Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

দুর্গম টিসোপিতে এই প্রথম পা জেলাশাসকের

সেই দীর্ঘ ‘ঐতিহ্য’ ভেঙে ১৪ কিলোমিটার পাহাড়ি, বিপদসঙ্কুল রাস্তা পার হয়ে এলেন সিয়াহার জেলাশাসক ভূপেশ চৌধুরি। তাই তাঁর সম্মানে পালকি তৈরি রেখেছিলেন গ্রামবাসীরা।

গ্রামের পথে জেলাশাসক ভূপেশ চৌধুরি। ছবি প্রশাসনের সৌজন্যে

গ্রামের পথে জেলাশাসক ভূপেশ চৌধুরি। ছবি প্রশাসনের সৌজন্যে

রাজীবাক্ষ রক্ষিত
গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ২৭ অগস্ট ২০১৯ ০৩:৩৫
Share: Save:

উত্তর-পূর্বে এটাই ভারতের শেষ গ্রাম হিসেবে পরিচিত। মিজোরামের দুর্গম টিসোপি গ্রামে সরকারি কর্তাদের পা পড়ার ঘটনা বিরল। স্বাধীনতার সাত দশক পার হয়ে গেলেও সেখানে নেতা-মন্ত্রী দূরের কথা, জেলাশাসকেরই কখনও পায়ের ধুলো পড়েনি।

সেই দীর্ঘ ‘ঐতিহ্য’ ভেঙে ১৪ কিলোমিটার পাহাড়ি, বিপদসঙ্কুল রাস্তা পার হয়ে এলেন সিয়াহার জেলাশাসক ভূপেশ চৌধুরি। তাই তাঁর সম্মানে পালকি তৈরি রেখেছিলেন গ্রামবাসীরা। জেলাশাসকের প্রবল ওজর-আপত্তি গ্রামবাসীদের আবেগের কাছে ভেসে গেল। তাঁকে কাঁধে চাপিয়ে শেষ এক কিলোমিটার রাস্তা নিয়ে যাওয়া হল।

সম্প্রতি মারা জনজাতি অধ্যূষিত টিসোপি-র মানুষ জেলাশাসকের দফতরে অভিযোগ জানায়, প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনার কোনও ছোঁয়াই প্রত্যন্ত গ্রামটি পাচ্ছে না। ১৫ কিলোমিটার দুর্গম পাহাড়ি রাস্তা পায়ে হেঁটে তাঁদের যাতায়াত করতে হয়। গত কাল সরেজমিনে পরিস্থিতি দেখার সিদ্ধান্ত নেন ভূপেশবাবু। কর্মীদের আপত্তি উড়িয়ে পাঁচ ঘণ্টা গাড়ির ঘুর-পথ বাদ দিয়ে, গ্রামবাসীদের ব্যবহার করা পাহাড়ি রাস্তায় হেঁটে রওনা হন তিনি। কোথাও খাদের উপরে গাছের ডালে পা রেখে পার হতে হয়। বৃষ্টির মধ্যে প্রতি পদে গ্রামবাসীদের নিত্যদিনের সমস্যা হাড়ে-হাড়ে টের পেয়েছেন তিনি।

তবে ১৪ কিলোমিটার রাস্তা পার হওয়ার পর তাঁর জন্য চমক অপেক্ষা করছিল। ভূপেশবাবুর কথায়, ‘‘দেখি গ্রামের মানুষ পালকি নিয়ে হাজির!’’ তিনিও উঠবেন না। গ্রামবাসীরাও ছাড়বেন না। শেষ পর্যন্ত দফতরের কর্মীরা বোঝান, গ্রামবাসীদের আবেগকে অসম্মান না করাই ভাল। হই হই করে জেলাশাসককে নিয়ে পালকি চলে গ্রামের উদ্দেশে। চমক আরও বাকি ছিল। ভূপেশ জানান, গ্রামের মুখে তাঁকে স্বাগত জানাতে কাঠের তোরণ তৈরি করা হয়েছিল। বৃষ্টির মধ্যেও ছাত্রছাত্রী, মহিলারা মালা নিয়ে তাঁকে অভ্যর্থনা জানাতে হাজির ছিলেন।

এমন ভাবে মানুষের কাঁধে চেপে যাওয়ার সময় নিজেকে ইংরেজ আমলের কালেক্টরদের মতো ঠেকেনি? ভূপেশবাবুর মতে, “জনজাতি সংস্কৃতি অনেক সরল ও মুখোশহীন। আমি ওঁদের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিলে ওঁরা আঘাত পেতেন। আমাদের ভালবেসে, সম্মান করেই তাঁরা অভ্যর্থনার আয়োজন করেছিলেন।” ১৫ কিলোমিটারের রাস্তাটি তৈরি হলে জেলা সদর থেকে মাত্র আধ ঘণ্টায় গ্রামে পৌঁছনো যাবে। জেলাশাসক জানান, কাজ শুরু হচ্ছে। তবে বৃষ্টি, দক্ষ শ্রমিকের অভাব, নির্মাণ সামগ্রী পৌঁছনোর সমস্যার কারণে হয়তো একটু সময় লাগবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Siaha Tuisumpui DM
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE