Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Coronavirus Lockdown

করোনাকালেই মিলেছে পরিচিতি, লড়তে চান ওঁরাও

দিল্লির জসলিন ভল্লার নাম না শুনলেও তাঁর গলা এত দিনে শুনে ফেলেছেন সকলেই। এখনও শুনছেন।

স্নেহিল মেহরা ও জসলিন ভল্লা

স্নেহিল মেহরা ও জসলিন ভল্লা

সুজিষ্ণু মাহাতো
কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ জুলাই ২০২০ ০৪:২৫
Share: Save:

করোনা-পরিস্থিতির আগে তাঁদের নাম শোনেনি তেমন কেউ। করোনাকালে ওই দুই নারী জনপ্রিয়তা পেয়েছেন নিজেদের কাজ দিয়েই। দিল্লি ও মুম্বইয়ের ওই দুই নারীই চান সমাজকে সুস্থ রাখতে নিজেদের ভূমিকা পালন করতে, নিজেদের কাজের মাধ্যমেই।

দিল্লির জসলিন ভল্লার নাম না শুনলেও তাঁর গলা এত দিনে শুনে ফেলেছেন সকলেই। এখনও শুনছেন। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের উদ্যোগে মার্চের প্রথম সপ্তাহের পর থেকেই প্রত্যেক মোবাইল নম্বরের কলার টিউন হিসেবে করোনা সচেতনতার বার্তা বাজতে শুরু করে। পরিচিত ভয়েস ওভার আর্টিস্ট জসলিনই রেকর্ড করেন ওই বার্তা। তাঁর কথায়, ‘‘মার্চের গোড়ায় চিত্রনাট্য পড়েই বুঝেছিলাম এটা আর পাঁচটা সচেতনতা বার্তার মতো নয়, অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তবে তার প্রচারের ব্যাপ্তিটা যে এমন হবে সেই ধারণা তখনও ছিল না।’’

তিনি যে কোনও দিন বিখ্যাত হতে পারেন, সেই ধারণা ছিল না মুম্বইয়ের স্নেহিল মেহরারও। একটি ওটিটি প্ল্যাটফর্মে ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর স্নেহিল নেহাত শখের বশেই বছরখানেক আগে ইনস্টাগ্রামে অ্যাকাউন্ট খোলেন। মিম বানিয়ে শেয়ার করতেন, নিজের পছন্দের সিনেমা দেখে কেমন লাগল, সেগুলোও মজাচ্ছলে বলে ভিডিয়ো পোস্ট করতেন। ২৭ জুন বিকেলে তেমনই একটি মজার ভিডিয়ো পোস্ট করেন তিনি। মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে যায় সেই ভিডিয়ো।

আরও পড়ুন: পিছোতে গিয়ে নিজের জমিই ছাড়ছে সেনা?

ওই ভিডিয়োয় শিক্ষিকার বেশে স্নেহিল কাল্পনিক পড়ুয়াদের নাম ডাকছিলেন। সবার নামই ছিল বিভিন্ন অ্যাপের নামে। অ্যাপের প্রকৃতির সঙ্গেও তিনি মিলিয়ে দিয়েছিলেন খুদে পড়ুয়াদের স্বভাবকে। যেমন ‘টিকটক চায়নাওয়ালা’ এসেছিল চিন থেকে এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রামে তারপর সে নাকি সবার গোপন কথা জেনে নিত! তাই তাকে ক্লাস থেকে বের করার কথাও ওই ভিডিয়োতেই ছিল। চিন-ভারত সংঘর্ষের আবহে টিকটক নিষিদ্ধ হতেই ফের ভাইরাল হয় ওই ভিডিয়ো। ওই একটি ভিডিয়োর জোরে স্নেহিলের ফলোয়ার ৭০ হাজার থেকে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ে, যা এখন সাড়ে ছ’লক্ষ ছাড়িয়েছে।

আরও পড়ুন: বেনারসি পান খেয়ে থুতু নয়, আর্জি মোদীর

স্নেহিল বলছেন, ‘‘দেশের বিভিন্ন জায়গা, এমনকি বিদেশ থেকেও বন্ধুরা ফোন করে বলতে থাকে ওই ভিডিয়ো তাদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে ছড়িয়ে পড়েছে। আগে আমি কেবল ইনস্টাগ্রামে ছিলাম তার পর ফেসবুক, টুইটারেও অ্যাকাউন্ট খুলি।’’ এই জনপ্রিয়তার জেরে একটি ওয়েব সিরিজেও গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয়ের ডাক পেয়েছেন তিনি। দশ বছর ধরে নানা বিজ্ঞাপন, বার্তায় স্বর দিলেও এমন পরিচিতি পাননি জসলিন। তিনি বলছেন, ‘‘আমার গলা দিল্লি মেট্রোয় অসংখ্য মানুষ আগেই শুনেছেন। আমাদের স্বর সবাই শোনেন। কিন্তু শিল্পীদের নাম জানেন না। এই ঘোষণার পরে এত জনের আমার সম্বন্ধে খোঁজ নেওয়াটা সত্যিই বড় প্রাপ্তি।’’

কিন্তু এমন প্রাপ্তি তো করোনাকালের সুবাদেই। তাতে মনে একটা অস্বস্তিও বেঁধে দু’জনেরই। জসলিনের কথায়, ‘‘অনেকে আমাকে করোনা-ভয়েস বলছেন। তা জেনে প্রথমে ভাল লাগেনি। পরে ভেবেছি আমি যে এত বিপুল মানুষকে সচেতন থাকার বার্তা দিতে পারছি, সেটা অনেক বেশি তৃপ্তির।’’ স্নেহিলও মানছেন, লকডাউনের সময় সোশ্যাল মিডিয়ায় লোকজনের বেশি সময় কাটানো তাঁর ভিডিয়ো জনপ্রিয় হওয়ার একটা বড় কারণ। তবে তিনিও বলছেন, ‘‘সুদূর অসম থেকে এক চিকিৎসক আমায় জানিয়েছেন, করোনা-লড়াইয়ের মাঝে আমার ভিডিয়ো তাঁদের মুখে হাসি ফোটায়। এটুকু করেই যদি আমি এই লড়াইয়ে থাকতে পারি, ক্ষতি কী?’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE