সাক্ষাৎ: রাজ্যপালের সঙ্গে কনরাড সাংমা। —নিজস্ব চিত্র।
ঠিক তিন দশকের ব্যবধান। ১৯৮৮ সালে মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন পূর্ণ অ্যাজিটক সাংমা। আর ২০১৮ সালে সেই গদিতে বসতে চলেছেন তাঁর পুত্র তথা তুরার সাংসদ ৪০ বছরের কনরাড কঙ্কাল সাংমা।
গত বছর মণিপুরে যা হয়েছিল, এ বছর মেঘালয়েও কংগ্রেসের সঙ্গে তেমনই ঘটল। একক সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হয়েও সরকার ধরে রাখতে পারল না কংগ্রেস। তাবড় চার প্রার্থী- স্পিকার আবু তাহের মণ্ডল, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এস সি মারাক, নগরোন্নয়নমন্ত্রী রনি ভি লিংডো ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এইচ ডি আর লিংডো তা হারলেনই। হারলেন আরও অনেকে। ফলে গত বারের চেয়ে ৭টি আসন কম পেল।
তার পরেও, গত কাল রাত পর্যন্ত কংগ্রেস দাবি করছিল, তাদের ২১, ইউডিপির ৬, পিডিএফের ৪, এইচএসপিডিপির ২ এবং ৩ নির্দল বিধায়ককে নিয়ে সহজেই ক্ষমতা ধরে রাখবেন বিদায়ী মুখ্যমন্ত্রী মুকুল সাংমা।
কিন্তু ১৯ আসন পাওয়া এনপিপিকে নিয়ে শনিবার থেকেই ‘কংগ্রেস হঠানও’ অভিযানে নেমে পড়েন নেডা (নর্থ-ইস্ট ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স) জোটের আহ্বায়ক হিমন্তবিশ্ব শর্মা। শিলং পৌঁছন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কিরেন রিজিজুও। পরের ১২ ঘণ্টায় রাজ্য রাজনীতির সমীকরণটাই বদলে গেল।
আরও পড়ুন: মুখ্যমন্ত্রীর গদি নিশ্চিত হতেই নাগা চুক্তির দিন ঘোষণা রিওর
সরকার গঠনের দাবি জানিয়ে বেরনোর পর মেঘালয়ের রাজভবনের সামনে হবু মুখ্যমন্ত্রী কনরাড সাংমা, হবু উপমুখ্যমন্ত্রী ডনকুপার রায় এবং অন্য বিধায়করা। ছবি: রাজীবাক্ষ রক্ষিত।
খ্রিস্টান রাজ্য মেঘালয়ে মাত্র ২টি আসন পেয়েছে বিজেপি। কিন্তু বিজেপি নেতারা বাকিদের বোঝান, কংগ্রেসের ‘মৌরসিপাট্টা’ শেষ করতে হলে বিরোধী দলগুলিকে এক হতেই হবে। একে একে ইউডিপি, এইচএসপিডিপি, পিডিএফ, নির্দলদের পক্ষে টানেন হিমন্ত-রিজিজু। বিকেলে হিমন্ত ঘোষণা করেন, মুখ্যমন্ত্রী হবেন তুরার সাংসদ তথা এনপিপি সভাপতি কনরাড সাংমা। উপ-মুখ্যমন্ত্রী হবেন ইউডিপি প্রধান ডনকুপার রায়। সন্ধ্যায় রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করে সরকার গড়ার আবেদন জানায় নতুন জোট। ৫৯ আসনের মধ্যে ৩৪ জন বিধায়কের সমর্থনপত্র জমা দেয় তারা।
নেডা জোট ও এনডিএ শরিক হয়েও চতুর চালে কনরাড মেঘালয়ে বিজেপির সঙ্গে প্রাক-নির্বাচনী মিত্রতা করেননি। এমনকী বিজেপির বিরুদ্ধে রীতিমতো সরব ছিলেন। তিনি জানতেন, খ্রিস্টান রাজ্য মেঘালয়ে গোমাংস বিতর্ক ও ব্যাপটিস্ট নেতাকে ভিসা না দেওয়ার ইস্যুকে কেন্দ্র করে অনেকেই বিজেপির উপরে ক্ষিপ্ত। ভোটের আগে তাদের হাত ধরলে এনপিপি ১৯টি আসন পেত না। ভোটের ফলে বিজেপির মাত্র ২টি আসন পাওয়া দেখিয়ে দিল কনরাডের সিদ্ধান্তই ঠিক। ভোটের পরে যে কোনও জোটের রাস্তা খোলা রেখেছিলেন তিনি। মনে করিয়ে দিয়েছিলেন, বোন আগাথা ইউপিএ আমলে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হয়েছিলেন। শিলং সূত্রের খবর, গত রাতে কংগ্রেস-এনপিপি জোট সরকারের কথাও ভাবতে শুরু করেছিলেন কনরাড সাংমা। কিন্তু হিমন্তের কৌশল ও সালিশির জোরে শেষ পর্যন্ত কংগ্রেসের হাত না ধরেই মুখ্যমন্ত্রিত্ব নিশ্চিত হয় কনরাড সাংমার।
আরও পড়ুন: মেঘালয়ে গভীর রাতে রাজভবনে কংগ্রেস, জোট বাড়াচ্ছে বিজেপি
কনরাড ও আগাথার মতে, রাজ্যের মানুষ তাঁদের বাবা পূর্ণ সাংমাকে যে ভালবাসা ও সম্মান দিয়েছেন, তারই প্রতিফলন হয়েছে এবারের ভোটে। কনরাড বাবার পথেই রাজ্যের উন্নয়নকে পাখির চোখ করতে চান বলে এনপিপি জানিয়েছে।
গারো পাহাড়ে অত্যন্ত জনপ্রিয় নেতা ছিলেন পূর্ণ সাংমা। লোকসভার প্রাক্তন স্পিকার পূর্ণ সাংমা ১৯৮৮-৯০ সাল পর্যন্ত মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। কংগ্রেস ছাড়ার পর এনসিপি ও পরে এনপিপির প্রতিষ্ঠাও তাঁর হাত ধরেই। পরবর্তীকালে তাঁর কন্যা আগাথা সাংমা তুরা লোকসভা কেন্দ্র থেকে জয়ী হন, মনমোহন সিংহ মন্ত্রিসভার সদস্যও হন। আগাথাই ছিলেন দেশের সর্বকনিষ্ঠ কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। এ বারের ভোটে আগাথা সাংমা দক্ষিণ তুরা বিধানসভা কেন্দ্র থেকে জয়ী হয়েছেন। তাঁর দাদা জেমস সাংমা ডাডেংগ্রে কেন্দ্রে জিতেছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy