির বিরুদ্ধে মুখ খুলে দিল একাধিক শরিক। সমালোচনায় সরব হলেন প্রবীণ বিজেপি নেতা তথা প্রাক্তন সাংসদ চন্দন মিত্রও।

লোকসভায় বিজেপি একাই নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ। সরকার টিকিয়ে রাখতে কোনও শরিকের উপরে নির্ভর করতে হয় না বিজেপি-কে। ২০১৪ সালে সরকার গঠন করার সময়ে এই নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা বিজেপির ‘প্লাস পয়েন্ট’ ছিল। চার বছর কাটিয়ে সেটাই ‘মাইনাস পয়েন্ট’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। একাই নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়ার ‘দর্পে’ এনডিএ-র অন্য শরিকদের বিন্দুমাত্র গুরুত্ব দিচ্ছে না বিজেপি, এমন গুঞ্জন এনডিএ-র অন্দরে ছিলই। কিন্তু একের পর এক নির্বাচনে যে সাফল্য বিজেপি পাচ্ছিল, তার দিকে তাকিয়ে মুখ বন্ধ রাখতে বাধ্য হচ্ছিল শরিক দলগুলো। হাওয়া ঘোরার ইঙ্গিত মিলতেই বিজেপিকে দুষতে শুরু করে দিলেন একাধিক শরিক নেত। বড় শরিকের পাশে দাঁড়ানো দূরের কথা, হারের দায় বিজেপির ঘাড়েই চাপাতে শুরু করলেন তাঁরা।

বিহারে বিজেপি বড় শরিক নয়, বড় নীতীশ কুমারের দল জেডি(ইউ)। আরজেডি এবং কংগ্রেসের সঙ্গে হাত মিলিয়ে বিধানসভা নির্বাচনে জিতেছিলেন নীতীশ। কিন্তু সরকার গঠনের বছর ঘুরতে না ঘুরতেই জোট ভেঙে দিয়ে নীতীশ এনডিএ-তে সামিল হন এবং বিজেপি-কে সঙ্গে নিয়ে বিহারে নতুন সরকার গড়েন। এই ‘ডিগবাজির’ পরে নীতীশকে ‘বিশ্বাসঘাতক’ তকমা দিয়েছে আরজেডি-কংগ্রেস। নীতীশের ভাবমূর্তিতে বেশ আঘাত লেগেছে। কিন্তু বিজেপির হাত ধরার জন্য এত বড় মূল্য চুকিয়েও এনডিএ-তে উপযুক্ত গুরুত্ব পাচ্ছেন না নীতীশ কুমার। গুঞ্জন ছিল জেডি(ইউ)-এর অন্দরে। উপনির্বাচনের ফল প্রকাশিত হতেই মুখ খুলল জেডি(ইউ)। নানা কারণে দেশে ‘উল্লেখযোগ্য ক্ষোভ’ তৈরি হয়েছে, বিজেপি সে ক্ষোভকে গুরুত্ব দিয়ে দেখতেই পারেনি। এমনই মন্তব্য করা হয়েছে জেডি(ইউ)-এর তরফে।

বিহারের একটি বিধানসভা আসনে উপনির্বাচন হয়েছিল এই দফায়। সেই জোকিহাট আসনে এনডিএ-র তরফ থেকে জেডি(ইউ) প্রার্থী দিয়েছিল। সে প্রার্থী হেরেছেন। জিতেছে লালুর দল আরজেডি। এই পরাজয়ের দায় বিজেপির উপরেই চাপাতে শুরু করেছে জেডি(ইউ)। উপনির্বাচনে বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ-র ধাক্কা খাওয়ার অন্যতম কারণ হল পেট্রল-ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধি। বলছেন জেডি(ইউ) নেতারা।

অগোছালো হয়ে গিয়েছে ঘর। ২০১৯-এর আগে ঘর গুছিয়ে ঘুরে দাঁড়ানো যাবে তো? ভাবতেই হচ্ছে মোদী-শাহ জুটিকে। —টুইটার।

হারের পরে বিজেপির বিরুদ্ধে মুখ খোলার কারণটা কী, তা-ও ইঙ্গিতে বুঝিয়ে দিয়েছেন জেডি(ইউ)-এর অন্যতম সিনিয়র নেতা তথা নীতীশ কুমারের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ কে সি ত্যাগী। ‘‘এনডিএ একটা বৃহৎ জোট এবং আমরা আশা করি বড় শরিকের নেতা হিসেবে অমিত শাহ অন্য শরিকদের সঙ্গে উন্নততর যোগাযোগ রেখে চলার বিষয়ে উদ্যোগী হবেন,’’— বলেছেন ত্যাগী। সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রশ্নে বা দাবি-দাওয়া সংক্রান্ত বিষয়ে শরিক দলগুলির মতামতকে যে অমিত শাহ কোনও গুরুত্বই দেন না, কে সি ত্যাগী তা বেশ স্পষ্ট করে বুঝিয়ে দিয়েছেন। বিজেপি যদি শরিক দলগুলিকে উপযুক্ত গুরুত্ব দিয়ে চলত, তা হলে উপনির্বাচনে হারের দায় হয়তো বিজেপির ঘাড়ে তাঁরা না-ও চাপাতে পারতেন, এমন ইঙ্গিতও রয়েছে জেডি(ইউ) নেতার মন্তব্যে।

শুধু নীতীশের দল নয়, বিহারে বিজেপির আর এক শরিক তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী উপেন্দ্র কুশওয়াহার দল রাষ্ট্রীয় লোক সমতা পার্টিও (আরএলএসপি) বড় শরিকের সমালোচনায় সরব হয়েছে। নীতীশের দল তা-ও কিছুটা রেখেঢেকে সমালোচনা করেছে। আরএলএসপি-র আক্রমণে কিন্তু কোনও রাখঢাক নেই। সরাসরি বিজেপির বিরুদ্ধে ঔদ্ধত্যের অভিযোগ তুলেছে তারা। ‘এনডিএর একটা অংশে অসন্তোষ যে বেশ কিছু দিন ধরেই বাড়ছে, তা আর কোনও গোপন কথা নয়... বিজেপি যে দাদাগিরি চালায়, তার জেরেই মূলত এই অসন্তোষ।’— উপেন্দ্র কুশওয়াহার দল বিবৃতি প্রকাশ করে এমন মন্তব্য করেছে।

আরও পড়ুন: ধর্মের কল আখে হারে

গোদের উপর বিষফোঁড়ার মতো এসেছে চন্দন মিত্রের মন্তব্য। প্রবীণ বিজেপি নেতা চন্দন সাংসদ ছিলেন। ছিলেন বাজপেয়ীর ঘনিষ্ঠও। মোদী-অমিত শাহের জমানায় ক্ষমতার বৃত্ত থেকে চন্দন কিছুটা দূরে। কিন্তু দলের বিদ্বৎ মুখ হিসেবে তিনি এখনও বেশ গুরুত্বপূর্ণ।

উপনির্বাচনী ধাক্কার পরে এ হেন চন্দন মিত্রের মুখে যা শোনা গেল, তা কার্যত শরিক দলগুলির কথার প্রতিধ্বনি। কোনও কোনও অংশে শরিকদের চেয়েও চড়া চন্দনের বয়ান। সংবাদমাধ্যমে হারের কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে পেট্রল-ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধি প্রসঙ্গে চন্দন অত্যন্ত কঠোর মন্তব্য করেছেন। টানা ১৬ দিন ধরে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার পরে ১ পয়সা দাম কমানোর প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেছেন, ‘‘এটা একটা নিষ্ঠুর রসিকতা।’’

আরও পড়ুন: বিরোধী জোট ভাঙতে ছকের সন্ধান

শরিক দলগুলির অসন্তোষ প্রসঙ্গেও মুখ খুলেছেন প্রাক্তন বিজেপি সাংসদ। বিজেপি যত আসনই পাক, শরিকরা সব সময়ই খুব গুরুত্বপূর্ণ, মন্তব্য চন্দনের। তিনি বলেছেন, ‘‘টিডিপি কেন জোট ছেড়ে বেরিয়ে গেল? তারা খুব গুরুত্বপূর্ণ শরিক ছিল। শিবসেনা হুঁশিয়ারি দিচ্ছে কেন? খতিয়ে দেখা জরুরি।’’

বিজেপি কৃষক অসন্তোষকে গুরুত্ব দেয়নি বলে কৈরানাতে হেরেছে। ব্যাখ্যা চন্দনের। বিরোধী দলগুলি ঐক্যবদ্ধ থাকলে ২০১৯-এ বিজেপির লড়াই খুব কঠিন হবে বলে তাঁর মত। নরেন্দ্র মোদী বা অমিত শাহের নাম করে কোনও পরামর্শ দেননি চন্দন। তবে, শরিক দলগুলির প্রতি বিজেপির মনোভাব ২০১৯-এর আগে বদলানো অত্যন্ত জরুরি বলেই মন্তব্য করেছেন তিনি।

পরিস্থিতি যে মোদী-শাহ জুটির জন্য ক্রমশ কঠিন হচ্ছে, উপনির্বাচনের পরে তা আরও স্পষ্ট হয়ে গেল। জ্বালানি তেল বা রান্নার গ্যাসের দাম হোক বা কৃষি নীতি— সরকারের বিরুদ্ধে অসন্তোষ যে নানা বিষয়ে, তা পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে। গোটা বিরোধী শিবির ঐক্যবদ্ধ লড়াইয়ের পথে। কিন্তু উল্টোদিকে বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ-তে ছন্নছাড়া দশা। চাপ বাড়ছে ৬-এ দীনদয়াল উপাধ্যায় মার্গের উপরে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE