সাসারামে শের শাহের সমাধি। ছবি: সঞ্জয় চৌধুরী।
যে কাজটা প্রশাসন করতে পারত, কিন্তু করেনি সেই কাজটাই করতে উদ্যোগী হয়েছে একাদশ শ্রেণির দুই ছাত্র। রোহতাস জেলার সাসারামে পরিখা ঘেরা শের শাহ সুরির সমাধিস্থলের চারপাশটি দূষণ মুক্ত করতে চেয়ে তারা আর্জি জানিয়েছে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছে। আর্বজনা ভরা পরিখার জল যে ভাবে দূষণ ছড়াচ্ছে তা দূর করাই আপাতত তাদের লক্ষ্য। রাষ্ট্রপতি ভবন থেকে এই দুই ছাত্রের চিঠির উত্তরও এসেছে। এখন অপেক্ষা প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের প্রয়োজনীয় তৎপরতার।
১৫৪৫ সালে সাসারামে তৈরি শের শাহের সমাধিস্থলটি প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধীনে ‘হেরিটেজ সাইট’ হিসেবে ইতিমধ্যেই ঘোষিত। মাত্র পাঁচ বছরের শাসনকালে শের শাহ বুঝিয়ে দিয়েছিলেন যে তিনি বড় মাপের প্রশাসক। সাসারামের এই ভূমিপুত্রের মৃত্যুর পর জন্মস্থান সাসারামেই তাঁকে সমাধিস্থ করা হয়। দেশের ‘দ্বিতীয় তাজমহল’ হিসেবে পরিচিত এই পরিখা ঘেরা সমাধিস্থলটি দেখার জন্য প্রতি বছর ভিড় করেন দেশি এবং বিদেশি পর্যটকরা। গত বছর এখানে আড়াই লক্ষ পর্যটকের পা পড়েছে। এর মধ্যে দুশো জনেরও বেশি বিদেশি। এমন এক আকর্ষনীয় পর্যটন কেন্দ্রকে ঘিরে গড়া পরিখার জল এখন দুর্গন্ধ এবং দূষণের আঁতুড়ঘরে পরিণত হয়েছে। তার থেকে মুক্তি পেতে স্থানীয় একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের দুই ছাত্র বিনীত প্রকাশ এবং মণিরাজ সিংহ শেষ পর্যন্ত গত ডিসেম্বরে রাষ্ট্রপতির হস্তক্ষেপ চান। রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রীকে লেখা চিঠিতে স্থানীয় প্রশাসনের উদাসীনতাকে দায়ি করে দ্রুত এই সমস্যা সমাধানের আর্জি জানায় তারা। রাষ্ট্রপতি ভবন তাদের চিঠিতে সাড়া দিয়ে কেন্দ্রের কলা সংস্কৃতি মন্ত্রককে বিষয়টি দেখার জন্য ইতিমধ্যেই নির্দেশ দিয়েছে। সংস্কৃতি মন্ত্রককে দেওয়া চিঠির একটি প্রতিলিপি দুই ছাত্রের স্কুলেও পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। ফেব্রুয়ারিতে পাঠানো রাষ্ট্রপতি ভবনের সেই চিঠিই এখন দুই ছাত্রের ভরসা।
বিনীত ও মণিরাজ দেশের প্রথম নাগরিককে জানিয়েছেন, এই দূষিত জলকে কী ভাবে পরিশুদ্ধ করা যায়, তার একটি পদ্ধতি তারা তৈরি করেছে। তাদের তৈরি সেই পদ্ধতি রাঁচিতে অনুষ্ঠিত একটি প্রদর্শনীতে দেখিয়ে তারা প্রশংসাও কুড়িয়েছে। পরে রোহতাস জেলায় বিশ্ব হেরিটেজ দিবসেও সেটি প্রদর্শিত হয়। স্থানীয় মানুষের বক্তব্য, তৈরির সময় থেকেই পরিখার জল পরিশোধনের ব্যবস্থা ছিল। পরিখাটি এমন ভাবে তৈরি করা হয় যাতে নোংরা জল বেরিয়ে গিয়ে পরিষ্কার জল ঢুকবে। ফলে জমে থাকা জল থেকে দূষণ বা রোগ ছড়ানোর সুযোগ থাকবে না। কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে সেই ব্যবস্থাটি নষ্ট হয়ে গিয়ে পরিখাটি এখন দূষিত। কথা প্রসঙ্গে বিনীত বলে, “স্থানীয় প্রশাসন এই নিয়ে কোনও ব্যবস্থাই নেয়নি। তাই আমরাই এই কাজে এগিয়ে এসেছি। আমরা এই কাজটা করতে চাইছি। প্রশাসন প্রয়োজনীয় অর্থের ব্যবস্থা করুক।” প্রধানমন্ত্রীর “স্বচ্ছ ভারত অভিযান”-কে মাথায় রেখে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকেও তারা চিঠি দিয়ে তাঁর সাহায্য চেয়েছে। যদিও প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে এখনও পর্যন্ত কোনও সাড়া মেলেনি। বিনীত এবং মণিরাজ ইতিমধ্যেই সোশাল নেটওয়ার্কে তাদের বক্তব্য তুলে ধরে প্রচার শুরু করেছে। মণিরাজ বলে, “আমরা শুনেছি ৩০ বছর আগেও এলাকার মানুষ এই পরিখার জল রান্নার কাজে ব্যবহার করতেন। এর ধারে বসে মানুষ বিশ্রাম নিতেন। এখন তা আর্বজনায় ভরা।” পুরনো অবস্থায় এই পর্যটক কেন্দ্রকে ফিরিয়ে দিতে বিনীত এবং মণিরাজের এই প্রয়াস কতটা বাস্তাবায়িত হবে তা নিয়ে সংশয় রয়েছেই। তবে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের পটনা সার্কেলের প্রধান হেমসাগর এ নায়েক বলেন, “ওই
ছাত্র দু’জনের কাজের প্রশংসা করতে হয়। আমরা তাদের কথা মেনে ২০১৫-১৬ আর্থিক বর্ষে এর সংস্কারের জন্য অবশ্যই প্রয়োজনীয় অর্থের ব্যবস্থা করব।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy