Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

নাক না গলিয়েই নয়া ব্যবসার বন্ধু মোদী

কেমব্রিজ ফেরত বাঙালি মেয়ের মুখে ব্যবসা শুরুর কথা শুনে মা বলেছিলেন, ‘‘সর্বনাশ!’’ শুক্রবার ‘স্টার্ট-আপ ইন্ডিয়া’র মঞ্চে সেই মেয়ে (লাইমরোড ডট কমের প্রতিষ্ঠাতা) শুচি মুখোপাধ্যায়ের মুখে ওই পুরনো গল্প শুনলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

নিজস্বীতে মেতে। ‘স্টার্ট আপ অ্যাকশন প্ল্যান’ ঘোষণা অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। শনিবার নয়াদিল্লিতে প্রেম সিংহের তোলা ছবি।

নিজস্বীতে মেতে। ‘স্টার্ট আপ অ্যাকশন প্ল্যান’ ঘোষণা অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। শনিবার নয়াদিল্লিতে প্রেম সিংহের তোলা ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৭ জানুয়ারি ২০১৬ ০৩:৩৭
Share: Save:

কেমব্রিজ ফেরত বাঙালি মেয়ের মুখে ব্যবসা শুরুর কথা শুনে মা বলেছিলেন, ‘‘সর্বনাশ!’’

শুক্রবার ‘স্টার্ট-আপ ইন্ডিয়া’র মঞ্চে সেই মেয়ে (লাইমরোড ডট কমের প্রতিষ্ঠাতা) শুচি মুখোপাধ্যায়ের মুখে ওই পুরনো গল্প শুনলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ঘোষণা করলেন, নতুন ব্যবসা শুরুর ক্ষেত্রে একগুচ্ছ সুযোগ-সুবিধা। দাবি করলেন, আগামী দিনে শুচি মুখোপাধ্যায়দের জন্য লাল ফিতের ফাঁস আলগা করে এ বার লাল কার্পেট বিছিয়ে দেবে তাঁর সরকার।

এ দিন বিজ্ঞান মঞ্চের অনুষ্ঠানে নতুন ব্যবসার জন্য নির্দিষ্ট নীতি (স্টার্ট-আপ অ্যাকশন প্ল্যান) ঘোষণা করতে গিয়ে মোদীর দাবি, এ দেশে তার পথ মসৃণ করতে যতটা সম্ভব কম নাক গলাবে তাঁর সরকার। নজরদারির নয়, ভূমিকা হবে সহায়কের। কাজে তার প্রমাণ দিতে নতুন ব্যবসায় প্রথম তিন বছর ইনস্পেক্টরের পা না-পড়ার কথা বলেছেন তিনি। ঘোষণা করেছেন, কর ছাড়, পেটেন্ট আবেদনের খরচ কমানো, ব্যবসায় ঢালার জন্য তহবিল তৈরির কথা। জোর দিয়েছেন এক-জানলা ব্যবস্থা চালুর উপরে। একে তাই বাজেটের আগেই সংস্কারের ইনিংস হিসেবে দেখছেন অনেকে।

প্রধানমন্ত্রী মঞ্চে ওঠার আগে এ দিন মুম্বইয়ে অবশ্য সমালোচনার হুল ফুটিয়েছেন রাহুল গাঁধী।

তাঁর দাবি, দেশে স্টার্ট-আপ সংস্কৃতি তৈরির জন্য আগে সহিষ্ণুতা জরুরি। যাতে চিন্তার স্বাধীনতা থাকে। কংগ্রেসের যুক্তি, মোদী সরকার ঢাকঢোল পিটিয়ে যতই ‘স্টার্ট-আপ ইন্ডিয়া’ শুরু করুক, মনমোহন-জমানার দশ বছরে ভারতে ৯,০০০ কোটি ডলার ঢেলেছিল ৪,০০০ সংস্থা। যার দু’হাজারই স্টার্ট আপ। রাহুলের সমালোচনার জবাব সরাসরি না দিলেও কংগ্রেসকে বিঁধতে ছাড়েননি মোদী। বলেছেন, ব্যবসা লাভজনক না-হলে, তাড়াতাড়ি তা গোটানোর বন্দোবস্ত থাকা উচিত। কিন্তু তার জন্য আনা দেউলিয়া বিল আটকে সংসদে। তরুণ শিল্পপতিদের তাঁর পরামর্শ, ‘‘টুইটার-ফেসবুকে বলুন, কাজ আটকে আছে।’’

আমজনতা ও শিল্পমহলের নাড়ি বুঝতে মোদীর দক্ষতা অনেক সময় মানেন বিরোধীরাও। এ দিন কানায়-কানায় ভরা বিজ্ঞান ভবনে বর্তমান ও ভবিষ্যৎ উদ্যোগপতিদেরও মনের কথা বলছিলেন তিনি। প্রথম থেকেই দখল নিয়েছেন ‘গ্যালারি’র। তাই বক্তৃতার মাঝে প্রায়ই ভেসে এল প্রবল হাততালি, গলা ফাটানো চিৎকার, এমনকী শিসও! যখন স্টার্ট-আপের আয়কর ছাড়ের ঘোষণা করেছেন, তখন আওয়াজ উঠল, ‘‘মার দিয়া চওকা।’’ অনুষ্ঠান শেষে এ দিনের ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছেন শিল্প ও বণিকসভার প্রতিনিধিরাও।

এ দিন উদ্যোগপতিদের মোদী বোঝাতে চেয়েছেন যে, তাঁদের সুবিধা-অসুবিধা তিনি বোঝেন। কখনও বলেছেন, ‘‘নতুন ব্যবসা শুরু করা সকলেই পরিবারের কারও-না-কারও কাছে সর্বনাশ শুনেছেন।’’ আবার কখনও বলেছেন, চাওয়ালার ছেলে হিসেবে হোটেল চেনের কথা কেন ভাবেননি তিনি? তাঁর কথায়, ‘‘ঝুঁকি নিয়েছিল বলেই উবের আজ কুবের।’’ আবার কখনও বল গ্যালারির বাইরে পাঠিয়েছেন এই বলে যে, ‘সরকার ৭০ বছরে অনেক কাজ করেছে। তাতে কোথায় পৌঁছেছি? তাই সরকার যত কম করে, ততই তা ব্যবসার পক্ষে ভাল। আপনারা বলুন, কী করতে হবে না।’

দেশের প্রায় সব স্টার্ট-আপ সংস্থার প্রধান এ দিন উপস্থিত ছিলেন বিজ্ঞান ভবনে। অনেকে চেয়ার না-পেয়ে বসেছিলেন সিঁড়িতেই। তাঁদের কাছে নিজের প্রত্যাশা স্পষ্ট করতে ভোলেননি মোদী। আহ্বান জানিয়েছেন, শুধু তথ্যপ্রযুক্তি পরিষেবার বৃত্ত থেকে বেরিয়ে আমজনতা, কৃষক, গরীব-গুর্বোদের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান খুঁজতে। এমন সমাধান, যার খরচ তাঁদের পক্ষে বওয়া সম্ভব। তা সে নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করে কম খরচে ফল-সব্জি মজুতের ব্যবস্থাই হোক বা ইন্টারনেট মারফত হস্তশিল্প বিপণনের উপযুক্ত প্ল্যাটফর্ম তৈরি। তাঁর প্রতিশ্রুতি, এই সমস্ত ক্ষেত্রে উদ্ভাবনী চিন্তা এলে, তার হাত ধরতে এবং সহায়তা দিতে তৈরি সরকার। অন্তত নতুন সমাধান নিয়ে ব্যবসা খাড়া করার পথে কেন্দ্র যে বাধা হয়ে দাঁড়াবে না, সেই কথা দিয়েছেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রীর আগে এ দিন ওই একই প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। তিনিও বলেন, সরকারের একমাত্র কাজই হল, সরকারি নাক গলানো বন্ধ করা। বিজ্ঞান ভবনে এই অনুষ্ঠানে কোনও সরকারি দফতরের নামগন্ধ ছিল না। ব্যানার-প্ল্যাকার্ডে শুধুই স্টার্ট-আপের জয়গান আর প্রতিষ্ঠাতাদের কুর্নিশ।

অগস্টে স্টার্ট-আপ ইন্ডিয়ার ঘোষণা করেছিলেন মোদী। কিন্তু তার সংজ্ঞা কী হবে, নীতিতে কী থাকবে, সেই সমস্ত এতদিন স্পষ্ট করা হয়নি। তাই এই পুরো বিষয়টি স্থির করতে সলতে পাকানো শুরু হয়েছিল অনেক আগে থেকেই। সেপ্টেম্বরে সিলিকন ভ্যালিতে প্রধানমন্ত্রী সেখানকার শিল্পপতিদের সঙ্গে বৈঠকে বসার পরে ছবিটা কিছুটা স্পষ্ট হয়। এর পর শিল্পসচিব অমিতাভ কান্ত আলোচনা শুরু করেন শিল্পমহল ও স্টার্ট-আপ সংস্থাগুলির সঙ্গে। বৈঠক হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর প্রিন্সিপ্যাল সেক্রেটারি নৃপেন্দ্র মিশ্র, সব মন্ত্রকের সচিব ও দেশের প্রধান স্টার্ট-আপ সংস্থাগুলির সঙ্গেও। সেই অনুযায়ীই ঠিক হয়েছে স্টার্ট-আপ ইন্ডিয়ার দিশা নির্দেশ।

তবে অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করিয়ে দিচ্ছেন, ঢাকঢোল পিটিয়ে ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ শুরুর পরেও লগ্নি এখনও সে ভাবে আসেনি। তাই স্টার্ট-আপ ইন্ডিয়াও নতুন ব্যবসার পথ কতটা মসৃণ করে, তা দেখতে আগামীর দিকে চোখ রাখার পক্ষপাতী তাঁরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

national news Modi start up india
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE