Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
লাভ জেহাদ বিরোধী অভিযানের ডাক

শর্মিলা-পটৌডীর বিয়ে নিয়েও প্রশ্ন সঙ্ঘের অনুষ্ঠানে

দেশ জুড়ে লাভ জেহাদের জুজু দেখতে গিয়ে এ বার শর্মিলা ঠাকুর আর মনসুর আলি খান পটৌডীর বিয়েকেও লাভ জেহাদের উদাহরণ বলে টেনে আনা হল আরএসএস-এর মঞ্চে।

দম্পতি: পটৌডীর সঙ্গে শর্মিলা। ফাইল চিত্র

দম্পতি: পটৌডীর সঙ্গে শর্মিলা। ফাইল চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০২:২৪
Share: Save:

দেশ জুড়ে লাভ জেহাদের জুজু দেখতে গিয়ে এ বার শর্মিলা ঠাকুর আর মনসুর আলি খান পটৌডীর বিয়েকেও লাভ জেহাদের উদাহরণ বলে টেনে আনা হল আরএসএস-এর মঞ্চে।

শিকাগোয় সঙ্ঘ আয়োজিত বিশ্ব হিন্দু কংগ্রেসে লেখক দিলীপ আমিন তাঁর বক্তৃতায় শর্মিলার বিয়ে নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। দিলীপের বক্তৃতায় বড় অংশ জুড়েই ছিল লাভ জেহাদের কথা। অনুষ্ঠানস্থল জুড়ে একাধিক ব্যানার টাঙানো হয়, যাতে হিন্দু মহিলাদের ধর্মান্তরণের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলা়র কথা রয়েছে। সেই ব্যানারে শর্মিলার ছবিও ছিল। দিলীপ সরাসরি দাবি করেন, হিন্দুদের বিরুদ্ধে ‘নীরব হলোকস্ট’ চলছে। উদাহরণ দিতে গিয়ে তাঁর বক্তব্য, ‘‘শর্মিলাকে জোর করে বেগম আয়েষা সুলতানা নাম দেওয়া হয়। তাঁর সন্তানদের তিনি ইসলামি ভাবধারায় মানুষ করতে বাধ্য হন।’’ দিলীপ আরও যোগ করেন, ‘‘শর্মিলা-পুত্র সেফ প্রথমে হিন্দু মেয়ে অমৃতাকে বিয়ে করে, পরে পরিত্যাগ করেন। দ্বিতীয় স্ত্রী করিনা ইসলামি নাম গ্রহণ করতে অস্বীকার করেছেন। কিন্তু তিনি তাঁর পুত্রকে হিন্দু ভাবধারায় মানুষ করতে পারবেন কি না, সেটাই প্রশ্ন।’’

এর আগে সেফ-করিনার ছেলের নাম তৈমুর রাখা নিয়ে গেরুয়া শিবির হইচই বাধিয়েছিল। এ বার শর্মিলা-বিয়েকে লাভ জেহাদের আখ্যা দিয়ে তারা মেরুকরণের রাজনীতিকেই আরও এক ধাপ এগিয়ে দিল। শর্মিলা কোনও মন্তব্য করেননি। কিন্তু নাগরিক সমাজের অনেকেই দিলীপের বক্তব্যকে ন্যক্কারজনক বলে নিন্দা করছেন। কংগ্রেসের মণীশ তিওয়ারি বলছেন, ‘‘আরএসএস তার সংস্কৃতির স্বরূপটাই আর একবার দেখাল।’’

বিতর্কের মুখে দিলীপ নিজেও পরে একটু রাশ টেনেছেন। সংবাদমাধ্যমের প্রশ্নের উত্তরে বলেছেন, ‘‘ধর্ম পরিবর্তন করতে হলে বুঝেসুঝে করা উচিত। বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ধর্মান্তরণে চাপ দেওয়া উচিত নয়।’’ বিজেপিও খানিকটা সাবধানী অবস্থানই নিচ্ছে। দলের মুখপাত্র সুধাংশু ত্রিবেদীকে এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘কে কী প্রসঙ্গে ঠিক কী বলেছেন না জেনে মন্তব্য করব না।’’ কিন্তু ঘরোয়া স্তরে বিজেপির অনেক নেতাই বলার চেষ্টা করছেন, ‘‘দিলীপ তাঁর মত বলেছেন। ভাগবত তো এমনটা বলেননি!’’

আরও পড়ুন: বাংলা দখলে জোর বিজেপির

বাস্তবিকই শিকাগোয় মোহন ভাগবতের বক্তৃতায় সরাসরি লাভ জেহাদ প্রসঙ্গ আসেনি। তিনি বরং বলেছেন, উন্মুক্ততাই হিন্দুদের শক্তি। সেই শক্তি নিয়েই জোট বাঁধার ডাক দিয়েছেন তিনি। তাঁর বক্তব্য, হিন্দুরা বিরোধিতা করতে না চাইলেও হিন্দুদের বিরোধিতা যে কেউ করবে না তা নয়। তাঁর দাবি, ‘‘রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার যদি একা থাকে, তবে একদল বুনো কুকুরও তাকে হারিয়ে দিতে পারে।’’ রাজনৈতিক শিবিরের মতে, বিজেপির জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকের প্রাক্কালে ভাগবতের কথার বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে। জাতপাতের প্রশ্নে গেরুয়া শিবিরের ভিতরেই এখন দ্বন্দ্ব তুঙ্গে। উচ্চবর্ণ বনাম দলিত-ওবিসি সংঘাত বাড়ছে। সেই আবহে ভাগবত ভবিষ্যত ঐক্যনীতির সুরটি বেঁধে দিলেন। বিরোধীরা যদিও মেরুকরণের প্রশ্নেই বিঁধছেন। এআইএমআইএম নেতা আসাদুদ্দিন ওয়াইসির কটাক্ষ, ‘‘নিজে বাঘ সেজে অন্যকে কুকুর বলাই সঙ্ঘের ভাষা!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE