Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

আবার অধ্যাদেশ জমি নিয়ে, তোপ সনিয়ার

জমি অধিগ্রহণ নিয়ে ফের অধ্যাদেশ জারির পথেই হাঁটল নরেন্দ্র মোদীর সরকার। সংসদের দুই কক্ষের অধিবেশন চালু থাকলে অধ্যাদেশ জারি করা যায় না। এ জন্য রাজ্যসভার অধিবেশনে ছেদ টানা (প্রোরোগ) অর্থাৎ কার্যত মুলতুবি রাখার সিদ্ধান্তে আজ সম্মতি দিয়েছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সংসদ বিষয়ক কমিটি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৮ মার্চ ২০১৫ ০৩:৪০
Share: Save:

জমি অধিগ্রহণ নিয়ে ফের অধ্যাদেশ জারির পথেই হাঁটল নরেন্দ্র মোদীর সরকার। সংসদের দুই কক্ষের অধিবেশন চালু থাকলে অধ্যাদেশ জারি করা যায় না। এ জন্য রাজ্যসভার অধিবেশনে ছেদ টানা (প্রোরোগ) অর্থাৎ কার্যত মুলতুবি রাখার সিদ্ধান্তে আজ সম্মতি দিয়েছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সংসদ বিষয়ক কমিটি।

রাজ্যসভায় কোনও ভাবেই জমি বিল পাশ করাতে না পেরে সরকার যে ফের অধ্যাদেশ জারি করতে চলেছে, সেটা আঁচ করেই কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী আজ চাঁছাছোলা ভাষায় জমি বিল নিয়ে সরকারকে আক্রমণ শানিয়েছেন এক চিঠিতে। বাজেট অধিবেশনের প্রথম অর্ধ শেষ হয়ে সংসদ বিরতিতে চলে যাওয়ার পরেই প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নিতিন গডকড়ী সব বিরোধী নেতাকে চিঠি দিয়েছিলেন। তার জবাবেই সনিয়ার ওই চিঠি। তাতে তিনি অভিযোগ এনেছেন, সরকার জমি অধিগ্রহণের বিল নিয়ে অর্ধ্যসত্য বলছে ও বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে।

কেন্দ্রী গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী চৌধুরি বীরেন্দ্র সিংহ অবশ্য এ দিনই বিরোধীদের আশ্বস্ত করতে জানিয়েছেন, নতুন করে যে অধ্যাদেশ জারি করা হবে, তাতে কিছু শর্ত শিথিল করার কথা ভাবছে সরকার। ষেমন, গোড়ায় কৃষকদের সম্মতির শর্তটি রাখতেই রাজি ছিল না সরকার। এখন ক্ষেত্রেবিশেষ ৫১ শতাংশ কৃষকের বা জমি-মালিকের সম্মতি পেলেই জমি অধিগ্রণ করা যাবে, এমন শর্ত রাখার কথাও সরকার গুরুত্ব দিয়েই ভাবছে বলে জানিয়েছেন গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী।

আগামী ৫ এপ্রিল শেষ হচ্ছে বর্তমান জমি অধ্যাদেশের মেয়াদ। তার আগে ২ এপ্রিলের মধ্যেই নতুন করে অধ্যাদেশ জারির কাজ সেরে ফেলতে চাইছে মোদী সরকার। এ ক্ষেত্রে বাধা ছিল সংসদ। চলতি বাজেট অধিবেশনের প্রথম অর্ধ শেষ হয়েছে। দ্বিতীর্য়াধ শুরু হওয়ার কথা ছিল ২০ এপ্রিল থেকে। অর্থাৎ বর্তমানে বিরতি চললেও অধিবেশন চালুই রয়েছে। আর সংসদ চালু থাকলে কোনও অধ্যাদেশ জারি করা যায় না। সে কারণে এই পর্যন্ত হওয়া রাজ্যসভার অধিবেশনে ছেদ টানার (প্রোরোগ) সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

কংগ্রেসের বক্তব্য, সরকার আলোচনার পথে না হেঁটে একতরফা ভাবে এগোতে চাইছে। কংগ্রেস মুখপাত্রের মতে, কিছু প্রভাবশালী বণিকের কায়েমি স্বার্থ পূরণের তাগিদে মোদী সরকার কার্যত বুলডোজার চালিয়ে এগোতে চাইছে জমি বিল নিয়ে। এরই পাশাপাশি সনিয়া চিঠিতে স্পষ্ট জানিয়েছেন, কৃষক স্বার্থ ক্ষুণ্ণ হয় এমন কোনও জমি নীতিতে তাঁর দল সমর্থন জানাবে না। ভাল হবে যদি কৃষকদের আবেগ ও আকাঙ্ক্ষার কথা মাথায় রেখে ইউপিএ জমানায় পাশ হওয়া জমি আইনই বহাল রাখা হয়।

কংগ্রেস-সহ তামাম বিরোধীদের আপত্তিতে সংসদে জমি অধ্যাদেশের বিল পাশ করাতে পারেনি কেন্দ্র। তবে অধিবেশন শেষ হতেই প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সনিয়া-সহ সব বিরোধী নেতাকে চিঠি লেখেন কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহণ মন্ত্রী নিতিন গডকড়ী। চিঠির বক্তব্য ছিল, দরকারে জমি অধ্যাদেশ নিয়ে মুখোমুখি বিতর্কে বসুন বিরোধী নেতারা। তবে স্রেফ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে যেন জমি বিলটির গতিরোধ না করা হয়। এর পরই আকাশবাণীর ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বিরোধীদের সমালোচনা করে বলেন, জমি অধ্যাদেশ নিয়ে মিথ্যা রটনা করছেন বিরোধীরা।

পাল্টা চিঠিতে গডকড়ী ও মোদীর যাবতীয় অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন সনিয়া। বিরোধীদের চিঠি দিয়ে গডকড়ী তার প্রতিলিপি সাংবাদিকদের হাতে তুলে দিয়েছিলেন। সনিয়াও সেটাই করেছেন। সনিয়া সেই চিঠিতে বাছাবাছা শব্দে ধারালো আক্রমণ শানিয়েছেন সরকারকে। নিতিনকে লেখা চিঠির শুরুতেই কংগ্রেস সভানেত্রী লিখছেন, “খোলাখুলিই বলছি আপনার চিঠিতে অর্ধসত্য ও বিভ্রান্তিকর ব্যাখ্যার বহর দেখে আমি চমকে গিয়েছি! যদিও আমার অবাক হওয়া উচিত ছিল না। কেননা বলার মতো সঙ্গত যুক্তি খুঁজে না পেলে এই রকম বিভ্রান্তি ছড়ানোই আপনাদের সরকারের বিশেষ চরিত্র।”

কংগ্রেস সভানেত্রীর বক্তব্য, সরকার বলতে চাইছে জমি বিলে যে সব পরিবর্তন সরকার করেছে তা কৃষকদের ভালর জন্যই। এবং যাঁরা তার বিরোধিতা করছেন, তাঁরাই কৃষক-বিরোধী ও দেশ-বিরোধী। আম ধারণা কিন্তু উল্টো। মানুষের ধারণা হল, কেন্দ্রের বর্তমান সরকার পুরোপুরি গরিব ও কৃষক-বিরোধী। বেসরকারি সংস্থাকে মুনাফা পাইয়ে দিতে গরিবের স্বার্থের সঙ্গে আপস করতেও সরকার প্রস্তুত। চিঠিতে এক দুই করে জমি বিলের শর্ত ধরে ধরে সেগুলির সমালোচনা করেছেন সনিয়া। শিল্প করিডর, রেল বা জাতীয় সড়ক-সহ ১৩টি প্রয়োজনে জমি নিতে নতুন হারে ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসন দেওয়া বা সামাজিক প্রভাবের সমীক্ষা ইত্যাদি সংক্রান্ত বিষয়ে সরকার কী কী ‘মিথ্যা দাবি’ ও ‘বিভ্রান্তি’ ছড়াচ্ছে তা চিঠির ছত্রে ছত্রে তুলে ধরেছেন তিনি।

চিঠিতে এ ভাবে আক্রমণ শানিয়ে একইসঙ্গে ৩টি কাজ করতে চেয়েছেন কংগ্রেস সভানেত্রী।

• কৃষক, গরিব ও সমাজের অনগ্রসর অংশে কংগ্রেসের হারানো জমি উদ্ধার।

• মোদীর জমি-নীতির বিরোধিতায় নেতৃত্বের রাশ হাতে রাখা।

• অধ্যাদেশের বিরোধিতা করার জন্য অন্যান্য বিরোধী দলকেও চাপে রাখা।

কংগ্রেস যে কেন্দ্রের জমি নীতিতে সায় দেবে না, তা স্পষ্ট ছিল আগে থেকেই। কিন্তু নিজের শিবিরেও চাপে রয়েছেন মোদী। পরিকাঠামো উন্নয়ন, শিল্প করিডর, যৌথ প্রকল্প ও নিরাপত্তার প্রয়োজনে জমি নিতে কৃষকদের সম্মতি নেওয়ার শর্তই রাখা হয়নি বর্তমান অধ্যাদেশে। বিজেপির একাংশ, এমনকী, সঙ্ঘও চায় কিছুটা নরম হোক সরকার। এই পরিস্থিতিতেই গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী আজ জানান, ইউপিএ জমানার মতো হারে না হলেও অধিগ্রহণের আগে অন্তত ৫১% কৃষকের প্রাক-সম্মতি নেওয়ার শর্ত জোড়া হতে পারে নতুন অধ্যাদেশে।

তাতেও কি জমি বিল বা নয়া অধ্যাদেশে সায় দেবেন সনিয়া?

সে আশা ক্ষীণ। কারণ, দলকে তলানি থেকে তুলে আনতে জমিই এখন মূল প্রশ্ন তাঁর। তলেতলে কংগ্রেসও চায় অনড় থাকুন মোদী। তা-হলে জমি অধিগ্রহণ নিয়ে সনিয়া-রাহুলের রাজনীতিও জিইয়ে থাকবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE