Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
ছাত্র-আন্দোলনের হুমকি

অ্যাসবেস্টসের নীচে মেডিক্যাল কলেজ

ছাত্র আছে। অধ্যক্ষ আছেন। কয়েক জন শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীও রয়েছেন। কিন্তু কলেজ ক্যাম্পাসটাই নেই। যা আছে তা হল কাঠা দশেক জমির উপর অ্যাসবেস্টস ছাউনি। এটাই নাকি বেতিয়া সরকারি মেডিক্যাল কলেজ!

এই সেই বেতিয়া সরকারি মেডিক্যাল কলেজ। — নিজস্ব চিত্র

এই সেই বেতিয়া সরকারি মেডিক্যাল কলেজ। — নিজস্ব চিত্র

দিবাকর রায়
বেতিয়া শেষ আপডেট: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৩:৩৭
Share: Save:

ছাত্র আছে। অধ্যক্ষ আছেন। কয়েক জন শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীও রয়েছেন। কিন্তু কলেজ ক্যাম্পাসটাই নেই। যা আছে তা হল কাঠা দশেক জমির উপর অ্যাসবেস্টস ছাউনি। এটাই নাকি বেতিয়া সরকারি মেডিক্যাল কলেজ!

বিহারের বেতিয়া সরকারি মেডিক্যাল কলেজ তাই কার্যত খাতায়-কলমেই বেঁচে রয়েছে। পড়ুয়াদের অভিযোগ, মেডিক্যাল কলেজের কোনও পরিকাঠামোই নেই। সব জানা সত্ত্বেও মেডিক্যাল কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়া (এমসিআই) ‘অবৈধ ভাবে’ কলেজের অনুমোদন দিয়েছে বলে অভিযোগ ছাত্রদের।

কলেজ সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০৮ সালে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার রাজ্যে দু’টি নতুন সরকারি মেডিক্যাল কলেজ শুরু করার পরিকল্পনা করেন। একটি তাঁর নিজের জেলা নালান্দায়, বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ। অন্যটি পশ্চিম চম্পারণ জেলার বেতিয়ায়। মুখ্যমন্ত্রীর নিজের জেলার কলেজের কাজ ৮০ শতাংশ শেষ হয়ে গেলেও বেতিয়ায় কলেজ নির্মাণের কাজে হাতই দেওয়া হয়নি। কলেজের বৈধতা নিয়েই এ বার প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। এমসিআই থেকে শুরু করে রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরকে ছাত্ররা এ নিয়ে চিঠি লিখলেও কোনও লাভ হয়নি। কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র মুজফ্ফরপুরের বাসিন্দা রবি কুমার বলেন, ‘‘রাজ্যের মেধা তালিকায় থেকে ভাল র‌্যাঙ্ক করেই এখানে ভর্তি হয়েছিলাম। এমন অবস্থা জানলে ভর্তি হতাম না। নিজের ভবিষ্যত নিয়ে এখন সত্যিই চিন্তিত।’’ কলেজের অধ্যক্ষ বলেন, ‘‘কলেজের অবস্থা লুকিয়ে তো লাভ নেই। যা রয়েছে তা আপনাদের সামনেই রয়েছে। নতুন ক্যাম্পাস তৈরির কাজ এখনও শুরু হয়নি। কবে শুরু হবে বলতে পারব না। আমি অসহায়।’’ ২০১৩ সাল থেকে বেতিয়া মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি শুরু হয়। প্রতি বছর ১০০ জন করে ভর্তি হয়েছেন। কোনও পরিকাঠামো ছাড়াই পঠন-পাঠন শুরু হয়েছে। মাত্র ১০ কাঠা জমির উপরে অ্যাসবেস্টসের ছাদের নিচে দু’টি ঘরে পড়াশোনা থেকে প্রশাসনিক কাজ, সবই চলে। ছাত্রছাত্রীদের আবাসনের অবস্থাও তথৈবচ। পরিস্থিতি দেখে ইতিমধ্যেই ১৬ জন ছাত্র কলেজ ছেড়ে চলে গিয়েছে।

প্রশ্ন উঠেছে কোনও পরিকাঠামো না থাকা সত্ত্বেও এমসিআই অনুমোদন দিল কী ভাবে! সূত্রের খবর, জেলা সদর হাসপাতালের জমিকেই মেডিক্যাল কলেজের জমি হিসেবে দেখানো হয়েছে। কিন্তু সেই জেলা হাসপাতালের অবস্থাও সঙ্গীণ। সেখানে আইসিইউ তো দূরের কথা, অপারেশন থিয়েটার পর্যন্ত নেই।

রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য, নিজের রাজনৈতিক কর্মসূচির সবকিছুই পশ্চিম চম্পারণ থেকে শুরু করেন নীতীশ কুমার। গত লোকসভা নির্বাচনের আগে পর্যন্ত মহাত্মা গাঁধীর স্মৃতিবিজড়িত বেতিয়াকে নিজের ‘সেকেন্ড হোম’ হিসেবে পরিচয় দিতেন নীতীশ। কিন্তু লোকসভা নির্বাচনের পর থেকে কার্যত বেতিয়াকে এড়িয়ে গিয়েছেন তিনি। বিধানসভা নির্বাচনেও বেতিয়া খুব গুরুত্ব পায়নি। কোনও ভাবে বেতিয়ার উপরে তিনি ক্ষুব্ধ বলেই রাজনীতিকদের ধারণা। তবে মেডিক্যাল কলেজের ছাত্রছাত্রীদের দাবি, কলেজ ক্যাম্পাস ও পরিকাঠামোর উপরে জোর না দিলে তাঁদের আন্দোলনে নামা ছাড়া আর কোনও পথ নেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Medical college and Hospital Infrastructure
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE