নামনি ও মধ্য অসমের দরিদ্র মুসলিমরা এত দিন কাজের সন্ধানে অসমের বিভিন্ন নগর, শিল্পাঞ্চলে ঘুরতেন। নাগাল্যান্ড, অরুণাচলেও বিভিন্ন নির্মাণকাজে অসমের সংখ্যালঘু শ্রমিকেরাই ছিলেন প্রধান ভরসা। কিন্তু এক দিকে এনআরসি, অন্য দিকে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলে তাঁদের কপাল পুড়েছে। রাজ্যের ৭০টি সংগঠন নাগরিকত্ব বিলের বিরুদ্ধে যেমন জোট বেঁধেছে, তেমনই তারা অবৈধ বাংলাদেশি খুঁজে বার করতেও নিচ্ছে ‘অতিসক্রিয়’ ভূমিকা। তাই বাংলাভাষী, লুঙ্গি বা নমাজের টুপি পরা লোকজন দেখলেই বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের সদস্যরা তাঁদের আটক করে নিয়ে যাচ্ছে থানায়।
অসমে এনআরসির চূড়ান্ত খসড়া প্রকাশের পরে অরুণাচল ছাত্র সংগঠন অসম থেকে যাওয়া সংখ্যালঘুদের চিহ্নিত করে ফেরত পাঠাতে শুরু করেছিল। একই কাণ্ড শুরু হয় নাগাল্যান্ড, মণিপুরে। ফলে বিভিন্ন নির্মাণস্থল, কারখানায় কাজের সুযোগ হারাতে থাকেন দরিদ্র মুসলিমরা। এ বার অসমেও আতঙ্কে চলাফেরা করতে হচ্ছে তাঁদের।
চেহারা, ভাষা ও পোশাকের সূত্রে গত এক মাসে শতাধিক মুসলিম ব্যক্তিকে আটক করেছে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন। গোলাঘাট জেলায় কাজের সন্ধানে আসা এমন সাত জনকে বাস থেকে নামিয়ে, কান ধরে বসিয়ে রাখা হয়। তাদের পুলিশে দেয় আসু। তার আগে এজেওয়াইসিপি, চুতীয়া ছাত্র সংগঠন-সহ বিভিন্ন সংগঠন এমন ভাবেই ‘সন্দেহজনক বাংলাদেশিদের’ ধরে স্থানীয় থানায় নিয়ে আসে। তিনসুকিয়ার বড়দুমসা থেকে এমন ২৫ জন ‘সন্দেহজনক বাংলাদেশিকে’ ধরা হয়েছিল। তাই অহোম ছাত্র সংগঠনও যোরহাট থেকে ২৫ জনকে ধরে থানায় নিয়ে যায়। শিবসাগরের ইটভাটায় হানা দিয়ে লাচিত সেনা এমন ৩০ জনকে আটক করে।
পুলিশ কিন্তু কোনও ঘটনায়, কাউকেই বাংলাদেশি হিসেবে আটক করেনি। পুলিশ জানায়, সব ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে আটক করা লোকগুলি আদতে নামনি অসমের বা বিহার থেকে আসা দরিদ্র মুসলিম। অনেকের সঙ্গেই ভোটার পরিচয়পত্র বা অন্য পরিচয়পত্রের ফটোকপি থাকে। তাঁরা কাজের খোঁজে বিভিন্ন স্থানে ঘোরেন। তাই হারিয়ে যাওয়া বা ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কায় আসল প্রমাণপত্রগুলি সঙ্গে রাখেন না। পুলিশ তাদের তিন দিনের মধ্যে প্রকৃত পরিচয়পত্র দেখাতে বলে ছেড়ে দেয়। কিন্তু উজানি অসমের থানা থেকে ছাড়া পেয়ে নামনি অসমে পৌঁছে তিন দিনের মধ্যে আসল পরিচয়পত্র নিয়ে থানায় গিয়ে দেখানো খুবই সমস্যা ও খরচের ব্যাপার।
আসু, এজেওয়াইসিপি নেতাদের দাবি, অসমে থেকে অসমীয়া ভাষায় কথা বলতে না পারা ও উপযুক্ত প্রমাণপত্র সঙ্গে না রাখা ‘সন্দেহজনক বাংলাদেশি’ হওয়ার পর্যাপ্ত কারণ। রাজ্যের বর্তমান পরিস্থিতিতে এইটুকু চোখ-কান খোলা রাখতেই হচ্ছে তাঁদের।
ধুবুড়ির মানবাধিকার কর্মী মাসুদ জামানের মতে, ডি ভোটার সন্দেহে নোটিস, ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালে হাজিরা দেওয়া, উকিলের খরচ জোগাড় করা, এনআরসিতে নাম না উঠলে দৌড়োদৌড়ি, এত কিছুর পরেও ভাষা ও চেহারার তফাতের কারণে ছাত্রনেতাদের একাংশ যে ভাবে সংখ্যালঘুদের হেনস্থা করছেন, তা অবিলম্বে বন্ধ হওয়া দরকার। বন্যা-ভূমিক্ষয়ে ভিটে হারানো মানুষগুলি এমনিতেই হতদরিদ্র, প্রান্তিক। তাঁদের সঙ্গে মানবিক ব্যবহার করা উচিত। পরিচয়পত্র পরীক্ষায় নামে হেনস্থা করা, কান ধরে বসিয়ে রাখা মোটেই সভ্য ব্যবহার নয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy