Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

রামায়ণ নিয়ে মেলা যোগীর, ত্রস্ত সঙ্ঘ

লখনউয়ের ‘ইন্দিরা গাঁধী প্রতিষ্ঠানে’ আগামী ১৪ তারিখ থেকে শুরু হচ্ছে ছ’দিনের আন্তর্জাতিক রামায়ণ সম্মেলন। যেখানে আসিয়ান গোষ্ঠীভুক্ত ১০টি দেশের সরকারি শীর্ষ প্রতিনিধিদের সামনে জাগিয়ে তোলা হবে রামায়ণের আমলের রাম রাজত্ব। বিদেশ মন্ত্রকের উদ্যোগে এই কাজে ঝাঁপ দিয়েছে যোগী আদিত্যনাথের উত্তরপ্রদেশ সরকার।

অগ্নি রায়
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০২ জানুয়ারি ২০১৮ ০৪:২৭
Share: Save:

তৈরি হচ্ছে পেল্লায় সীতার হেঁশেল! প্রতিদিন ১ হাজার অভ্যাগতকে খাওয়াতে হবে তো। অদূরেই গড়া হচ্ছে রাম বাজার। ১০ ফুট উচ্চতার ভাস্কর্যে কোথাও বালি-সুগ্রীবের যুদ্ধ, কোথাও রাবণের সীতাহরণ, অথবা মায়াহরিণ খুঁজতে উদ্যত রামচন্দ্র।

লখনউয়ের ‘ইন্দিরা গাঁধী প্রতিষ্ঠানে’ আগামী ১৪ তারিখ থেকে শুরু হচ্ছে ছ’দিনের আন্তর্জাতিক রামায়ণ সম্মেলন। যেখানে আসিয়ান গোষ্ঠীভুক্ত ১০টি দেশের সরকারি শীর্ষ প্রতিনিধিদের সামনে জাগিয়ে তোলা হবে রামায়ণের আমলের রাম রাজত্ব। বিদেশ মন্ত্রকের উদ্যোগে এই কাজে ঝাঁপ দিয়েছে যোগী আদিত্যনাথের উত্তরপ্রদেশ সরকার।

মনে করা হচ্ছে উদ্দেশ্য দু’টি। আদিত্যনাথের নিজের নির্বাচনী ক্ষেত্র গোরক্ষপুর-সহ দু’টি লোকসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচন ঝুলছে। তার আগে রামায়ণকে জীবন্ত করে তুলে উত্তরপ্রদেশে হিন্দুত্ববাদের জোয়ার আনার চেষ্টা। দ্বিতীয়ত তাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়া-সহ আসিয়ান গোষ্ঠীভুক্ত বিভিন্ন দেশের সঙ্গে রামায়ণকে মাধ্যম করে কূটনৈতিক ঘনিষ্ঠতা বাড়ানো। দেশ কাল সময় এবং ধর্মের তারতম্যে আখ্যান যথেষ্ট বদলে গিয়েছে ঠিকই, কিন্তু দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া জুড়ে রামায়ণ এখনও প্রবল জনপ্রিয়। বিদেশ মন্ত্রকের এক কর্তা যেমন জানাচ্ছেন, ‘‘সমস্ত ভারতীয় ভাষায় বা ইউরোপের বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদ হওয়াই শুধু নয়। রামায়ণ দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন রকমের। এই আলোচনাচক্রের মাধ্যমে এই সমস্ত দেশের রামায়ণের সাংস্কৃতিক যোগসূত্রগুলির আদানপ্রদান করতে পারব। রামকে কেন্দ্র করে আমরা গড়ে তুলতে পারব এক আন্তর্জাতিক সাংস্কৃতিক সম্মেলন।’’

অনুষ্ঠানের বাহ্যিক আঙ্গিক বাল্মীকির মূল রামায়ণের আধারে। আন্তর্জাতিক অতিথিদের জন্য তৈরি হচ্ছে যে ফুডকোর্ট, তার নাম ‘সীতা রসুই’। রামায়ণে অযোধ্যায় সীতার রান্নাঘরের যে বর্ণনা ছিল, সে ভাবেই তৈরি হবে এই ফুডকোর্ট! রাম বাজারে উত্তরপ্রদেশ তথা ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের হস্ত এবং কুটির শিল্পসামগ্রী থাকবে। ধর্ম, সংস্কৃতি আধ্যাত্মিকতা এবং অভিযান হবে এই বাজারের থিম। তবে শুধুই ভারতীয় রামায়ণ নয়। পরিসর দেওয়া হবে ইন্দোনেশিয়া, কম্বোডিয়া, তাইল্যান্ড, মায়নমারের মতো রাষ্ট্রগুলিকেও। সেখানকার শিল্পীরা এসে অডিটোরিয়ামে তাঁদের দেশের রামায়ণের অভিনয় করবেন।

আয়োজন তো হচ্ছে। কিন্তু এই গোটা উদ্যোগে কিছুটা আশঙ্কার মেঘ দেখছেন আরএসএস-এর কট্টরপন্থী একটা অংশ। দেশ ভেদে রামায়ণের এই বহুত্ববাদ আরএসএস-এর না-পসন্দ। বৌদ্ধ রামায়ণ অনুসারে সীতা রামের বোন। কম্বোডিয়া-সহ বেশ কিছু দেশে সে ভাবেই তৈরি হয়েছে মহাকাব্য। আবার তাইল্যান্ডের রামায়ণের আখ্যানে রামের থেকে হনুমানের বীরত্ব ও গুরুত্ব বেশি। জৈন সংস্করণে রাম অহিংসার পুজারী। তাই রাবণকে হত্যা করেন লক্ষ্মণ এবং দু’জনেই নরকবাসী হন।

রামায়ণের এই ‘অপভ্রংশে’ অখুশি এক আরএসএস নেতার কথায়, ‘‘আমরা যোগীকে বলেছি, সম্মেলনে এই মহান হিন্দুশাস্ত্রের যেন কোনও অসম্মান না হয়। শ্রীরামকে নিয়ে যেন মাথা হেঁট না-করতে হয় আমাদের।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE