Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

স্টিং-অস্ত্রই ব্যুমেরাং এখন কেজরীবালের

‘স্টিং’-এর কী জ্বালা! এক বার নয়, এক সপ্তাহে দু’-দু’বার বিঁধল গোপন-নজরদারির হুল! সদ্যই শরীর-মনের নেচারোপ্যাথি চিকিত্‌সা করিয়ে এসেছেন বেঙ্গালুরু থেকে। কিন্তু এ জ্বালা কমবে কীসে? ভূত তো সর্ষেতেই! হুল ফোটাচ্ছেন নিজের দলের লোকেরাই। এত দিন দুর্ন়ীতির বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করে আম আদমিকে ‘স্টিং অপারেশন’ চালানোর ডাক দিয়েছেন অরবিন্দ কেজরীবাল। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধেও সেই অস্ত্র প্রয়োগ করেছিলেন তিনি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০১ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:২৮
Share: Save:

‘স্টিং’-এর কী জ্বালা! এক বার নয়, এক সপ্তাহে দু’-দু’বার বিঁধল গোপন-নজরদারির হুল!

সদ্যই শরীর-মনের নেচারোপ্যাথি চিকিত্‌সা করিয়ে এসেছেন বেঙ্গালুরু থেকে। কিন্তু এ জ্বালা কমবে কীসে? ভূত তো সর্ষেতেই! হুল ফোটাচ্ছেন নিজের দলের লোকেরাই। এত দিন দুর্ন়ীতির বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করে আম আদমিকে ‘স্টিং অপারেশন’ চালানোর ডাক দিয়েছেন অরবিন্দ কেজরীবাল। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধেও সেই অস্ত্র প্রয়োগ করেছিলেন তিনি। আর এখন আম আদমি পার্টির অভ্যন্তরীণ কোন্দল যত বাড়ছে ততই খোদ কেজরীবালের বিরুদ্ধেই একের পর এক স্টিং অপারেশনের ঘটনা সামনে আসছে। কার্যত তাঁরই অস্ত্রে তাঁকে বেসামাল করার চেষ্টা চলছে।

কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসার পরে দিল্লিতে সরকার গড়ার চেষ্টা করেছিল বিজেপি। কেজরীবাল সে সময় অভিযোগ করেন, দিল্লির দখল পেতে বিজেপি আপের বিধায়কদের ঘুষ দিয়ে হাত করতে চাইছে। দলের দাবি ছিল, অরুণ জেটলির দফতর থেকে ফোন করে আপ বিধায়কদের কোটি-কোটি টাকা ঘুষ দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। যাতে বিধানসভায় ভোটাভুটির সময় তাঁরা গরহাজির থাকেন। রীতিমতো অডিও টেপ শুনিয়ে কেজরীবাল অভিযোগ তোলেন, আপের রোহিণী এলাকার বিধায়ক রাজেশ গর্গ-সহ ৬-৭ জনকে বিধায়ক ফোন করে ঘুষ দেওয়ার চেষ্টা করছে বিজেপি। কেজরীবাল-সেনা ফোনের সেই কথোপকথন সংবাদমাধ্যমেও শোনান।

আজ সেই রাজেশ গর্গই ওই স্টিং-এর হোতার বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছেন ভাঁওতাবাজির। তাঁর দাবি, বিজেপি নয়। সম্ভবত আপের কোনও সমর্থকই শীর্ষ নেতৃত্বের নির্দেশে ওই ফোনটি করেছিলেন। বিজেপি নেতার নামে ওই ফোন করে রাজনৈতিক অপ্রচার চালানোই ছিল উদ্দেশ্য। যাতে বিধানসভা নির্বাচনে ফায়দা তুলতে পারে দল।

গত মাসেই দল থেকে সাসপেন্ড হয়েছেন রাজেশ। ফলে তাঁর অভিযোগ বিশেষ পাত্তা দিতে নারাজ আপ শিবির। যদিও নিজের অভিযোগের সপক্ষে রাজেশের যুক্তি, “সে সময়ে অরুণ জেটলির দফতর থেকে ফোন করে আমায় দলবিরোধী কাজ করার জন্য ১০ কোটি টাকা দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়। আমি বিষয়টি পুলিশকে জানাই। মোবাইল নম্বরের ভিত্তিতে গ্রেফতার হয় এক জন। তার পরেই দলে কেজরীবাল-ঘনিষ্ঠ বলে পরিচত সঞ্জয় সিংহ ফোন করে ওই অভিযোগ তুলে নিতে বলেন। আমি অভিযোগ প্রত্যাহার না করলেও, পরে জানতে পারি কেজরীবাল শিবির ওই অভিযুক্তকে মুক্ত করিয়ে নিয়েছে।”

গর্গের দাবি, “কেন ওই ব্যক্তিকে ছাড়ানোর জন্য তত্‌পর ছিল কেজরীবাল শিবির, সেই জবাব দেওয়া উচিত।” তাঁর অভিযোগ, ওই সময়ে ঘুষ দিতে চেয়ে বিভিন্ন বিধায়কদের কাছে যে ফোন গিয়েছিল তার অধিকাংশ কেজরীবালের ইঙ্গিতেই করা হয়েছিল।

গত সপ্তাহে দলীয় বিধায়কের সঙ্গে কেজরীবালের কথোপকথনের একটি টেপ সামনে এসেছে। যেখানে তিনি দলের অন্য নেতাদের সম্পর্কে অশালীন শব্দ প্রয়োগ করছেন বলে শোনা যায়। আর আজ ভুয়ো ফোনের অভিযোগ সামনে আসার পরপরই মুখ খুলেছে বিজেপি শিবির। দলের সচিব শ্রীকান্ত বলেন, “শিকারি আবার শিকার হল। এত দিন মুখে মর্যাদা ও নীতির কথা বলে এসেছেন, এখন ক্ষমতায় আসতেই আসল চেহারাটা সামনে চলে আসছে কেজরীবালের। বিষয়টি নিয়ে নতুন করে তদন্ত শুরুর কথাও ভাবছে দিল্লি পুলিশ। আজ গর্গের অভিযোগ প্রসঙ্গে দিল্লির পুলিশ কমিনশার বি এস বাসি বলেন, “আমরা এই বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করছি এবং ভবিষ্যতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।”

আরও চাপে যোগেন্দ্র

আম আদমি পার্টির প্রধান মুখপাত্রের পদ থেকে মঙ্গলবার সরানো হল যোগেন্দ্র যাদবকে। এর আগে কেজরীবােলর ইচ্ছেতে আপের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ, জাতীয় কর্মসমিতি থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল বিদ্রোহী নেতা প্রশান্ত ভূষণ ও যোগেন্দ্রকে। তাঁদের শেষ পর্যন্ত দল থেকেও বহিষ্কার করা হতে পারে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE