Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

গগৈ মামলার তদন্তে ৩ বিচারপতির কমিটি

যৌন হেনস্থার অভিযোগ এনে প্রধান বিচারপতিকে বেকায়দায় ফেলার চক্রান্ত নিয়ে মামলায় সুপ্রিম কোর্টে তিন সদস্যের নতুন একটি বিশেষ বেঞ্চ তৈরি হল আজ। তাতে নিজেকে রাখেননি প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ।

সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি।

সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি।

সংবাদ সংস্থা
নয়াদিল্লি, শেষ আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০১৯ ০২:১৯
Share: Save:

যৌন হেনস্থার অভিযোগ এনে প্রধান বিচারপতিকে বেকায়দায় ফেলার চক্রান্ত নিয়ে মামলায় সুপ্রিম কোর্টে তিন সদস্যের নতুন একটি বিশেষ বেঞ্চ তৈরি হল আজ। তাতে নিজেকে রাখেননি প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ। এই বেঞ্চ আজ আইনিজীবী উৎসব বইন্সের বক্তব্য জানতে চেয়ে নোটিস জারি করেছে।

গোটা বিষয়টি নিয়ে তদন্ত হবে শীর্ষ আদালতের প্রবীণতম বিচারপতি এস এ বোবদে-র নেতৃত্বে। সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে তিনি বলেছেন, ‘‘প্রধান বিচারপতি আমাকে দু’নম্বর বিচারপতি হিসেবে এই তদন্তের দায়িত্ব নিতে বলেছেন।’’ তদন্ত কমিটিতে সুপ্রিম কোর্টের আরও দু’জন বিচারপতিকে রাখবেন বিচারপতি বোবদে। বলেছেন, ‘‘সিনিয়রিটিতে আমার পরেই আছেন বিচারপতি এন ভি রামান্না। সিদ্ধান্ত নিয়েছি, তাঁকে ও মহিলা বিচারপতি ইন্দিরা বন্দ্যোপাধ্যায়কে এই তদন্ত কমিটিতে রাখব।’’

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী বইন্স দাবি করেছেন, সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন কর্মীর হয়ে যৌন হেনস্থার মামলা লড়ার জন্য তাঁকে দেড় কোটি টাকা দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে প্রেস ক্লাবে সাংবাদিক বৈঠকও করতে বলা হয়। শীর্ষ আদালত বইন্সকে এজলাসে হাজির হয়ে তাঁর বক্তব্য জানাতে বলেছে। আগামিকাল সকাল সাড়ে দশটায় এর শুনানি হবে।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

বিষয়টি সামনে আসার পরে প্রধান বিচারপতি গগৈ শনিবার যে বিশেষ বেঞ্চ গড়েছিলেন, তাতে তিনি নিজেও ছিলেন। যদিও বিচার সংক্রান্ত নির্দেশ দেওয়ার দায়িত্ব নিজের হাতে রাখেননি সে দিন। কিন্তু যে অভিযোগের সঙ্গে নিজে জড়িয়ে রয়েছেন, তারই শুনানিতে কেন প্রধান বিচারপতি থাকছেন— এ নিয়ে বিভিন্ন মহলে সমালোচনা শুরু হয়। মনে করা হচ্ছে বিষয়টিতে গুরুত্ব দিয়েই প্রধান বিচারপতি গগৈ আজ বিচারপতি বোবদের হাতে তদন্তের দায়িত্ব ও মামলার জন্য একটি বিশেষ বেঞ্চ গড়েছেন। নবগঠিত বেঞ্চে রয়েছেন বিচারপতি অরুণ মিশ্র, বিচারপতি আর এফ নরিম্যান এবং বিচারপতি দীপক গুপ্ত। এই বেঞ্চ মামলাটিকে ‘জনস্বার্থের পক্ষে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ’ বলে চিহ্নিত করেছে। সঙ্গে উল্লেখ করেছে, ‘বিচার ব্যবস্থার স্বাধীনতার প্রশ্ন জড়িয়ে রয়েছে’ মামলাটির সঙ্গে।

কয়েকটি সংবাদ পোর্টাল বিষয়টি সামনে আনার পরে সুপ্রিম কোর্টের ওই প্রাক্তন কর্মী হলফনামায় দু’বার যৌন নিগ্রহের চেষ্টার কথা উল্লেখ করেছেন। তাঁর দাবি, প্রধান বিচারপতির স্ত্রীর সামনে মাটিতে শুয়ে নাকে খতও দেওয়ানো হয়েছিল। দু’টি ঘটনাই ঘটে ২০১৮-তে রঞ্জন গগৈ শীর্ষ আদালতের প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পরপর। ওই মহিলা জানাচ্ছেন, তাঁর স্বামী ও দেওর ছিলেন হেড কনস্টেবল। ২০১২ সালের এক ফৌজদারি মামলায় সাসপেন্ড করা হয় দু’জনকে। পরে তা আপসে মিটিয়ে নেওয়া হলেও সুপ্রিম কোর্টের কাজ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় প্রতিবন্ধী ওই দেওরকে। ওই মহিলা জানিয়েছেন, একটি প্রতারণা মামলায় তিনি অভিযুক্ত।

বইন্সের দাবি, সুপ্রিম কোর্টের ওই প্রাক্তন কর্মীর হয়ে প্রথমে তাঁকে বিনা পারিশ্রমিকে মামলা লড়ার প্রস্তাব দেন অজয় নামে এক ব্যক্তি। পরে ৫০ লক্ষ ও শেষে দেড় কোটি টাকা দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয় তাঁকে।

বইন্সের দাবি বাড়তি মাত্রা পেয়েছে কর্পোরেট চক্রান্তের অভিযোগে। হলফনামার ১৭ নম্বর অনুচ্ছেদে বইন্স লিখেছেন, ‘‘গত ১৯ এপ্রিল পরিচয় প্রকাশ না-করার শর্তে এক বিশস্ত ব্যক্তি আমাকে জানান, কর্পোরেট জগতের এক নামি ব্যক্তি ‘হাই প্রোফাইল’ একটি মামলায় অনুকূল রায় বার করাতে সুপ্রিম কোর্টের এক বিচারপতির সঙ্গে যোগাযোগ করতে চাইছিলেন। না-পেরে মামলা অন্য বিচারপতির কাছে সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চালান। তাতেও ব্যর্থ হয়ে প্রধান বিচারপতিকে যৌন হেনস্থার ভুয়ো মামলায় ফাঁসাতে রমেশ শর্মা নামে এক দালাল ও তার স্যাঙাতদের সঙ্গে ঘোঁট পাকান ওই কর্পোরেট-ব্যক্তিত্ব।’’ হলফনামার ২০ নম্বর অনুচ্ছেদে বইন্স জানিয়েছেন, আদালতের নির্দেশ পেলে তিনি সব তথ্য ও সংশ্লিষ্ট নামধাম তিনি বন্ধ খামে জমা দিতে প্রস্তুত।

প্রশান্ত ভূষণ, অরুণা রায়ের মতো বেশ কিছু আইনজীবী ও সমাজকর্মী চাইছেন, গোটা বিষয়টির নিরপেক্ষ তদন্ত হোক। তাঁদের বক্তব্য, শীর্ষ আদালত প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের বিচার ঠিক মতো করতে না পারলে বিচার ব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। শনিবার তড়িঘড়ি যে শুনানি হয়েছিল, তাতে প্রধান বিচারপতির উপস্থিতি প্রসঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি এন সন্তোষ হেগড়ে আজ হায়দরাবাদে বলেন, ‘‘আইন ও নৈতিকতার দিক দিয়ে এটা একেবারেই ঠিক নয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE