৩০০০ কোটি টাকা খরচে তৈরি হয়েছে সর্দার বল্লভভাই পটেলের এই মূর্তি। —ফাইল ছবি
তাদের দেশের অনুদানের টাকা পটেল মূর্তি তৈরিতে খরচ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে ব্রিটেন। মূর্তি তৈরির ৩০০০ কোটি টাকা দিয়ে কী কী করা যেত, তা নিয়ে চর্চা কম হয়নি। ভারতের মতো দরিদ্র দেশে এই বিপুল অর্থব্যয়ে শুধুমাত্র একটি মূর্তি তৈরির বিলাসিতা সাজে কি না, তা নিয়ে সরব নানা মহল। তার মধ্যেই এবার নয়া বিতর্ক সামনে এল। মূর্তি তৈরিতে প্রায় ২০১৬-১৭ আর্থিক বছরে ১৫০ কোটি টাকা দিয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত পাঁচটি তেল সংস্থা। শুধু বিতর্কই নয়, সামাজিক উন্নয়ন খাতের টাকা কেন মূর্তি তৈরিতে দেওয়া হল, তা নিয়ে সম্প্রতি প্রশ্ন তুলেছে কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল (ক্যাগ)।
ক্যাগের রিপোর্টে উঠে এসেছে, অয়েল অ্যান্ড ন্যাচরাল গ্যাস কমিশন (ওএনজিসি), হিন্দুস্তান পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন লিমিটেড (এইচপিসিএল), ভারত পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন লিমিটেড (বিপিসিএল) ইন্ডিয়ান অয়েল কর্পোরেশন লিমিটেড (আইওসিএল) এবং অয়েল ইন্ডিয়া লিমিটেড (অয়েল)—এই চার রাষ্ট্রায়ত্ত তেল সংস্থা মূর্তি তৈরিতে মোট ১৪৬.৮৩ কোটি টাকা অনুদান হিসাবে দিয়েছে। এর মধ্যে ওএনজিসি দিয়েছে ৫০ কোটি, আইওসিএল ২১.৮৩ কোটি টাকা এবং বাকি তিনটি সংস্থা ২৫ কোটি করে মোট ৭৫ কোটি টাকা দিয়েছে। এই টাকা গিয়েছে ‘সর্দার বল্লভভাই পটেল রাষ্ট্রীয় একতা ট্রাস্ট’ বা এসভিপিআরইটি-তে।
সরকারি-বেসরকারি সব সংস্থাকেই তাদের লাভের একটি অংশ সামাজিক দায়বদ্ধতা খাতে বরাদ্দ করতে হয়। সেই টাকা শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কলা-সংস্কৃতির উন্নয়নের মতো কাজে খরচ করে সংস্থাগুলি। রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলি এই খাতের টাকাই মূর্তি তৈরির জন্য অনুদান হিসাবে দিয়েছে। কোম্পানি আইনের আট নম্বর তফসিলে বলা হয়েছে, হেরিটেজ বা সাংস্কৃতিক উন্নয়নে ওই টাকা খরচ করা যেতে পারে।
গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
আরও পড়ুন: আমাদের থেকে উন্নয়ন প্রকল্পের দান নিয়ে মূর্তি বানাচ্ছ? ফুঁসছে ব্রিটেন
আর এখানেই প্রশ্ন তুলেছে সরকারি সর্বোচ্চ অডিট সংস্থা ক্যাগ। এ বছরের আগস্ট মাসেই সংসদে ক্যাগের একটি রিপোর্ট পেশ হয়। সেই রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, পটেলের মূর্তি তৈরির জন্য যে এসভিপিআরইটি তৈরি করা হয়েছে, তা কখনওই হেরিটেজ বা সাংস্কৃতিক খাতে পড়তে পারে না। কিন্তু সেই মূর্তি তৈরিতেই কীভাবে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা এই বিপুল পরিমাণ টাকা দিল, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয় ওই রিপোর্টে।
আরও পডু়ন: অরিহন্ত সফল, ভারতের পরমাণু ত্রিশূল সম্পূর্ণ, ‘যোগ্য জবাব দিলাম’, টুইট মোদীর
ক্যাগের ওই রিপোর্টের পর অবশ্য ওএনজিসি জানায়, এই মূর্তি তৈরির ফলে নর্মদা উপকূলের বিস্তীর্ণ এলাকায় শিক্ষা, স্বাস্থ্য-সহ সামগ্রিক উন্নয়ন হবে ধরে নিয়েই সামাজিক উন্নয়ন খাতে এই অনুদান দেওয়া হয়েছে। তবে অন্য সংস্থাগুলির বক্তব্য পাওয়া যায়নি। যদিও ওয়াকিবহাল মহলের একটা বড় অংশ মূল মূর্তি তৈরির বিপুল খরচের মতোই একই রকম প্রশ্ন তুলেছে। এই অংশের বক্তব্য, তেল সংস্থাগুলি মোদীকে তুষ্ট করতেই এই টাকা মূর্তি তৈরিতে অনুদান দিয়েছে। তার পরিবর্তে প্রকৃত সামাজিক উন্নয়নের কাজে ওই টাকা খরচ করা হলে অনেক বেশি প্রান্তিক মানুষ উপকৃত হতেন।
আরও পডু়ন: ১৬ বছর জেল খেটে গীতা হাতে পাকিস্তানে ফিরছেন জালালউদ্দিন
গুজরাতের কেড়ওয়াড়িতে নর্মদা নদীর তীরে ১৮২ মিটার উচ্চতার সর্দার পটেলের ‘স্ট্যাচু অব ইউনিটি’ মূর্তি তৈরিতে খরচ হয়েছে ২৯৯০ কোটি টাকা। ২০১৪ থেকে মূর্তি তৈরির কাজ শুরু হয়। ব্যবহার হয়েছে ৫৭০০ মেট্রিক টন স্টিল, ২২,৫০০ মেট্রিক টন সিমেন্ট, ১৮,৫০০ টন স্টিল রড এবং ১৮.৫ লক্ষ কেজি ব্রোঞ্জ ক্ল্যাডিং।
ভারতের রাজনীতি, ভারতের অর্থনীতি- সব গুরুত্বপূর্ণ খবর জানতে আমাদের দেশ বিভাগে ক্লিক করুন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy