Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

উদয়নই দেখিয়ে দিল জায়গাটা! মাটি খুঁড়তেই বেরোল বাবা-মার কঙ্কাল

রায়পুরের বাগানবাড়িতে উদয়ন দাসের দেখিয়ে দেওয়া জায়গা খুঁড়েই রবিবার মিলল দু’টি কঙ্কাল। বাঁকুড়ার তরুণী আকাঙ্ক্ষা শর্মাকে খুনের অভিযোগে ধৃত উদয়ন দাস নিজেই স্বীকার করেছিল, শুধু আকাঙ্ক্ষা নয়, সে খুন করেছে তার বাবা-মাকেও। দু’জনের দেহ পোঁতা রয়েছে ছত্তীসগঢ়ের রায়পুরে আগে তারা যে বাড়িতে থাকত, তার বাগানে!

রায়পুরের বাড়িতে গিয়ে নিজেই জায়গা দেখিয়ে দিল উদয়ন । ছবি:রূপেশ যাদব।

রায়পুরের বাড়িতে গিয়ে নিজেই জায়গা দেখিয়ে দিল উদয়ন । ছবি:রূপেশ যাদব।

নিজস্ব প্রতিবেদন
রায়পুর শেষ আপডেট: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০২:৫৭
Share: Save:

রায়পুরের বাগানবাড়িতে উদয়ন দাসের দেখিয়ে দেওয়া জায়গা খুঁড়েই রবিবার মিলল দু’টি কঙ্কাল। বাঁকুড়ার তরুণী আকাঙ্ক্ষা শর্মাকে খুনের অভিযোগে ধৃত উদয়ন দাস নিজেই স্বীকার করেছিল, শুধু আকাঙ্ক্ষা নয়, সে খুন করেছে তার বাবা-মাকেও। দু’জনের দেহ পোঁতা রয়েছে ছত্তীসগঢ়ের রায়পুরে আগে তারা যে বাড়িতে থাকত, তার বাগানে!

ভোপাল পুলিশ উদয়নকে নিয়ে সাকেতনগর থেকে রায়পুরের উদ্দেশে রওনা দেয় শনিবার রাতেই। সঙ্গে যান আকাঙ্ক্ষা মামলার তদন্তকারীরাও। রবিবার রায়পুরের সুন্দরনগরের বাড়ি থেকে উদ্ধার হল উদয়নের বাবা-মায়ের খুলি ও হাড়গোড়। পুলিশ সূত্রের খবর, রবিবার সকালে ওই বাড়িতে গিয়ে জায়গাটি চিনিয়ে দেয় উদয়ন। এর পর পুলিশ মাটি কাটার মেশিন দিয়ে চিহ্নিত জায়গায় খোঁড়াখুঁড়ি শুরু করে। পরে বেলচা, কোদাল নিয়ে লোকজন মাটি খুঁড়তে নামেন। একে একে উঠে আসে হাড়গোড় ও দু’টি খুলি। কয়েকটি বস্তার ভিতরে কঙ্কালগুলি ছিল।

পুলিশ জানায়, জেরায় উদয়ন বলেছে ২০১০-’১১ সাল নাগাদ সে তার মা ইন্দ্রাণী দাস এবং বাবা ডি কে দাসকে নিজের হাতে গলা টিপে খুন করে পুঁতে দিয়েছে।

কী ভাবে হয়েছিল জোড়া খুন?

এ খানেই মাটি খুঁড়ে বেরোল হাড়গোড়, জামা-কাপড়। রবিবার ছবিটি তুলেছেন রূপেশ যাদব।

পুলিশ সূত্রে খবর, জেরায় উদয়ন জানিয়েছে, ঘটনার দিন সকালে তার বাবা মাংস কিনতে বাজারে গিয়েছিলেন। মা ঘরে জামাকাপড় গোছাচ্ছিলেন। হঠাৎ উদয়ন সেখানে গিয়ে মায়ের হাত ধরে প্রথমে টান মারে। তার পর গলা টিপে খুন করে দেহটি ঘরের মধ্যেই ফেলে রাখে। প্রায় আধ ঘণ্টা পরে বাজার থেকে তার বাবা ফিরে আসেন। উদয়নের বাবার অভ্যাস ছিল, বাইরে থেকে বাড়িতে ঢোকার পরে কালো চা খাওয়ার। সে দিন উদয়নই বাবার জন্য চা তৈরি করতে গিয়েছিল। সেই চায়ের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ঘুমের বড়ি মিশিয়ে দিয়েছিল সে।

উদয়নের বয়ান অনুযায়ী, বাবা আসতেই বাইরের ঘরে সে চায়ের কাপ ধরিয়ে দেয়। চা খেয়ে অল্প ক্ষণের মধ্যে সেখানেই লুটিয়ে পড়েন বাবা। অচৈতন্য বাবাকে একই কায়দায় গলা টিপে খুন করে উদয়ন।

যখন এই জোড়া খুন হয়, তখন বাড়ি সংস্কারের কাজ করছিলেন রাজমিস্ত্রিরা। তবে তাঁদের মধ্যে কেউ খুন হতে দেখেছিলেন কি না, তা স্পষ্ট নয়। উদয়ন জানিয়েছে, মিস্ত্রিদের এক জনকে ৫০০ টাকা দিয়ে সে গর্ত খোঁড়ার জিনিসপত্র নিয়ে রাখে। পরে বাড়ির বাগানে নিজেই প্রায় ছ’ফুট গর্ত খোঁড়ে। তার পর সেখানে বাবা ও মায়ের দেহ ফেলে মাটি চাপা দেয়।

উদয়নের কুকীর্তির এখানেই শেষ নয়। এর পরে ওই বাড়ি বন্ধ রেখে সাকেতনগরে ফিরে আসে উদয়ন। জাল লাইফ সার্টিফিকেট ব্যবহার করে বেশ কিছু দিন মায়ের পেনশনও তুলেছে সে। পরে বাবা ও মায়ের জাল ডেথ সার্টিফিকেট তৈরি করে রায়পুরের ওই সম্পত্তি সে বিক্রি করে দেয়। পুলিশের একটি অংশের দাবি, রাতারাতি সমস্ত সম্পত্তি হাতাতেই উদয়ন তার বাবা-মাকে খুন করে বলে মনে করা হচ্ছে।

দক্ষিণ ভোপালের পুলিশ সুপার সিদ্ধার্থ বহুগুণা বলেন, ‘‘এখানে উদয়ন খুবই বিলাসবহুল জীবনযাপন করত।’’ তার জন্য বাবা-মায়ের কাছ থেকে প্রায়শই প্রচুর টাকা নিত সে। এই নিয়ে আপত্তি করায় মার সঙ্গে বিরোধও তৈরি হয়েছিল উদয়নের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE