গাঁধী জয়ন্তীতে কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের গাঁধীর ভজন গাওয়ার নির্দেশ দিল বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে নির্দেশিকা পাঠিয়ে ইউজিসি-র সচিব রজনীশ জৈন বলেছেন, পড়ুয়াদের ২ থেকে ৯ অক্টোবর গাঁধীজির ‘বৈষ্ণব জন’-এর মতো ভজন বিভিন্ন ভাষায় গাইবার জন্য উৎসাহিত করা হোক। দূরদর্শনের যুগে জাতীয়তাবাদী ঐক্যের স্বরূপ হিসেবে তৈরি হয়েছিল ‘মিলে সুর মেরা তুমহারা’ গানটি। তার আদলেই ভজন গাইতে হবে।
ইউজিসি-র এই নির্দেশিকা নিয়ে বিস্মিত শিক্ষাজগতের অনেকেই। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিমাই সাহার প্রতিক্রিয়া, ‘‘এ খুবই অদ্ভুত নির্দেশ।’’ কোচবিহার পঞ্চানন বর্মা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য দেবকুমার মুখোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘‘গাঁধীর প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা রয়েছে। কিন্তু এই ধরনের নির্দেশ সত্যিই অদ্ভুত।’’ পুরুলিয়ার সিধো কানহু বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য দীপক রঞ্জন মণ্ডল বলছেন, এই ধরনের অনুষ্ঠান বিশ্ববিদ্যালয়ের ন্যাশনাল সার্ভিস স্কিমের (এনএসএস) মাধ্যমে করা হয়। গাঁধীর মূল্যবোধ নিয়ে তাঁরা অবশ্যই অনুষ্ঠান করবেন। তবে ভজন গাওয়ার কোনও পরিকল্পনা নেই। কারণ কোনও গান গাওয়ার দল তাঁদের বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য প্রদীপকুমার ঘোষ জানান, পড়ুয়ারা ভজন গাইবেন কি না, সে বিষয়ে তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মসমিতিতে আলোচনা করবেন।
ইউজিসি-র এই নির্দেশিকায় অন্য ‘গন্ধ’ পাচ্ছেন শিক্ষকদের অনেকে। রাজ্যের বাম নেতৃত্বাধীন কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ওয়েবকুটার সাধারণ সম্পাদক শ্রুতিনাথ প্রহরাজের বক্তব্য, গাঁধীজি এবং তাঁর কার্যাবলী সম্পর্কে অবশ্যই ওয়াকিবহাল করার প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু এই ধরনের নির্দেশ দিয়ে বিষয়টিকে গুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে কেন্দ্র। তাঁর কথায়, ‘‘গাঁধীজির হত্যাকারী নাথুরাম গডসেকে দেশপ্রেমিক সাজানোর চেষ্টা চলছে। আবার এই ধরনের নির্দেশ দিয়ে বিষয়কে গুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে।’’ প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের স্নাতকোত্তর বিভাগের ছাত্র শুভজিৎ সরকার বলেন, ‘‘গাঁধীজি কত বড় রাজনৈতিক ব্যাক্তিত্ব ছিলেন তা পড়ুয়ারা জানুক। কিন্তু ভজন গাওয়ার মতো কর্মসূচি চাপিয়ে দেওয়া হলে তা পড়ুয়ারা মেনে নেবে না।’’
গাঁধীকে নিয়ে দেশজুড়ে নাটক প্রতিযোগিতাও করতে চায় ইউজিসি। এর পাশাপাশি আরেকটি নির্দেশিকায় উপাচার্যদের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বিষয়টি পাঠ্যক্রমে আনার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলেছে তারা। পড়ুয়ারা ক্যাম্পাস এবং তার আশেপাশে পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখার উদ্যোগ নিলে তাঁদের ‘ক্রেডিট’ দেওয়ার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। এই নির্দেশিকা নিয়ে অবশ্য কোনও বিরূপ প্রতিক্রিয়া নেই উপাচার্যদের। যাদবপুরের সহ-উপাচার্য জানান, পরিচ্ছন্নতার বিষয়টি পাঠ্যক্রমে আনার ব্যাপারে অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলে আলোচনা করবেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy