অমিত শাহ ও স্মৃতি ইরানি লোকসভা ভোটে জেতার পরই গুজরাতের দু’টি আসন খালি হয়। সেই দুই আসনের উপনির্বাচন নিয়েই বিতর্ক। —ফাইল চিত্র
লোকসভা ভোটে বিপর্যয়ের পর এ বার রাজ্যসভার ভোট নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে ধাক্কা খেল কংগ্রেস। গুজরাতে দু’টি রাজ্যসভা আসনের ভোট এক দিনে করার দাবি খারিজ করে দিয়ে শীর্ষ আদালত জানিয়ে দিল, নির্বাচন কমিশনের নির্ঘণ্ট ঘোষণার পর তাতে হস্তক্ষেপ করতে পারে না আদালত। প্রয়োজনে ভোট শেষ হওয়া যাওয়ার পরে নির্বাচনী পিটিশন দাখিল করা যেতে পারে। কংগ্রেসের অভিযোগ ছিল, একই ভোটের জেরে খালি হওয়া আসনে দু’দিনে উপনির্বাচন করা বেআইনি ও স্বেচ্ছাচারিতার নামান্তর। দলের নেতাদের যুক্তি ছিল, এক দিনে দু’টি আসনের নির্বাচন হলে একটিতে তাঁদের প্রার্থীর জয় কার্যত নিশ্চিত ছিল। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট বিষয়টিতে হস্তক্ষেপই করেনি।
অমিত শাহ এবং স্মৃতি ইরানি দু’জনই গুজরাত থেকে নির্বাচিত রাজ্যসভার সাংসদ ছিলেন। লোকসভা ভোটে অমিত প্রার্থী হয়েছিলেন গুজরাতের আমদাবাদ কেন্দ্র থেকে। আর স্মৃতি অমেঠীতে রাহুলের বিপরীতে দাঁড়িয়েছিলেন। দু’জনই জিতে এখন লোকসভার সাংসদ। ফলে গুজরাতের ওই দু’টি আসনে উপনির্বাচন অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়েছে। কিন্তু এই দুই আসনে আলাদা আলাদা দিনে অর্থাৎ দু’দিনে ৫ এবং ৬ জুলাই উপনির্বাচন করানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এখানেই আপত্তি তুলেছে কংগ্রেস।
রাজ্যসভার ভোট হয় রাজ্যের বিধায়ক সংখ্যার আনুপাতিক হারে। বিধায়করা প্রথম পছন্দের ভোট দিয়ে রাজ্যসভার সাংসদ নির্বাচন করেন। গুজরাত বিধানসভায় বিজেপির আসন সংখ্যা ১০০ এবং কংগ্রেসের ৭১। এক দিনে ভোট হলে বিজেপি বিধায়কদের প্রথম পছন্দের ভোটে দলের এক প্রার্থীর জয় হত। অন্য দিকে কংগ্রেসের বিধায়কদেরও প্রথম পছন্দের ভোটে জিতে যেতেন তাঁদের দলের প্রার্থী। কিন্তু আলাদা দিনে ভোট হলে দু’দিনেই দুই প্রার্থীকেই প্রথম পছন্দের ভোট দেওয়ার সুযোগ পাবেন বিজেপি বিধায়করা। কংগ্রেসও একই রকম সুযোগ পেলেও সংখ্যাধিক্যের জেরে বিজেপি প্রার্থীই জিতে যাবেন।
এই কারণেই কমিশনের ঘোষণার বিরুদ্ধে আপত্তি তুলে সুপ্রিম কোর্টে মামলা দায়ের করেন গুজরাতের বিরোধী দলনেতা পরেশভাই ধনানি। মামলায় তিনি অভিযোগ করেন, নির্বাচন কমিশন পক্ষপাতদুষ্ট। এই সিদ্ধান্ত স্বেচ্ছাচারী, বেআইনি এবং গণতন্ত্র বিরোধী এবং মৌলিক অধিকার খর্ব করার সমান।
কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করতেই রাজি হয়নি। শীর্ষ আদালতের পর্যবেক্ষণ, ‘‘এক বার নির্বাচন কমিশন নির্ঘণ্ট ঘোষণা করে দিলে তার পর সুপ্রিম কোর্ট আর হস্তক্ষেপ করতে পারে না। এর মধ্যে কোথায় মৌলিক অধিকার খর্ব হচ্ছে?’’ নির্বাচন কমিশনের আইনজীবী রাকেশ দ্বিবেদীও বলেন, ‘‘এর সঙ্গে মৌলিক অধিকার খর্ব হওয়ার কোনও সম্পর্ক নেই। এর আগেও বিভিন্ন রায়ে আলাদা নির্বাচনের পক্ষে মত দিয়েছে বিভিন্ন আদালত।’’
আরও পড়ুন: ‘মানিব্যাক’! বীরভূমে সওয়া দু’লাখেরও বেশি ‘কাটমানি’ ফেরত দিলেন তৃণমূল নেতা
আরও পডু়ন: জয় শ্রীরাম নিয়ে ক্যানিং লোকালে ধুন্ধুমার, স্লোগান না দেওয়ায় যুবককে মারধর, ট্রেন থেকে ফেলার অভিযোগ
লোকসভা ভোটের ফল ঘোষণা হয় ২৩ মে। তার পর নির্বাচন কমিশন অমিত শাহের আসন ফাঁকা ঘোষণা করে ২৮ মে। অন্য দিকে স্মৃতি ইরানির আসন শূন্য ঘোষণা হয় পরের দিন ২৯ মে। কমিশনের যুক্তি, ভোট গণনা শেষে অমিত শাহকে জয়ী ঘোষণা করা হয় ২৩ মে। কিন্তু স্মৃতি ইরানিকে সরকারি ভাবে জয়ী ঘোষণা করতে করতে পরের দিন অর্থাৎ ২৪ মে হয়ে যায়। সেই কারণেই আলাদা দিনে নির্বাচন করা হচ্ছে।
তবে কংগ্রেসের জন্য পুরোপুরি দরজা বন্ধ করে দেয়নি সুপ্রিম কোর্ট। ভোটের পর হাইকোর্টে ‘নির্বাচনী পিটিশন’ দাখিল করতে পারবে কংগ্রেস। ভোটের ফল নিয়ে কারও কোনও অভিযোগ থাকলে তা নিয়ে এই ‘নির্বাচনী পিটিশন’ দাখিল করা যায়। তবে তা করতে হয় হাইকোর্টে। এ দিন মামলাকারীকে সেই পরামর্শই দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।
এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের YouTube Channel - এ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy